পাহাড়ি লতাপাতা খেয়েই দিন পার করছেন তারা

লতাপতা সেদ্ধ করে খাচ্ছেন তুমরাও ম্রো ও তার স্বামী। ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/স্টার

'কোম্পানির আগুন আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। যে জুম বাগানের ওপর আমাদের অস্তিত্ব নির্ভরশীল ছিল, সেগুলো তারা নিমিষেই পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। গত কয়েদিন ধরে পাহাড়ি লতাপাতা খেয়েই জীবনধারণ করছি।'

অত্যন্ত বেদনাভরা কণ্ঠে এগারো দিন বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন তুমরাও ম্রো।

শুধু তুমরাও নন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দেওয়া আগুনে বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া এবং রেংয়ান ম্রো পাড়ার প্রায় ৪০টি পরিবার খাদ্য এবং খাবার পানির তীব্র সংকটে আছে বলে জানিয়েছেন পাড়াবাসীরা।

ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/স্টার

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ পাড়াবাসীর ঘরে কোনো খাবার নেই। জঙ্গলের লতাপাতা সেদ্ধ করে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

হাকমতি ত্রিপুরা নামে লাংকম ম্রো পাড়ার প্রায় ৫৫ বছরের এক বৃদ্ধা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘরে চাল নেই। জঙ্গলের লতাপাতা খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি। জানি না কয়দিন এভাবে চলতে পারব।'

ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/স্টার

'২০১৯ সালে জুমের জায়গা দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে রাবার কোম্পানির লোকেরা আমিসহ আমাদের পাড়ার ৬ জনের বিরুদ্ধে মামালা করে', বলছিলেন লাংকম ম্রো পাড়ার কারবারি লাংকম ম্রো।

তিনি বলেন, 'কোম্পানির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ২০১৯ সালে পাড়া ছেড়ে দুটি পরিবার অন্যত্র চলে যায়।'

ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/স্টার

'আগুনে আমাদের পাড়ার পানির ঝিরিটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ঝিরির পানি আমরা খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করতাম। ঝিরিটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাড়াবাসীরা মারাত্মক খাবার পানির সংকটে আছেন', বলেন ইনচং ম্রো নামে পাড়ার একজন।

৮০ বছরের বৃদ্ধ জ্যোতিচন্দ্র ত্রিপুরা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ২৬ এপ্রিল আমাদের জুমের জায়গা দখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানির লোকেরা আগুন দিয়ে প্রায় একশ একরের মতো বিভিন্ন ফলজ বাগান পুড়িয়ে দিলেও এখনও পর্যন্ত কেউ আমাদের সাহায্য করেনি।'

ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/স্টার

'আমাদের ঘরে খাবার নেই। আমরা খুব মানবেতর জীবনযাপন করছি। এখনও পর্যন্ত কেউ আমাদের একটু সহযোগিতা করতে আসলো না। সরকার কি আমাদের আর্তনাদের কথা শুনতে পায় না', বলেন পাড়াবাসী রিংরং ম্রো।

আরেক পাড়াবাসী মেনরাও ম্রো বলেন, 'আগুনে আমার টং ঘরসহ পাড়াবাসীর ৪টি জুমের টং ঘর পুড়ে গেছে।'

'আগুন এখানকার প্রাকৃতিক বন এবং জীববৈচিত্র মারাত্মকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Trump says US forces bombed Iran nuclear sites; says 'Fordow is gone'

Trump ended his posting saying, "Now is the time for peace."

14m ago