প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে: নোয়াব

প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রচলিত বিচারব্যবস্থা, শিল্প আইন ও বাংলাদেশ শ্রম আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে দৈনিক সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।

সংগঠনটি বলেছে, এই আইন পাস হলে স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্তসহ সংবাদপত্রের বিকাশ সংকুচিত হবে।

আজ রোববার নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ ও সহসভাপতি এ এস এম শহীদুল্লাহ খানের সই করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবাদকর্মীদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষেত্রে একধরনের চাপ তৈরি করেছে। এর ওপর প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন পাস হলে শিল্প হিসেবে সংবাদপত্র আরও বেশি রুগ্‌ণ হবে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য তা হবে মর্যাদাহানিকর।

গত ২৮ মার্চ জাতীয় সংসদে 'গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন, ২০২২' উত্থাপন করা হয়। বিলটি ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

'গণমাধ্যমকর্মী আইন' নামে নতুন কোনো আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই উল্লেখ করে নোয়াব বলছে, প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনে দেনা-পাওনা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এক বা একাধিক বিভাগীয় এলাকার জন্য গণমাধ্যম আদালত স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। এই আদালতে একজন চেয়ারম্যান এবং দুজন সদস্য থাকবেন। কর্মরত জেলা জজদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান হবেন। দুই সদস্যের একজন হবেন গণমাধ্যমের মালিক ও আরেকজন গণমাধ্যমকর্মী। উল্লেখ্য, সংবাদকর্মীদের দেনা-পাওনা এবং যেকোনো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শ্রম আদালত রয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির মাধ্যমে গঠিত বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল বাংলাদেশের সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ ও বাক্স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কাজ করে আসছে। একই সঙ্গে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মান বজায় রাখা ও সংশোধন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও সুরক্ষার উদ্দেশ্যেই সংস্থাটি কাজ করে থাকে। কাজেই প্রচলিত শিল্প আইন, বাংলাদেশ শ্রম আইন, প্রেস কাউন্সিল এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মাধ্যমেই সংবাদপত্রের সব কার্যক্রম তদারকি করা সম্ভব।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের সংবাদপত্রশিল্পের বিকাশে নোয়াব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। নোয়াবের ধারাবাহিক দাবির কারণে সরকার ২০১৪ সালে সংবাদপত্রকে 'শিল্প' হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু শিল্প-সম্পর্কিত প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা সংবাদপত্র পাচ্ছে না।

কোভিডের অভিঘাতের কারণে সংবাদপত্রশিল্প আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কোভিডকালে লকডাউনের সময় সরকারের কাছে বারবার আরজি জানালেও অন্যান্য খাতের মতো সংবাদপত্রশিল্প কোনো সহায়তা পায়নি। ২০২০ সালে নিউজপ্রিন্টের আমদানি মূল্য প্রতি টন ৫০০ মার্কিন ডলারের আশপাশে থাকলেও এখন তা ১ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে ডিজিটাল বাস্তবতা ছাপা সংবাদপত্রকে পাঠক প্রাপ্তি ও ব্যবসায়িক দিক থেকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। সংবাদপত্রের এই সংকটকালের মধ্যেই গণমাধ্যমকর্মী আইন সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত আইনটির ৫৪টি ধারার মধ্যে ৩৭টি ধারাই সাংবাদিকবান্ধব নয় বলে সম্পাদক পরিষদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা মতামত ব্যক্ত করেছেন।

নোয়াবের বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমাদের জাতীয় ইতিহাস আর ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সংবাদপত্র আর সাংবাদিকতা যে আজকের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে, তা হয়তো আগে থেকে কেউ ভাবতে পারেনি। অথচ পঞ্চাশ থেকে সত্তরের দশকের স্বাধিকার আর স্বাধীনতাসংগ্রামের পূর্বাপর অবিস্মরণীয় ভূমিকা রয়েছে আমাদের সংবাদপত্রের।

নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এমনিতেই সাংবাদিকতা পেশা অন্য আর দশটি পেশার চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবাদকর্মীদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষেত্রে একধরনের চাপ তৈরি করেছে। এর ওপর প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন পাস হলে শিল্প হিসেবে সংবাদপত্র আরও বেশি রুগ্‌ণ হবে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য তা হবে মর্যাদাহানিকর।'

Comments

The Daily Star  | English
Binimoy platform suspended by Bangladesh Bank

BB suspends Binimoy over irregularities

During the previous AL govt, it was developed by the IDEA under the ICT Division at a cost of Tk 65 crore.

10h ago