যেভাবে সবাই অবসর ভাতা পাবেন

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ সরকার চালু করতে যাচ্ছে সর্বজনীন অবসর ভাতা কর্মসূচি। এর অধীনে বিভিন্ন পেশাজীবী ও বয়সের, এমনকি নিম্ন আয়ের মানুষও পাবেন মাসিক অবসর ভাতা।

এই স্কিম বা সর্বজনীন অবসর ভাতা কর্মসূচির মাধ্যমে মাসিক ১ হাজার টাকা জমা দিয়ে অবসরের পর যে কেউ প্রতি মাসে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাতা পেতে পারেন।

কোনো পেনশনার মারা গেলে প্রচলিত অবসর ভাতার মতোই তার নমিনি এই ভাতা পাবেন। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি অবসর ভাতার তহবিলে যে পরিমাণ অর্থ জমা রাখবেন, সেই অর্থের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঐ তহবিল থেকে তিনি ঋণ নিতে পারবেন।

সর্বোপরি এই অবসরভাতা হবে সম্পুর্ণ আয়করমুক্ত। তবে এখানে কিছু যদি ও কিন্তু আছে।

যারা এই সুবিধা নিতে পারবেন

১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী দেশে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি ও প্রবাসী, মুদি দোকানদার বা দিনমজুর থেকে শুরু করে যেকোনো পেশার ও আয়ের বাংলাদেশি নাগরিক এই অবসর ভাতা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

তবে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা, যারা বর্তমানে কোনো না কোনো ধরণের অবসর ভাতা পাচ্ছেন তারা এই স্কিমের আওতায় আসবেন না।

এই কর্মসূচি চালু হওয়ার পর কেউ চাইলে এতে যুক্ত হবেন, না চাইলে নাই। তবে ভবিষ্যতে সবার জন্য এটি বাধ্যতামুলক করা হবে।

কীভাবে এই ভাতা দেওয়া হবে

সরকার অবসর ভাতা নির্ধারণ, বিতরণ এবং তহবিল ব্যাবস্থাপনার জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করবে।

প্রতি পেনশনারের জন্য একটি করে পেনশন অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। যাতে কেউ চাকরি পরিবর্তন করলেও তার অ্যাকাউন্ট অপরিবর্তিত থাকে।

কে কত টাকা মাসিক জমা দেবেন, তা নির্ধারণ করে দেবে পেনশন কর্তৃপক্ষ। সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্দিষ্ট করা থাকবে এবং মাসিক ভিত্তিতে টাকা জমা দিতে হবে। তবে প্রবাসীরা তিন মাস অন্তর অন্তর চাঁদা প্রদান করতে পারবেন।

কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের এই পেনশন দিতে চাইলে মাসিক চাঁদার হার নির্ধারণ করে দিবে পেনশন কর্তৃপক্ষ।

কোনো ব্যাক্তি যত টাকা মাসিক হারে জমা দেবে, ঠিক তত টাকা ওই ব্যক্তির চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ওই অ্যাকাউন্টে জমা দেবে। তবে সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে পেনশনারের মাসিক জমার সমপরিমাণ টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার কথা ভাবছে।

তবে কেউ মাসিক চাঁদার সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থ এখানে জমা রাখতে চাইলেও তা রাখতে পারবেন।

কে কত টাকা ভাতা পাবেন

কে কত টাকা অবসর ভাতা পাবেন, তা নির্ভর করবে তিনি কত টাকা প্রতি মাসে জমা দিয়েছেন তার ওপর।

অর্থমন্ত্রী এ এইচ এম মুস্তাফা কামাল সম্প্রতি এই কর্মসুচির উপর আলোকপাত করার সময় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, 'কোনো ব্যক্তি অবসর গ্রহণের সময় অথবা তার ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন তহবিলে যে পরিমাণ অর্থ জমা রাখবেন তার উপর ১০ শতাংশ মুনাফা এবং ৮ শতাংশ আনুতোষিক বা গ্রাচুইটি হিসেব করে যা হয়, তা মেয়াদপূর্তিতে মাসিক ভাতা হিসেবে পাবেন।'

সহজ করে বলা যায়, কেউ যদি ১৮ বছর থেকে শুরু করে ৬০ বছর পর্যন্ত মাসে ১,০০০ টাকা করে জমা রাখেন, তবে ৬১ বছর বয়স থেকে উনি প্রতি মাসে ৬৪,৭৭৬ টাকা করে অবসর ভাতা পাবেন।

আবার কেউ যদি ৩০ বছর বয়স থেকে এই স্কীমে টাকা জমা দেয়া শুরু করেন, তবে তার মাসিক অবসর ভাতা হবে ১৮,৯০৮ টাকা।

তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে, কোনো ব্যক্তি টানা ১০ বছর বিরতিহীনভাবে মাসিক চাঁদা প্রদান করলেই কেবল তিনি অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা এই পেনশন অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে হবে। কেউ যদি সেই ন্যূনতম অর্থ জমা রাখতে ব্যর্থ হন, তবে তার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বাতিল হয়ে যাবে। তবে যে কয় মাসের চাঁদা বাকি আছে, সেটাসহ কিছু জরিমানা দিয়ে ওই পেনশন অ্যাকাউন্ট আবার চালু করা যাবে।

পেনশনারের মৃত্যু হলে কী হবে

পেনশনাররা আজীবন এই অবসর ভাতা পাবেন। আর যদি কোনো পেনশনার মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে ৭৫ বছর পর্যন্ত ওই পেনশনারের নমিনি ভাতা পেতে থাকবেন।

কোনো পেনশনার টানা ১০ বছর মাসিক চাঁদা প্রদানের আগে মারা গেলে পেনশন অ্যাকাউন্টে তার জমাকৃত তহবিল মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ক্রমশ বাড়ছে। এখন তা ৭৩ বছর। এমন পরিস্থিতিতে এই ধরণের কর্মসূচি চালুর বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

দ্য সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন জানান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হবেন বৃদ্ধ মানুষ। আর বর্তমানে দেশের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪০ জনই কোনো পেনশন পান না।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'এমনিতেই কর থেকে সরকারের আয় খুবই কম। তার ওপর দিন দিন অবকাঠামো খাতের ব্যয় বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে পেনশন দেয়ার জন্য তহবিল আলাদা করাটা সরকারের জন্য বেশ কঠিন হবে।'

এ ছাড়া এই পেনশন তহবিলের অর্থ ভালো জায়গায় বিনিয়োগ করার পাশাপাশি তা বিতরণের প্রক্রিয়াটি যেন দুর্নীতির আরেকটি হাতিয়ার না হয়ে যায়, সেদিকেও কড়া নজর রাখার তাগিদ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতে, এই পেনশন প্রকল্পের জন্য একটি স্ট্রাটেজিক পেপার বা কৌশলপত্র দাঁড় করাতে যেখানে সরকারের কয়েক বছর লেগে গেছে, সেখানে ৬ মাস বা ১ বছরের মধ্যে আইন তৈরি করে ও একটি সর্বজনীন পেনশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করাটা খুবই কঠিন হবে।

এ ব্যাপারে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের ভাষ্য, এত বড় একটি জনগোষ্ঠীর সবার জন্য একসঙ্গে অবসরভাতা কর্মসূচি চালু না করে, ভেঙে ভেঙে বা পাইলট প্রকল্প আকারে বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হলে বেশি সফলতা পাওয়া যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Audits expose hidden bad loans at 6 Islamic banks

The reviews, initiated in January with backing from the ADB, expose deep-seated financial mismanagement at those banks

9h ago