শ্রমিকের তারুণ্যের বিনিময় পোশাক-খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

মে দিবস যখন ১৩৬ বছরে পা রাখছে তার কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছে। এই সময়কালে বাংলাদেশের পোশাক খাতের সাফল্যের কথা অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বার বার সামনে এসেছে। বিশ্ব বাজারে পোশাক কেনার গতি করোনাকালে কিছুটা স্থবির হলেও পরবর্তীতে এর ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি নতুন নতুন বাজার তৈরি হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের ঘুরে দাঁড়ানো এবং রপ্তানি আয়ের উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধির খবর প্রায়ই ফলাও করে ছাপা হচ্ছে পত্রিকায়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যর ওপর ভর করেই রচিত হচ্ছে এসব সাফল্য গাঁথা।
ইলাস্ট্রেশন: আনোয়ার সোহেল

মে দিবস যখন ১৩৬ বছরে পা রাখছে তার কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছে। এই সময়কালে বাংলাদেশের পোশাক খাতের সাফল্যের কথা অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বার বার সামনে এসেছে। বিশ্ব বাজারে পোশাক কেনার গতি করোনাকালে কিছুটা স্থবির হলেও পরবর্তীতে এর ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি নতুন নতুন বাজার তৈরি হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের ঘুরে দাঁড়ানো এবং রপ্তানি আয়ের উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধির খবর প্রায়ই ফলাও করে ছাপা হচ্ছে পত্রিকায়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যর ওপর ভর করেই রচিত হচ্ছে এসব সাফল্য গাঁথা।

ইপিবি'র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম ৬ মাসে (জুলাই -ডিসেম্বরে) সারাবিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারের। যা আগের বছরের চেয়ে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ডলারের কাছাকাছি। সে অনুযায়ী রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে শতকরা ২৮ শতাংশ। সন্দেহ নেই, পোশাক খাতের বিকাশ শ্রমিকসহ দেশবাসী সবারই কাম্য। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৪০ লাখ শ্রমিকের রুটি-রুজির প্রশ্ন। একইসঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশীয় উদ্যোক্তা ও শিল্পখাতের বিকাশ প্রসঙ্গ। কিন্তু এর প্রভাব দেশের নারী-পুরুষ পোশাক শ্রমিক বন্ধুদের জীবনে কতটা পৌঁছেছে তা নিয়ে উল্লেখযোগ্য আলাপ নেই। তাই শ্রমিক আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে মে দিবসের প্রাক্কালে এই 'সাফল্যকে' শ্রমিকের জীবন ও সংগ্রামের দিক থেকে বোঝাপড়া জরুরি মনে করি।

সাম্প্রতিক পোশাক খাতের রপ্তানি আয় বৃদ্ধিকে কেউ বলছেন বাণিজ্যে চমক, কেউ বা বলছেন রপ্তানিতে এক বিরাট বিস্ময় বা উল্লম্ফন কিংবা এ খাতে বইছে সুবাতাস- এভাবেই এ খাতের 'সুদিন' নিয়ে উচ্ছ্বসিতভাবে সন্তুষ্টি ও প্রশংসা করছে সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, বিজিএমইএ'র নেতৃত্ব থেকে শুরু করে পত্রিকার প্রতিবেদকরা। ১৯৭১ সালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সি জনসন এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে 'তলাবিহীন ঝুড়ি' বলে বলে অভিহিত করেছিলেন। আর বর্তমানে বিজিএমইএ'র সভাপতি ফারুক হাসান রপ্তানির বৃদ্ধির এই বিশেষ সময়কে চিহ্নিত করছেন 'বিস্ময় ভরা ঝুড়ি' বলে। প্রশ্ন আসে মনে, এই 'বিস্ময়ের ঝুড়ি' কার জন্য মালিক-সরকার-বায়ার না শ্রমিকের?

স্বাধীনতার ৫০ বছর নিয়ে ফারুক হাসান এক লেখায় উল্লেখ করেন, 'পোশাক কারখানাগুলো এখন শুধু নিরাপদই নয়, বরং পরিণত হয়েছে আরও আধুনিক, গতিশীল, শক্তি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব'। দুর্ভাগ্যজনক হলো, এতো এতো সাফল্য গাঁথায় এই খাতের প্রাণ তরুণ শ্রমিকদের ঠাঁই পেতে দেখি না। তারা সেই সস্তা ৮ হাজার টাকার মজুর হয়েই আগের মতো দুর্বিষহ জীবন চালাচ্ছেন। সেখানে মানের বা মজুরির কোনো বৃদ্ধি হয়নি। হাতে গোণা দু-একজন অর্থনীতিবিদ ছাড়া সমাজের মূল ধারার অর্থনীতিবিদ বা বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে বরাবরের মতো নীরব। যে শ্রমিকের শ্রমে ঘামে অর্থনীতির মেরুদণ্ড বিকশিত হচ্ছে, সেই শ্রমিকের বর্তমান বাজারে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়াভাবে বেড়ে চলেছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপের প্রচলিত চেনা বাজারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৬ শতাংশ, ইউরোপ ও কানাডার বাজারে ২৬ শতাংশ রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ইউরোপের বাজারে। বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার কারণে ক্রয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজারও সম্প্রসারণ হয়েছে। বাজার অন্য জায়গা থেকে সরেও এসেছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে চীনসহ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার ও ইথিওপিয়ার ক্রয়াদেশ এখন বাংলাদেশে আসছে। চীনের অর্ডার স্থানান্তর হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রাজনৈতিকভাবে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে আমেরিকা। চীন-আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই গতি থাকবে বলে মালিকরা মনে করেন। ততদিনে নিজেদের সক্ষমতা ও দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পাবে তাদের। এ ছাড়া, চেনা বাজারের সীমানা বিস্তৃত হয়েছে চিলি, চীন, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়ার বাজার পর্যন্ত। এই অপ্রচলিত বা নতুন অচেনা বাজারে প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি বেড়েছে গাণিতিক হারে, যা প্রায় ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। সার্বিকভাবে এই অবস্থা অব্যাহত রাখার বিষয়ে মালিক এবং সরকার উভয় পক্ষ আশাবাদী। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির মতে, 'চলতি বছর এই খাত ৫২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করবে। যা হবে ৫০ বছরের বড় অর্জন।'

এই রমরমা সময়ে যখনই শ্রমিক সংগঠনগুলো মজুরি বাড়িয়ে ২০ হাজার করার দাবি করছে, তখনই মালিকরা নাখোশ। তারা যুক্তি দেখাতে চাইছেন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে তাদের আয় বৃদ্ধি তেমনটা হচ্ছে না। এমনি নানা যুক্তি তাদের ভাণ্ডারে সবসময়ই থাকে।

সবার স্মরণে আছে, করোনাকালে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক কাজ হারিয়েছিলেন। বন্ধ হয়েছিল বহু কারখানা। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস, লে-অফ, ছাঁটাই, বেতন না পাওয়া ছিল সেই সময়ের বৈশিষ্ট্য। ওই সময় বাতিল হয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার। পরিস্থিতি কিছুটা সামলে উঠলে বড় অংশের অর্ডার ফেরতও আসে। কাজ হারা শ্রমিকরাও অনেকে ফেরত পান কাজ। কিন্তু নতুন কাজে তাদের আয় কমে। কারণ নতুন কাজে নতুন শ্রমিক হিসেবে তাদের নিয়োগ হয়। এই সময় শ্রমিকদের একটা অংশকে গ্রামেও ফেরত যেতে দেখা যায়। করোনার সময় যখন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা স্ববেতন ছুটিতে ছিলেন, তখন শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে 'অর্থনীতির চাকাকে' সচল রেখেছেন। সামাজিক নিরাপত্তা স্লোগান তখন তাদের জন্য ছিল বিলাসিতা মাত্র।

পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতি সামলে রপ্তানিতে জোয়ার আসলেও শ্রমিকরা রেহাই পাননি। প্রোডাকশন টার্গেটের চাপের সঙ্গে সঙ্গে কারখানাগুলোতে কর্মঘণ্টাও বেড়েছে। শ্রম আইনের একটি সংশোধনীতে ওভারটাইম ২ ঘণ্টার স্থলে ৪ ঘণ্টা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১৩৬ বছর আগে ৮ ঘণ্টার শ্রম এবং ওভারটাইমের পাওনার দাবিতে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকদের লড়াইয়ে সারাবিশ্বের শ্রম ৮ ঘণ্টার আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে। যদিও বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা এখনো বাধ্য হন নিজের জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করতে। কাজের চাপে শ্রমিকরা প্রায়ই নানা অসুস্থতায় ভোগেন। কিন্তু কাজ হারানোর ভয়ে সব নীরবে সহ্য করছেন। এইভাবে মুনাফার সুফল গুনছে মালিক আর তার ঘানি টানছে শ্রমিক।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রপ্তানি আয় ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেতে দেখছি। তেমনি গত ৬ মাসে খাদ্যপণ্য মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ বেশি। চাল-ডাল-ডিম-চিনি-তেল, শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তার সঙ্গে সামাল দেওয়া শ্রমিকদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে পরিবহন খরচ, এলপিজি গ্যাসের দাম এবং পাঁয়তারা চলছে গ্যাস ও পানির দাম বাড়ানোর। ফলে শ্রমজীবীদের বাসা ভাড়া, পরিবহন বাড়া, সন্তানদের শিক্ষা, চিকিৎসা সব ব্যয়ই বেড়েছে। তাদের জীবন ও মজুরির এই দুরবস্থায়ই বলে দেয় তারা বাঁচার মতো মজুরির অভাবে রুগ্ন জীবনযাপন করছেন।

প্রশ্ন আসতে পারে কারখানাগুলোও কি শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ? রানা প্লাজা ধসের ৯ বছর পর দৈনিক সমকালে প্রকাশিত হয় 'বাংলাদেশের পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে' নামে আবু হেনা মুহিবের একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি শুরু হয় 'তৈরি পোশাক বাণিজ্যে এখন রমরমা অবস্থা' এই বাক্যে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, 'প্রায় প্রতি মাস ভাঙছে আগের মাসের রপ্তানি আয়ের রেকর্ড'। বিজিএমইএ'র প্রতিনিধিরাও দাবি করেন, এই খাতে আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে। আমরাও দেখেছি রানা প্লাজার পর কারখানার অবকাঠামোগত দিকে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান নামে দেশীয় কমিটির কাজের খবর তেমন না পাওয়া না গেলেও দেখা গেছে অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স ভবন নিরাপত্তায় নানা কাজ করেছে।

রানা প্লাজায় ১ হাজার ১৭৫ শ্রমিকের প্রাণহানির পর প্রতি বছরই মালিকরা কারখানার পরিবেশ উন্নত এবং এই খাতে হারানো ভাবমূর্তি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও প্রশ্ন জাগে, ক্ষতিপূরণ আইনে যথাযথ পরিবর্তন না ঘটিয়ে, দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না করে, কেবল ভবনের উন্নয়ন দিয়ে এই খাতের উন্নয়ন ঘটবে? শ্রমিকের নিরাপত্তা কি কেবল ইট-পাথরে গড়া বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত? নাকি তার জীবনমান, মজুরি বৃদ্ধি ও সংগঠিত হওয়ার অধিকারের সঙ্গেও জড়িত?

প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক বর্তমানে পোশাক খাতে নিয়োজিত আছেন। পরোক্ষভাবে যুক্ত আরও ১০ লাখ। এদের পরিবারের সংখ্যা ধরলে মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই এখানে যুক্ত। বিরাট নতুন শ্রমশক্তি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন নারীরা। কিন্তু একটা সময় এই খাতে ৮০ ভাগই নারী থাকলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা কমছে। ম্যাপড ইন বাংলাদেশের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে নারীদের সংখ্যা শতকরা ৫৮ শতাংশ। সকলেরই জানা, কারখানায় ১২-১৪ ঘণ্টা কাজের পর কাজ, নারী শ্রমিকরা ঘর গৃহস্থালি ও শিশু লালন-পালনের সব কাজ করে বিশ্রামেরও সময় পান না। কারখানায় পর্যাপ্ত ডে কেয়ার, ব্রেস্ট ফিড কর্নার, দুপুরে খাবার ব্যবস্থা না থাকা, গালাগালি থেকে শুরু করে নানা রকম যৌন হয়রানি ইত্যাদিতে নারী শ্রমিকরা একটা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে থাকেন। ফলে কর্মদক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ পান না। এ কারণে নারী শ্রমিকদের অপারেটর হিসেবে যতটা দেখা যায়, অন্যান্য সিনিয়র পদে তেমন দেখা যায় না। এভাবেই নতুন মেশিন আর ঘর-বাহির সব সামলে চতুর্থ বিপ্লব এবং  অটোমেশনের যুগে পিছিয়ে পড়ছেন নারীরা।

বিজিএমইএ'র সভাপতি ফারুক হাসান স্বাধীনতার ৫০ বছরের ওই লেখায় বলেন, '...পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের আয়ের ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বাড়িয়ে পোশাক খাত বিপ্লব নিয়ে এসেছে। ...এই কাজ নারীকে অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বাধীনতার অপার স্বাদ উপভোগের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে অনুঘটক হিসেবে'। প্রশ্ন হলো- তাই যদি হবে তাহলে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে কেন? কেন নারীরা অটোমেশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে এগুতে পারছে না? যে শ্রমিকের নিজের মজুরি কিংবা জীবনের ওপর ন্যুনতম নিয়ন্ত্রণ নেই, যার স্বপ্ন দেখার বাস্তবতা নেই, পকেটে পয়সা নেই, পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা, নিজের সন্তানকে ভালো পড়ানোর, বিনোদন দেওয়ার, প্রতিবাদ করার কিংবা যার সুযোগ নেই নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার- সে কি স্বাধীন?

যে সময় আমরা মে দিবস উদযাপন করছি, সেসময় পোশাক খাত ম্যানুয়াল মেশিন থেকে অটোমেশনের যুগে পা রেখেছে। এখানে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছেন পোশাক খাতে উদ্যোক্তাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম। যার মধ্যে আছেন উদ্যোক্তা বা মালিকদের উচ্চ শিক্ষিত বিদেশ ফেরত সন্তানদের একাংশও। যাদের বয়স অনেকেরই ৪৫ বছরের নিচে। নিজেদের বন্ধন মজবুত করতে তরুণ মালিক শ্রেণী করেছে 'বায়লা' নামে নতুন সংগঠন।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় প্রজন্মের শ্রমিকদের অনেকেরই বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এরা অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং পুষ্টিহীনতায় তাদের তারুণ্য হারিয়েছেন। নানা রোগ-শোক বাসা বেঁধেছে তাদের শরীরে। খুব বেশিদিন আর তাদের কাজ করার সুযোগ নেই এই খাতে। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় তারা কারখানা আর মেশিনের সঙ্গে অক্লান্ত শ্রমে নিঃশেষ করেছেন। তাদের জীর্ণ-ক্লান্ত-অপুষ্টিজনিত একেকটা চেহারাই তাদের দুরবস্থার সাক্ষী।

এই সময়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের মালিকরা যেমন নিজেদের সংগঠিত রাখার জন্য নানা কৌশলে এগুচ্ছেন, একইভাবে পোশাক খাতের শ্রমিকদের ঘুরে দাঁড়াতে, নিজেদের জীবনমান বদলাতে মজবুত বন্ধন ও আন্দোলন ছাড়া পথ নেই। তাই মজুরি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও সংগঠন করার অধিকারের জন্য সব শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনকে শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। দেশের গণতন্ত্রহীনতা ও ভয়ের রাজনৈতিক পরিবেশকে প্রশ্ন করতে হবে।

পোশাক খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা কেবল মালিক-সরকার বা বায়ারের নয়, শ্রমিকদের জন্যও হতে হবে। তাহলে শ্রমিকও বাঁচবে শিল্পও বাঁচবে।

তাসলিমা আখতার: সভাপ্রধান, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি ও আলোকচিত্রী

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Cyclone Dana lashes Odisha coasts

The landfall process will last for nearly five hours till Friday morning

1h ago