রানা প্লাজা হত্যা মামলা: ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১ জন

৯ বছর আগে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় করা হত্যা মামলার ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র একজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিচারের এই দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ভয়ংকর সেই ঘটনায় যারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তারাসহ যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্বজনেরা।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই মামলার কয়েকজন আসামি অভিযোগপত্রের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করায় সাক্ষ্য রেকর্ড করা যায়নি।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে নিহতের ঘটনায় ২০১৬ সালে ঢাকার একটি আদালত ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।

সাক্ষীদের মধ্যে কেবল মামলার বাদী ওয়ালি আশরাফ খান সাক্ষ্য দিয়েছেন। চলতি বছরের ১৬ মার্চ এটি রেকর্ড করা হয়।

আগামী ২৯ মে আরও তিন সাক্ষীকে জবানবন্দির জন্য আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।

বিচার প্রক্রিয়ার এই ধীর গতিতে বিচারপ্রার্থীরা তাদের জীবদ্দশায় ন্যায়বিচার পাবেন কী না তা নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন।

ভবন ধসে প্রাণে বাঁচলেও পঙ্গু হয়ে যাওয়া নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, 'আমরা বিচার চাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচারের জন্য যা যা করা লাগে কর্তৃপক্ষের তা করা উচিত।'

বেঁচে যাওয়া আরেক শ্রমিক মাহমুদুল হাসান হৃদয় বলেন, '৯ বছর হয়ে গেল আমরা বিচার পেলাম না, এতো মানুষ মরে গেল তাও বিচার হলো না। আমরা তীব্র হতাশার মধ্যে আছি।'

২০১৩ সালের এই দিনে সাভারে রানা প্লাজা ধসে কমপক্ষে ১১৩৬ জন মানুষ মারা যায়, যাদের বেশিরভাগই পোশাক শ্রমিক। আহত হয় আড়াই হাজারের বেশি। শিল্প ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক এই ট্র্যাজেডির ঘটনায় বাংলাদেশে শ্রম নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

এ ঘটনার একদিন পর সাভার থানার উপ-পরিদর্শক ওয়ালী আশরাফ খান সাভারের সাবেক যুবলীগ নেতা ও রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

২০১৫ সালের ২৪ মে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর সোহেল রানা, তার বাবা-মা আব্দুল খালেক ও মর্জিনাসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় চার্জশিট দেন।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ৪১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।

৪১ আসামির মধ্যে এখন শুধু সোহেল রানা কারাগারে আছেন, ৩০ জন জামিনে আছেন এবং ৭ জন পলাতক। অভিযুক্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৩ জন।

আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, 'চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর মধ্যে এটি একটি, কিন্তু এর অগ্রগতি সামান্য। জনস্বার্থে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা উচিত।'

পাবলিক প্রসিকিউটর (ইনচার্জ) বিমল সমাদ্দার বলেন, কিছু আসামি অভিযোগ গঠনের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করায় বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

তিনি বলেন, 'এতে করে দীর্ঘদিন সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি,'

তিনি বলেন, হাইকোর্ট স্থগিতাদেশের আদেশ প্রত্যাহার করার পরে আদালত একজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।

২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট দুর্নীতি মামলায় সোহেল রানাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন

বিল্ডিং কোড লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা অন্য একটি মামলার বিচার কার্যক্রম এখন হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে স্থগিত আছে।

ধসের দিন রানা প্লাজা নির্মাণে বিল্ডিং কোড লঙ্ঘনের অভিযোগে রাজধানী উন্নায়ান কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এই মামলাটি করেছিল।

২০১৫ সালের ২৪ মে এ মামলায় সোহেল রানাসহ আরও ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় এবং ২০১৬ সালের ১৪ জুন আদালত অভিযোগ গ্রহণ করে।

কিন্তু বিচার কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের বক্তব্য রেকর্ড করা শুরু করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল।

[প্রতিবেদন তৈরিতে আমাদের সাভার সংবাদদাতা অবদান রেখেছেন]

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

2h ago