পানির জন্য প্রতিদিন ২ কিমি পাহাড়ি পথ পাড়ি দেন ষাটোর্ধ্ব কুইক্ষং ম্রো

২ কিমি পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে পানি নিতে এসেছেন বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়া ষাটোর্ধ্ব নারী কুইক্ষং ম্রো। ছবি: সংগৃহীত

৬৫ বছর বয়সে এসেও খাবারের পানির জন্য প্রতিদিন ২ কিলোমিটারের বেশি পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয় কুইক্ষং ম্রোকে। পরিবারের ৪ সদস্য নিয়ে বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়ায় বসবাস করেন তিনি।

কুইক্ষং দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাড়ার আশেপাশে খাবার পানির কোনো উৎস নেই। লাঠিতে ভর দিয়ে পাহাড়ের চড়াই-উতরাই দিয়ে ২ কিলোমিটার দূরের একটি ঝিরি থেকে পানি আনতে হয়।

'এতে অনেক কষ্ট হয়,' বলেন তিনি।

শুধু কুইক্ষং নন, লাংকম পাড়ার প্রায় ২৭টি পরিবার খাবার পানির তীব্র সঙ্কটে আছেন। 

পাড়ার বাসিন্দা সংলে ম্রো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে আশেপাশের বনে অনেক গাছ, বাঁশ ছিল। তখন ঝিরিতেও পানিও ছিল। এখন গাছ-বাঁশ কেটে ফেলা হয়েছে। আবার পানির সঙ্কটও তীব্র হয়েছে।'

পাহাড়ি পথ পাড়ি দিচ্ছেন কুইক্ষং ম্রো। ছবি: সংগৃহীত

ওই পাড়ার আরেক বাসিন্দা ইনচং ম্রো বলেন, 'প্রভাবশালীরা একদিকে আমাদের জুমের জায়গা দখল করে নিয়েছে। অন্যদিকে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট। আমরা এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছি।'

লাংকম ম্রো পাড়া ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ের অনেক এলাকাতেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত প্রায় ৭-৮ বছরে অগণিত ঝিরি, ঝর্ণা শুকিয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির উৎস কমে গেছে।

তীব্র পানি সঙ্কটের কারণে ২০১৮ সালে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দুর্গম যোগেন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ার ৮ পরিবার পাড়া ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে বলে পাড়া কারবারি অং ক্য চিং জানিয়েছেন।

দ্য ডেইলি স্টারে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ৩টি রিং ওয়েলের ব্যবস্থা করা হয়।

তবে এর মধ্যে ২টি রিং ওয়েল অকেজো হয়ে পড়ে আছে বলে জানান যোগেন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ার বাসিন্দা উথোয়াই প্রু তঞ্চঙ্গ্যা।

এ ব্যাপারে জানতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা আচার্যকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন উজাড়ের ফলে পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য সুপেয় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো নষ্ট হচ্ছে।

পানির উৎস কমে যাওয়া সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আতিকুর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক হারে বন উজাড়ের ফলে পানির উৎসের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আসছে। ফলে হটাৎ অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেকদিন ধরে বৃষ্টিহীন থাকছে। এতে ভূগর্ভে পানি জমা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গাছের মূল প্রচুর পরিমাণে পানি ধরে রাখে। গাছ না থাকার কারণে ভূগর্ভে পানি রিচার্জ হয় না। নির্বিচারে বনের শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে পানির সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে।'

পানির উৎস রক্ষা করতে বন উজাড় থামানোর পাশাপাশি পাহাড় থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধের পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, 'শিগগির এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

7h ago