আমাদের সিনেমা শিল্প পিছিয়ে পড়ার ইতিবৃত্ত

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সংস্কৃতি এবং শিল্পচর্চার সবগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমলাদের প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে বিভিন্নভাবে সমালোচনা তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। সমালোচনাটা স্বাভাবিক। কেননা, এ বিষয়ে আগ্রহ ও চর্চা না থাকলেও, এসব প্রতিষ্ঠানের চিন্তা-চেতনা, কর্মকৌশল তৈরিতে প্রতিনিয়ত তাদের বিভিন্ন নীতি তৈরি করতে হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সংস্কৃতির বিভিন্ন বিভাগে, যেমন সিনেমায় আমলারা কীভাবে প্রবেশ করলেন? এটা কি আমলাদের দোষ, নাকি সিনেমাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না দিতে পারায় সিনেমার মানুষদের ব্যর্থতা? এর উত্তর পেতে হলে আমাদের দেশের সিনেমার ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হবে।

যোগাযোগের এই যুগে পৃথিবীর প্রধান ও প্রথম পছন্দের ব্যবসা হচ্ছে সংস্কৃতিকে পুঁজি করে বাণিজ্য। সংস্কৃতির একটা বড় অংশ কাজ করে বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে। চলচ্চিত্র অন্যতম একটা মাধ্যম। পুরো বিশ্ব জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজত্বের অন্যতম একটা কারণ তাদের চলচ্চিত্র। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা পৌঁছায়নি বা তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়নি। ইন্টারনেটের কল্যাণে এর ব্যাপকতা আরো বেড়েছে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের কথা আমাদের সবার জানা। সেখানে বলিউড ছাড়াও রাজ্যভিত্তিক নিজস্ব সিনেমার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। রাজ্যভিত্তিক সিনেমাগুলো বলিউডের সিনেমার সঙ্গে গল্প বলা ও অর্থ উপার্জনে প্রতিযোগিতা করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশে সিনেমার গৌরব, ঐতিহ্য এবং বর্ণীল ইতিহাস থাকা স্বত্ত্বেও এবং পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ভাষা থেকে শুরু করে সংস্কৃতির অনেক মিল থাকা সত্ত্বেও কেন পিছিয়ে পড়েছে?

পিছিয়ে পড়ার কারণ বের করার আগে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের পর্যালোচনা করা উচিত। যেহেতু বাংলাদেশকে নিয়ে কথা বলছি, তাই ১৯৭১ হবে আমার ইতিহাস পর্যালোচনার বছর।

ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে প্রয়াত গুণী নির্মাতা ও সিনেমা ব্যক্তিত্ব আলমগির কবিরের লেখা 'ফিল্ম ইন বাংলাদেশ' (১৯৭৯) কে উদ্ধৃত করা যেতে পারে। আলমগির কবিরের লেখা ছোট বইটি শুধু সিনেমার ইতিহাসের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং রাজনীতির প্রেক্ষাপট কীভাবে সংস্কৃতি চর্চার ওপর প্রভাব ফেলে সেদিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন তিনি যখন সিনেমা সংস্কৃতি চর্চার অধঃপতন নিয়ে লিখছেন, তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় ৪ নেতাসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে সামরিক শাসন গণতন্ত্রকে গ্রাস করেছে ভয়ালভাবে। এই অপূরণীয় ক্ষতি আমরা এরপর সমাজের সর্বস্তরে দেখতে পাই। এমনকি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও সামরিক ক্ষমতার বিদ্বেষ থেকে রক্ষা পাননি। সামরিক শাসন যে সমাজের চিন্তাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং মানুষকে পরাধীন করে তার উদাহরণ আমাদের সমাজ হারে হারে টের পেয়েছে এবং জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে এই অন্ধকার সময়ের শুরু।

আলমগীর কবির 'ফিল্ম ইন বাংলাদেশ' বইয়ে দেখিয়েছেন কীভাবে পরিবেশকরা সিন্ডিকেট তৈরি করে মেধাবী নির্মাতাদের এফডিসি থেকে এক রকম বিতাড়িতই করেছে। সে সময় পরিবেশকরা সিনেমার টিকিট বিক্রির সঠিক আয় উল্লেখ না করে বরং প্রযোজকদের মনগড়া হিসাব দিতেন। এতে করে যে প্রযোজকরা মেধাবী নির্মাতাদের সিনেমায় অর্থলগ্নি করতেন, তারা হতাশ হয়ে অর্থলগ্নি বন্ধ করে দেন।

আগেই বলেছি, রাজনীতিতে অস্থিরতার কারণে এবং ডাণ্ডাবেঁড়ি সমাজ ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় একটি দল চিন্তা, শিক্ষা এবং মননশীল যুক্তিতর্ক বাদে বাকি সব প্রভাব-প্রতিপত্তি দিয়ে সব দখল করার চেষ্টা ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে টাকা ও লোভ সবকিছুতে প্রথম দিকে চলে আসে। সিনেমাও এর ব্যতিক্রম নয়।

মেধাবী নির্মাতারা যেখানে সৃজনশীলতাকে প্রাধান্য দিয়ে সিনেমার খরচ নির্ধারণ করতেন, সেখানে চলে এসেছে কীভাবে খরচ কমিয়ে সিনেমা তৈরি করে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।

মনে রাখতে হবে, সে সময় আমাদের পুরো দেশজুড়ে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫০০টির বেশি এবং মানুষের বিনোদনের খোরাকের মধ্যে অন্যতম মাধ্যম ছিল সিনেমা। সিনেমা দেখা ছিল সামাজিক উৎসবের মতো। পরিবারের সবাই মিলে মাসে অন্তত একবার হলে গিয়ে সিনেমা দেখা ছিল আমাদের রীতি। সেই সঙ্গে সিনেমা দেখার পরে সেটা নিয়ে লেখা, আলোচনা এবং ভাবনা তৈরি ছিল বুদ্ধিদীপ্ত সমাজ চর্চার অংশ। শুধু তাই নয় ঢাকার বিভিন্ন হলে বিদেশি ক্ল্যাসিক ছবি নিয়ম করে দেখানো হতো।

বিশাল এই বাজার একতরফা নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে হল মালিক এবং সিনেমা পরিবেশকরা, যাদের আমরা ডিস্ট্রিবিউটর নামে চিনি। যেহেতু, তাদের শিল্পচর্চা বা শিল্পকে বোঝার শিক্ষা নেই, তাই সিনেমা রূপ নিলো টাকা উপার্জনের মেশিন হিসেবে।

প্রথমে তারা সিনেমায় অর্থলগ্নি শুরু করলেন। পরিবেশক এবং হল মালিকরা সিনেমা প্রযোজনা শুরু করে গুণী নির্মাতাদের বাতিলের খাতায় ফেলে দিলেন। কারণ আগেই বলেছি, মৌলিক গল্পের শৈল্পিক সিনেমার বাজেট স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে এবং তার চেয়ে বড় কথা হলো শৈল্পিক কাজে সময় বেশি লাগবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, সত্যজিৎ রায় তার কালজয়ী সিনেমা 'পথের পাঁচালি'র শেষ দৃশ্যে কাশফুল ধারণ করতে কতটা সময় নিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, তারা চিন্তা ও যুক্তির আলোচনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেন না এবং শিল্পের বাইরে কোনো অনৈতিক সুপারিশ মেনে নেন না। যেমন অভিনয় না জানা কাউকে অর্থের বিনিময়ে তারা প্রধান বা নাম ভূমিকায় নেবেন না।

এ ক্ষেত্রে নতুন লগ্নিকারীরা প্রথম যে সিদ্ধান্ত নিলো সেটা হচ্ছে, লেখক ও নির্মাতাদের ব্যবসায়ের খাতা থেকে বাদ দেওয়া। ক্যামেরাম্যান, লাইটম্যান, সেট ডিজাইনারের মতো টেকনিশিয়ানদের সামনের কাতারে এনে সিনেমা তৈরি হতে লাগল। টেকনিশিয়ানরা যখন পরিচালনা ও ছবি তৈরির মূল ভূমিকা পালন করা শুরু করল, তখন অল্প সময়ে বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমার নকল গল্পে ছবি তৈরি হতে লাগল।

নকল গল্প এবং গুণী নির্মাতাদের কাছ থেকে টেকনিশিয়ানদের শিখে নেওয়া পদ্ধতিগুলোর বারবার ব্যবহারে অল্প সময়ে ও কম খরচে সিনেমা তৈরি করা সম্ভব হলো।

আগেই বলেছি বইটি লেখা হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। বোঝা যাচ্ছে, ধসের শুরু ওই সময়েই। প্রশ্ন হচ্ছে, সব ধসে পড়তে এতটা সময় নিলো, কিন্তু আমরা বুঝলাম না?

এ প্রসঙ্গে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করতে হয়। সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের এক শিক্ষক ও অভিনেতা এবং আমি ছিলাম। প্রশ্ন করা হয়, শিল্প চর্চায় উচ্চশিক্ষা জরুরি, নাকি তথাকথিত মেধা বা ট্যালেন্ট? আমি শিক্ষাতে জোর দিলেও শিক্ষকের মন্তব্য ছিল, মেধা বা ট্যালেন্টই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তার নাম উল্লেখ করছি না।

কারণ আমাদের প্রায় সবারই ধারণা যে শিল্প বা আর্ট চর্চায় মেধার প্রয়োজন। অথচ, আপনি যদি নাই জানেন আর্ট বা শিল্পের সংজ্ঞা কী এবং কীভাবে সেটা মানুষের চিন্তায় প্রভাব ফেলে, তাহলে মেধার ব্যবহার করবেন কী করে? কীভাবেই বা সেই মেধা সমাজের কাজে লাগাবেন? আমরা যে মেধাবীদের চিনতে পারি না, তার প্রমাণ পাওয়া যায় জাতীয় পুরস্কার বা সরকারি বিভিন্ন পুরস্কারের নমিনেশনের তালিকা দেখলেই।

উচ্চশিক্ষায় আমরা সিনেমা সরকারীকরণ করতে পেরেছি ২০১২ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স বিভাগ খুলে। কিন্তু বিষয়টি ব্যক্তি মালিকানাধীন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত ধরে আরও অনেক আগেই করেছি। এতে সিনেমার উচ্চশিক্ষার অবস্থা বারোটা থেকে চৌদ্দটাতে গিয়ে থেমেছে। কেননা সিনেমা যখন একটা শিল্প এবং জাতীয় চিন্তার চর্চার হাতিয়ার, তখন আমাদের মতো সমাজে সেটাকে সরকারি উচ্চশিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত আবশ্যক। এই সিদ্ধান্ত সমাজের সবাইকে অংশগ্রহণ এবং চিন্তা করার একটা সুযোগ তৈরি করে দেয়। প্রশাসনিক অবস্থান থেকে মেধা বিকাশের চর্চায় একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স থাকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে জবাবদিহির সুযোগ থাকে। সকলের অংশগ্রহণ মেধা যাচাইয়ের আরও সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু যখন বিষয়গুলো রাষ্ট্র শুরু না করে প্রথমে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অধীনে চলতে থাকে, তখন সেটা রূপ নেয় এলিট বা উঁচু শ্রেণীর শিক্ষা হিসেবে। মেধার চেয়ে অর্থ বড় হয়ে দাঁড়ায় এবং যারা বেশি অর্থ খরচ করে এ ধরনের শিক্ষা নিতে পারে, তারা মেধাবী না হলেও শুধু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির কারণে এর সুবিধাগুলো নিজেরা অধিগ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে যায়।

অন্যদিকে সমাজের মানুষের সবার টাকায় যে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে তার প্রধান লক্ষ্য থাকবে মানসম্মত শিক্ষা এবং তার পরিবেশ নিশ্চিত করা। আমাদের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকলেও একটা চেষ্টা থাকে উন্নত সমাজকে অনুকরণের এবং সেই অর্থ যোগানের। কিন্তু ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একটা আয়-ব্যয়ের হিসাবের মধ্যে থেকে তাদের শিক্ষা পদ্ধতি নির্ধারণ করে। আর তারই প্রতিফলন আমরা দেখেছি গত দশকে সিনেমার শিক্ষক নির্বাচনে।

কিছু ফিল্মের শর্ট কোর্স অথবা যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা কিংবা শর্টফিল্ম তৈরি করে বা টেলিভিশনে কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে তারা চলচ্চিত্র অনুষদের শিক্ষক বনে গেছেন। সহজ কথায় বলতে গেলে কুয়োর ব্যাঙ যদি নদীতে গিয়ে পড়ে, তাহলে সে স্রোত ও নদীর বিশালতা সামলাতে পারবে না। সে নদীর পরিধি কল্পনা করতে পারবে না এবং এ ক্ষেত্রে আমরা এর প্রতিফলন দেখছি তাদের কাজে। সিনেমাকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নতুন প্রজন্ম। শিক্ষার্থীরা অধিক অর্থ খরচ করে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক স্বপ্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষাজীবন শেষ করে বেকার হয়ে হতাশ হয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে কিংবা সিনেমা না বানিয়ে টেলিভিশনে সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন কাজ করতে হচ্ছে। এতে সাংবাদিক পেশাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এর কারণ, আমরা সিনেমা শিল্পের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারিনি অথবা সেই চেষ্টাও করিনি।

আমাদের দেশে সিনেমা নির্মাণ এখনও গুরু-শিষ্য পর্যায়ে আছে। শিক্ষক হিসেবে এসব মাঝারি চিন্তার লোকজনকে নেওয়ার ফলে গুরু-শিষ্যের চর্চা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমেও দেখা যায়।

সিনেমায় যথেষ্ট আঁতলামো দেখা যায়। আমাদের এখানে সিনেমার পরিচালক হওয়ার আগে আঁতেল হয়। তারা ধর্ম, রাজনীতি, পরিবেশ সব বোঝেন। কিন্তু সিনেমা যে একটা ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্প সেটা বোঝেন না। আর এ জন্যই তারা এফডিসির সঙ্গে কাজ করতে পারেন না। যখন তারা শিক্ষক হন, তখন ক্লাসের সবাইকে পরিচালক বানানোর দায়িত্ব নেন। অথচ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে হয়তো সিনেমার বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে আগ্রহী হতে চাইতে পারেন। একজন পরিচালকের প্রত্যেক মাসে সিনেমা বানানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের পরিচালকদের জীবিকার তাগিদে সপ্তাহে সপ্তাহে ছবি বানাতে হয়। এ ক্ষেত্রে তারা টিভির জন্য কাজ করেন অথবা বিজ্ঞাপন তৈরি করেন।

৮০'র দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির রমরমা অবস্থা। সে সময় পরিচালক বা লেখক না হয়ে কেবল সিনেমার কর্মী হিসেবে কাজ করেও প্রতিদিনের জীবনের খরচ চালানো সম্ভব ছিল। আর পরিচালক, লেখক ছাড়াও শিক্ষিত সিনেমার কর্মী তৈরির জন্য গড়ে উঠেছিল চমৎকার সব বিশ্ববিদ্যালয়। সেই শিল্প বা ইন্ডাস্ট্রিকে চ্যালেঞ্জ করতে মার্টিন স্করসিস, স্টিভেন স্পিলবার্গ, জর্জ লুকাস প্রমুখরা প্রতিবাদ হিসেবে স্বাধীন চলচ্চিত্র বা ইনডিপেন্ডেন্ট সিনেমা নির্মাণ শুরু করেন। তাদের কথা বলার কারণ হলো, পরবর্তীতে তারাই ইন্ডাস্ট্রির মাথা হয়ে উঠেন। মূলত ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেওয়ার জন্যই তারা সিনেমা বানিয়ে এক ধরনের আন্দোলন তৈরি করেন, তবে তা কখনোই ইন্ডাস্ট্রিকে বর্জন করার জন্য নয়।

আমাদের দেশে ঘটেছে এর উল্টো। আমাদের এখানে সিনেমা হয় কথা দিয়ে, ছবি দিয়ে নয়। আর এ জন্য আমাদের স্বাধীন চলচ্চিত্রকাররা স্বাধীন চলচ্চিত্র বানিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিকে বর্জন করার জন্য। কেননা, তারা জানেন তাদের লোক দেখানো শর্ট কোর্সগুলোকে এফডিসির টেকনিশিয়ানরা প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখেন।

এরকম দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সিনেমার উচ্চশিক্ষাকে পুঁথিগত করেছে এবং সিনেমা শিল্পকে সংকীর্ণ করেছে। ফলে, আমলারা দায়িত্ব নিয়েছেন এই শিল্পের ব্যবস্থাপনায়। জ্ঞানের পরিধি ও চর্চায় আমরা সেই মানদণ্ড তৈরি করতে পারিনি, যে মানদণ্ডের কারণে প্রশাসকরা ভাবনার ক্ষেত্রে আমাদেরকে প্রাধান্য দেবেন।

নুরুজ্জামান খান: চলচ্চিত্রকার, শিক্ষক ও পিএইচডি গবেষক, হাঙ্গেরিয়ান ফাইন আর্টস বিশ্ববিদ্যালয়

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

1h ago