২ দিনের সফরে ভারতে বরিস জনসন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা

আজ বৃহস্পতিবার ২ দিনের সফরে ভারতে পৌঁছেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: এএফপি

আজ বৃহস্পতিবার ২ দিনের সফরে ভারতে পৌঁছেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এদিন সকালে গুজরাটের আহমেদাবাদে অবতরণ করেন তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, আগামীকাল শুক্রবার দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বরিস জনসন। তাদের আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুসারে, এই সফরে বরিস জনসন ২ দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষরের বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ জন্য আরও বেশি সংখ্যক ভারতীয়কে যুক্তরাজ্যের ভিসা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এ এছাড়া এই চুক্তি সাক্ষর হলে ২ দেশের মধ্যকার বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড বেড়ে যেতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ভারতে আসার পথে উড়োজাহাজে বরিস জনসন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি সবসময়ই প্রতিভাবান ব্যক্তিদের আমাদের দেশের আসার পক্ষে। আমাদের অর্থনীতিতে হাজারো (দক্ষ) মানুষের অভাব রয়েছে এবং এক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনে প্রগতিশীল মনোভাব বজায় রাখতে হবে।'

আজ বরিস জনসন আহমেদাবাদের একটি আশ্রম পরিদর্শন করবেন। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী গৌতম আদানির সঙ্গেও দেখা করার সম্ভাবনা আছে তার। আজকের সফরসূচি অনুসারে, এরপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ভাদোদরায় উড়ে যাবেন জেসিবির একটি প্ল্যান্ট পরিদর্শনের জন্য। সেখান থেকে 'গিফট সিটি' নামে পরিচিত গান্ধীনগরের গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স টেক-সিটিতে যাবেন তিনি। এরপর সন্ধ্যায় দিল্লি রওনা হবেন।

এর আগে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, জাতিসংঘে ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়া ও রাশিয়া থেকে তেলের আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে ভারতকে 'উপদেশ' দেওয়ার কোনো ইচ্ছে তাদের নেই। তবে যুক্তরাজ্য ভারতকে মস্কোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে উদ্বুদ্ধ করছে।

বরিস জনসনের সফরের মধ্য দিয়ে ২ দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি একইসঙ্গে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াবে ও ২ দেশের মধ্যকার প্রতিরক্ষা বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করবে। তাই ২ প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার একটি বড় অংশজুড়ে থাকবে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি।

ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই গত মাসে ভারত সফরের সময় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব লিজ ট্রাসের করা মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে জানায়, বরিস জনসনও একই ধারা অনুসরণ করবেন এবং ভারতকে এ বিষয়ে কোনো উপদেশ দেবেন না। তিনি যুক্তরাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করবেন এবং ভারতের যুক্তিগুলো শুনবেন।

২ দেশই চাচ্ছে এ বছরের শেষ নাগাদ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সব আলোচনা শেষ করতে। আপেল, চিকিৎসা সরঞ্জাম, চিংড়ি ও আইনি সেবার বাজারে প্রবেশাধিকারের বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি প্রায় শেষের পথে। ফলে এই বৈঠকে আলোচনার পরবর্তী পর্যায় শুরু হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে।

কমপক্ষে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে ২ দেশ। এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ভারতের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্কের ওপর বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করতে চায়।

গত বছরের মে মাসে মোদি ও বরিসের মাঝে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সম্মেলনে ভারত ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ককে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কৌশলগত অংশিদারীত্বের মর্যাদা দেওয়া হয়।

ওই সম্মেলনে ২ পক্ষ বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে মূল বিষয় ধরে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ২ দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ১০ বছরের একটি রোডম্যাপ হাতে নেয়।

Comments