বিমানের পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে প্রতিমন্ত্রী, ২ এমপিসহ টরন্টো যাবেন ২৫-৩০ কর্মকর্তা

ঢাকা-টরন্টো-ঢাকা রুটে আগামী ২৬ মার্চের 'পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক' ফ্লাইটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির দুজন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যসহ মোট ২৫ থেকে ৩০ কর্মকর্তা থাকবেন বলে জানা গেছে।

জনগণের অর্থে এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই সফরে যাচ্ছেন একই উদ্দেশ্য নিয়ে। আর তা হলো- টরন্টোয় বিমানের একটি অফিস ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ, জেনারেল সেলস এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া এবং রুট পরিচালনার জন্য ট্রান্সপোর্ট কানাডার সঙ্গে পরামর্শ করা।

এ কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের এই সফর নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।

এর আগে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে, স্বাধীনতা দিবসে ঢাকা–টরন্টো গন্তব্যে পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই সংস্থা।

তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করতে আড়াই মাসেরও বেশি সময় লাগবে।

প্রতিনিধি দলে আছেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বিমানের পরিচালক এয়ার কমোডর মৃধা মো. একরামুজ্জামান, বিমানের মহাব্যবস্থাপক মোক্তার হোসেন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল ও সৈয়দ শরিফুল ইসলাম।

প্রতিমন্ত্রীর যাবতীয় খরচ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বহন করবে এবং টিকিট খরচ ব্যতীত অন্যদের যাবতীয় খরচ বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বহন করবে। সরকারি আদেশ ও মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের টিকিটের খরচ বহন করবে।

প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তার স্ত্রী ও এক মেয়েও যাবেন। তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা তাদের খরচ নিজেরাই বহন করবেন।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ মুসাব্বির এবং মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদও ওই ফ্লাইটে টরন্টোয় যাবেন এবং তাদের ভ্রমণের উদ্দেশ্যও টরন্টোয় বিমানের একটি অফিস ভাড়া নেওয়ার বিষয় পর্যবেক্ষণ, জেনারেল সেলস এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া এবং রুট পরিচালনার জন্য ট্রান্সপোর্ট কানাডার সঙ্গে পরামর্শ করা।

তাদের যাতায়াত খরচ বিমান বহন করবে এবং বাকি সব খরচ মন্ত্রণালয় বহন করবে।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় যে বিষয়টি অধিক সাশ্রয়ে করা সম্ভব, সেখানে সরকার কেন এমন ব্যয়বহুল সফরের পরিকল্পনা করেছে তা বোধগম্য নয়।'

তিনি বলেন, 'যদি এই সফরের যৌক্তিক কারণ থেকেও থাকে, তারপরও একজন প্রতিমন্ত্রী ও কয়েকজন সংসদ সদস্যের এভাবে সফরের কোনো বৈধতা থাকতে পারে না। কেননা বিষয়টি তাদের মতো উচ্চ পর্যায়ের সরকারি পদে থাকা ব্যক্তিদের জন্য অবমাননাকর।'

'অপরদিকে, এই সফরে মন্ত্রীর এপিএস এবং পিআরও যাওয়ার পেছনে যে কারণের কথা বলা হয়েছে, সেটির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করা যে কারও জন্য কঠিন। এটি জনগণের টাকায় আনন্দভ্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয় এবং এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি বিব্রতকর উদাহরণ', যোগ করেন ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি আরও বলেন, 'যারা এই উদ্যোগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।'

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালও ওই ফ্লাইটে থাকবেন।

বিমানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'দুজন সংসদ সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিমানের মোট ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মকর্তা পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে যাচ্ছেন।'

তিনি বলেন, 'ওই ফ্লাইটে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছাড়া অন্যদের যাওয়ার বিষয়টি জনগণের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।'

অভিযোগ আছে, গত ১৯ মার্চ বিমান যখন ওই ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি শুরু করে, তখন এর একটি টিকিটও পাওয়া যায়নি।

সেদিন টিকিট বুক করার জন্য ফোন করলে বিমানের কর্মীরা জানান যে, ফ্লাইটটি 'সাধারণ যাত্রীদের' জন্য নয়।

তবে বিমানের এমডি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'এগুলো অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।'

তিনি বলেন, 'এই ফ্লাইটটি কোনো ভিআইপি ফ্লাইট নয়। ১ লাখ ২৮ হাজার টাকার বিনিময়ে যে কেউ এই ফ্লাইটের ইকোনমি ক্লাসের যাওয়া-আসার টিকিট কিনতে পারবেন।'

গতকাল এই প্রতিবেদক বিমানের কল সেন্টারে ফোন করলে একজন কর্মী জানান, ফ্লাইটের মাত্র ৭টি টিকিট অবিক্রীত আছে এবং একমুখী ভ্রমণের জন্য প্রতি টিকিট পিছু ৯০ হাজার টাকা খরচ হবে।

বিমান এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ব্যবহার করছে, যা গন্তব্যে পৌঁছুতে প্রায় ১৪ ঘণ্টা সময় নেবে।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

4h ago