৭৫ হাজার গাছ কেটে বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা
বনবিভাগের অনুমতি ছাড়া অন্তত ৭৫ হাজার গাছ কেটে চট্টগ্রামের দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা তৈরি করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।
রাস্তা তৈরি না করার জন্য একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও সওজ তা মানছে না বলে জানিয়েছে বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
পাশাপাশি গত বছরের ২৬ এপ্রিল সড়কটি নির্মাণের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দিয়েছেন চন্দনাইশের সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। সংসদ সদস্যের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানিয়েছে সওজ।
১১ হাজার ৬৫৪ একরের অভয়ারণ্যটিতে ৬০৮ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ৫০০ প্রজাতির বেশি প্রাণী রয়েছে বলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ গবেষণায় জানা গেছে। ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল সরকার এই এলাকাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বনের ভেতর রাস্তা তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকরা। কেউ রাস্তায় ইট বিছিয়ে দিচ্ছেন এবং কেউ পাশে ড্রেন তৈরি করছেন।
এক শ্রমিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমরা দিনে এক হাজার ইট বিছাই। ইতোমধ্যে ১০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়ে গেছে।
নির্মাণাধীন সড়কটি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার খানহাট এলাকাকে বান্দরবান সদরের সঙ্গে যুক্ত করবে।
সওজের চন্দনাইশের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেছেন, ধোপাছড়ি ইউনিয়নের অন্তত ৬ হাজার বাসিন্দা রয়েছে। তাদের জন্য মূলত রাস্তাটি তৈরি করা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইতোমধ্যে একটি পরিপত্র জারি করেছে, সমস্ত সরকারি সংস্থাকে বনের মাধ্যমে কোনো নির্মাণ কাজ শুরু করার আগে বন বিভাগের ছাড়পত্র নিতে বলা হয়েছে পরিপত্রে।
বনবিভাগের ধোপাছড়ির বিট কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, সড়কটি তৈরির জন্য অন্তত ১০টি পাহাড় কেটে ফেলেছে সওজ। পাশাপাশি সুফল প্রকল্পের আওতায় বনায়নকৃত ৩০ হেক্টর বনের ছোট-বড় অন্তত ৭৫ হাজার গাছ ধ্বংস করে ফেলেছে তারা।
চট্টগ্রাম-দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) শফিকুল ইসলাম বলেন, সওজ আমাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়ে বনের ভেতর সড়ক তৈরি করছে। আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি।
সওজের প্রকৌশলী সুমন সিংহ স্বীকার করেছেন যে, প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়নি।
'আমরা বনবিভাগের কাছে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু বিভাগ অনুমতি দেয়নি,' তিনি যোগ করেন।
এদিকে বনের চেয়ে মানুষের জীবন বড় বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'বর্ষাকালে এলাকার মানুষ কাঁচা রাস্তায় চলাচল করতে পারে না। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে রাস্তা তৈরির জন্য আবেদন করেছি।'
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, সড়কটি নির্মিত হলে অভয়ারণ্যটি ভাগ হয়ে যাবে। তখন বনখেকো ও বন্যপ্রাণী শিকারীরা সহজেই তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে।
Comments