ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন বালিয়াটি প্রাসাদ

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় বালিয়াটি প্রাসাদের সামনের অংশ। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/ স্টার

এবারের ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন ঊনিশ শতকের অপূর্ব নিদর্শন-মানিকগঞ্জের বালিয়াটি প্রাসাদ। রাজধানীর কাছাকাছি যে কয়টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে, তাদের মধ্যে এটি অন্যতম। বাংলাদেশে খ্রিস্টীয় উনিশ শতকের একটি অপূর্ব নিদর্শন এটি। স্থানীয়দের কাছে যা বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নামেও পরিচিত।

বালিয়াটি গ্রামের জমিদার গোবিন্দ রাম সাহা ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন আঠার শতকের মাঝামাঝি সময়ের একজন বড় মাপের লবণ ব্যবসায়ী। দধী রাম, পন্ডিত রাম, আনন্দ রাম এবং গোলাপ রাম-এই চার ছেলেকে রেখে তিনি প্রয়াত হন। সম্ভবত তাদের দ্বারাই পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে এই বালিয়াটি প্রাসাদটি নির্মিত হয়।

বালিয়াটি প্রাসাদের সামনের অংশ। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/ স্টার

৫ দশমিক ৮৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই প্রাসাদের অভ্যন্তরে রয়েছে দুই শতাধিক কক্ষবিশিষ্ট সাতটি ভবন। সামনের চারটি ভবন ব্যবহৃত হতো ব্যবসায়িক কাজে। প্রাসাদের পেছনেই রয়েছে অন্দরমহল, যেখানে বসবাস করতেন জমিদার পরিবারের সদস্যরা। অন্দরমহলের পেছনে রয়েছে ছয় ঘাটলার পুকুর। অন্দরমহলের ভেতরে-বাইরে ছোট-বড় মিলিয়ে নয়টি কূপ। সুপেয় পানির জন্য এসব কূপ ব্যবহার করতেন তারা।

পুরো প্রাসাদটির চারদিকে রয়েছে সুউচ্চ সীমানা প্রাচীর। বাড়ির সামনে, দক্ষিণ দিকের প্রাচীরে রয়েছে পাশাপাশি একই ধরনের তিনটি তোড়ণ। প্রতিটির উপর রয়েছে একটি করে সিংহ। তোরণ পার হয়ে ভেতরে  ঢুকতেই  চোখে পড়বে কারুকার্যময় চারটি প্রাসাদ।  

বালিয়াটি প্রাসাদের কারুকাজ। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/ স্টার

বালিয়াটি প্রাসাদটি বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরর আওতায় ১৯৬৮ সালের এন্টিকুইটি অ্যাক্টের ১৪ নং ধারা (১৯৭৬ সালে সংশোধিত) এর আওতায় সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত হচ্ছে। পশ্চিম দিক থেকে দ্বিতীয় স্থাপনাটির দ্বিতলার একটি অংশ ব্যবহৃত হচ্ছে জাদুঘর হিসেবে। এই জাদুঘরের নিচতলায় রয়েছে ১৫টি লোহার সিন্দুক। এসব সিন্দুক মূল্যবান দ্রব্য রাখার কাজে ব্যবহার করতেন জমিদারেরা।

কাঠের সিঁড়ি বেয়ে জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় উঠলেই কারুকার্যমণ্ডিত রংমহল। বিশাল হলরুমসহ ওই রংমহলের সঙ্গে রয়েছে আরও পাঁচটি কক্ষ। রংমহল এবং ওই সব কক্ষে শোভা পাচ্ছে জমিদারদের ব্যবহৃত গ্রামোফোন বাক্স, ক্যাশ বাক্স, নামফলক, হারিকেন, হ্যাজাক বাতি, বদনা, ঝুলন্ত প্রদীপ, পূজার আসন, কাচের চিমনি, পাথরের ছাইদানি, দেয়াল আয়না, কাঠের সিন্দুক, শ্বেতপাথরের গাভি ও টেবিল, ঝাড়বাতি, শিবলিঙ্গ, কাঠের আলমারি, ফুলদানি, চেয়ার, আলনা, রাইফেল স্ট্যান্ড, কাঠের পাদস্তম্ভ ও পালঙ্কসহ সংগৃহীত বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন।

মানিকগঞ্জ জেলার সদর থেকে ২১ কিলোমিটার উত্তরে-পূর্বে এবং ঢাকার গাবতলী থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই প্রাসাদটির বাইরে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা ও বসার  জায়গা আছে। আছে নিরাপত্তাপ্রহরী। হাতের কাছেই মিলবে চা, কফি, আইসক্রিম, মিষ্টি।

রাজধানী থেকে জমিদারবাড়ি পৌঁছাতে ঘণ্টা দুয়েক লাগে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের কালামপুর থেকে ডানে ঢুকে সোজা গেলে সাটুরিয়া উপজেলা সদর। উপজেলা পরিষদের পাশেই বালিয়াটি প্রাসাদ।

বালিয়াটি প্রাসাদের পেছনের দিকের ইট-কাঠের নির্মিত ঘর। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/ স্টার

প্রাসাদটির সাইট পরিচারক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, রোববার পূর্ণ দিবস এবং সোমবার অর্ধদিবস বাদে সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে প্রাসাদটি। প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা, ৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য ৫ টাকা, দেশের বাইরে সার্কভূক্ত দেশের নাগরিকের জন্য ১০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা নির্ধারিত।

Comments

The Daily Star  | English

$14b lost to capital flight a year during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

11h ago