‘গুম’ মাছচাষ বিশেষজ্ঞের ফোনের সর্বশেষ অবস্থান র‍্যাব কার্যালয়ের কাছে: পরিবার

গত নভেম্বরে 'গুমের শিকার' মাছচাষ বিশেষজ্ঞ ইমাম মাহাদী হাসান ডলারের পরিবারের দাবি, তার ব্যবহৃত আইফোনের সর্বশেষ অবস্থান উত্তরা র‍্যাব-১ এর কার্যালয়ের আশেপাশে ছিল বলে অ্যাপের মাধ্যমে জানা গেছে।

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনে ডলারের স্ত্রী মমতা হেনা পিংকি সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামী ইমাম মাহাদী হাসান ডলারকে গত বছরের ৬ নভেম্বর ময়মনসিংহ থেকে সাদা পোশাক পরা কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, 'প্রধান সড়কে ডলারের মোটরসাইকেল পার্কিং করা ছিল। এলাকাটির নাম বটতলা-চানকান্দা। তিনি ফিশারি থেকে হেঁটে তার বাইকের দিকে আগাচ্ছিলেন। এ সময় তাকে তুলে নেওয়া হয়।'

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে তিনি বলেন, '৪-৫ জন ডলারকে ধরে একটি মাইক্রোবাসে উঠায় এবং সেখান থেকে চলে যায়। তাদের সঙ্গে আরও ২টি মোটরসাইকেল ছিল। তারা সবাই সাদা পোশাকে ছিলেন। ঘটনাটি ঘটে বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে।'

'একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমাদের পরিবারকে চিনতেন। তিনি আমার শ্বশুরকে ঘটনাটি জানান। তারা জানান, সেদিন সেখানে মাইক্রোবাসটি সারা দিন ধরে পার্ক করা ছিল। ঘটনার ২ দিন পর আমরা এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি' বলেন পিংকি।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা মামলা করিনি। কারণ আমরা যখন ফুলবাড়িয়া থানা ও ময়মনসিংহের সিআইডি কার্যালয়ে গেলাম, তারা আমাদেরকে জানালেন এ ক্ষেত্রে মামলা করে কোনো লাভ হবে না। পরামর্শ চাইলে তারা আমাদেরকে সাধারণ ডায়েরি করতে বলেন।'

স্বামী নিখোঁজের ১ সপ্তাহ পর তিনি ময়মনসিংহ ডিবি কার্যালয়ে যান বলেও জানিয়েছেন।

পিংকি বলেন, 'সেখানে এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, "আমি বুঝতে পেরেছি আপনার স্বামীর কী হয়েছে। বাসায় গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। হয়তো আপনি একটি ফোন কল পাবেন, যেখানে আপনাকে বলা হবে তিনি কোথায় আছেন, অথবা তিনি নিজেই হয়তো বাসায় ফিরে আসবেন"।'

'আমি তাকে অনুরোধ করি অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত করতে। তিনি জানান, এটা সম্ভব নয়,' বলেন পিংকি।

ডলারের ছোট ভাই রিজভী জানান, তারা আইফোনে একটি অ্যাপ ব্যবহার করে ডলারের মোবাইল ফোনের অবস্থান জানার চেষ্টা করেন।

রিজভী দাবি করেন, হারিয়ে যাওয়া বা চুরি যাওয়া ডিভাইস খুঁজে পেতে সহায়ক এই অ্যাপ ব্যবহার করে তারা ফোনটির সর্বশেষ অবস্থান হিসেবে র‍্যাব-১ এর কার্যালয়ের কম্পাউন্ডের ভেতরের অংশকে চিহ্নিত করেছেন।

তিনি ১২ ডিসেম্বর ২০২১ এর একটি স্ক্রিনশট দেখান, যেখানে এই অবস্থানটি দেখা যায়। আরও একটি স্ক্রিনশটে ফোনের অবস্থান হিসেবে এই কম্পাউন্ড সংলগ্ন সড়ক শায়েস্তা খাঁ এভিনিউকে চিহ্নিত করা হয়।

রিজভী বলেন, 'গত ১২ ডিসেম্বর শেষবারের মতো ফোনটির অবস্থান আমরা খুঁজে বের করতে পারি। এরপর থেকে আর ফোনের অবস্থান চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।'

এই ফিচারটি ফোন বন্ধ থাকলেও কাজ করে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, '১২ ডিসেম্বরের পর তার ফোনের অ্যাপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।'

পরিবারের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে ডলারের নিখোঁজের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। কিন্তু এখনও কোনো উত্তর আসেনি।

পিংকি বলেন, 'এক মাস আগে র‍্যাব-১৪ থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা এসে তার (ডলারের) পাসপোর্ট নিয়ে যায়। তারা জানান, নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছেন। তারা আমার শ্বশুরকে বলেন- 'ডলার হারিয়ে গেছে', এটা উল্লেখ করে একটি বিবৃতি জমা দিতে। তিনি তাদের কথামতো কাজ করেন।'

'এক দিন পর তারা ইংরেজিতে লেখা একটি বিবৃতিসহ ফিরে আসেন। তারপর আমরা জিজ্ঞাসা করি, কেন এটি ইংরেজিতে লেখা। তখন তারা উত্তর দেন, যাতে সবাই বুঝতে পারে। আমাদের প্রশ্ন হলো, কেন বাংলাদেশের কোনো মানুষের ইংরেজি বক্তব্যের প্রয়োজন হবে? আমরা ইংরেজি বক্তব্যের বিষয়বস্তু পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। তাই ওই কাগজে সই করতে চাইনি,' বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে দ্য ডেইলি স্টার র‍্যাব-১ এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।

২০২০ সালে একটি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ডলার ২৬ দিন কারাগারে ছিলেন।

পিংকি বলেন, 'এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি মামলা ছিল। আমার শ্বশুর আওয়ামী লীগের একজন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা। স্থানীয় মসজিদ কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে তখন কোন্দল চলছিল। বর্তমানে আমার শ্বশুর মসজিদ কমিটির নেতৃত্বে আছেন। আমার স্বামী ডলার ও মসজিদের ইমাম দুজনকেই র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছিল।'

'আমি আমার স্বামীকে ঈদের আগে ফিরে পেতে চাই। দয়া করে তাকে তার সন্তানদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার সুযোগ দিন', আকুতি জানান পিংকি।

সংবাদ সম্মেলনে এই দম্পতির ৪ বছর বয়সী ছেলে জালসান ও দেড় বছর বয়সী ছেলে আফরাহিম উপস্থিত ছিল।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান 

Comments

The Daily Star  | English

13 former BDR members walk out of jail after 16 years

Family members expressed overwhelming joy at the release, reuniting with their loved ones

28m ago