ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে যাওয়া বাংলাদেশিদের আনতে চাটার্ড ফ্লাইটের পরিকল্পনা
ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে যাওয়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চার্টার্ড ফ্লাইটের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ সরকার।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আজ বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। প্রয়োজনে আমরা চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করব।'
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর আতঙ্কিত হয়ে ইউক্রেনীয় এবং অন্যান্য বিদেশিদের পাশাপাশি শত শত বাংলাদেশি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পোলিশ সীমান্তে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
ইউক্রেনে থাকা বাংলাদেশি মফিজুর রহমান সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'আমরা পোল্যান্ডের দিকে যাচ্ছি। তবে শত শত যানবাহনের চাপে রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট। আধা ঘণ্টা ধরে আমাদের গাড়ি এক ইঞ্চিও নড়তে পারেনি।'
মফিজুরের সঙ্গে আরও চার বাংলাদেশি আছেন বলে জানান তিনি।
আজ রুশ হামলার পর ইউক্রেন তার আকাশসীমা বেসামরিক ফ্লাইটের জন্য বন্ধ করে দেয়।
মফিজুর রহমান বলেন, তারা কিয়েভের একটি গ্যাস স্টেশনে প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর গাড়ির পেট্রোল পেয়েছেন এবং তারপর দুপুরের দিকে পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে যাত্রা শুরু করেন।
মফিজুর রহমান ইউক্রেনে আইন বিষয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছি যে পোল্যান্ড এই জরুরি পরিস্থিতির মধ্যে তার সীমান্ত খুলে দিয়েছে। আমাদের কাছে সব কাগজপত্র রয়েছে তাই আমরা আশা করি পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে পারব।
ইউক্রেনে প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশি রয়েছে। তারা ইউক্রেনের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে আছে। বুধবার রাতে পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের পোল্যান্ড সীমান্তে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
'আমরা প্রায় ৫০০ বাংলাদেশির একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছি। আমরা তাদের সংযুক্ত করার জন্য আরও গ্রুপ তৈরি করছি,' বলেন পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন।
তিনি জানান, ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়া বাংলাদেশিদের সেখানে অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য ভিসা দেওয়া নিশ্চিত করতে তারা পোলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন।
সাধারণত, পোল্যান্ড দুই সপ্তাহের ট্রানজিট ভিসার অনুমতি দেয়। সেক্ষেত্রে ইউক্রেন পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারা ইউক্রেনে ফিরে যেতে পারে বা বাংলাদেশে ফিরে যেতে পারে।
তিনি বলেন, যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের পোল্যান্ড ভ্রমণের সুবিধার্থে ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করতে পারে।
ইউক্রেনের বাংলাদেশিরা বলেছেন যে ওডেসা, দোনেস্ক এবং লুহানস্কসহ পূর্ব ইউক্রেনীয় রাজ্যে যারা বসবাস করেন তারা সংঘাত নিয়ে বেশি আতঙ্কে ছিলেন। কারণ রাশিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের ওখান থেকেই আক্রমণ শুরু করেছিল।
ওডেসার একজন বাংলাদেশি ছাত্র মোহাম্মদ রিজভি বলেছেন যে তারা সেখানে আটকা পড়েছেন কারণ সেখানে কোনো গাড়ি বা ফ্লাইট চলাচল করছে না।
'ওডেসার কিছু অংশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমরা আতঙ্কিত। যদিও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই, আমরা পোল্যান্ডের মতো অন্যান্য দেশে চলে যাওয়াই ভালো মনে করছি, তিনি বলেন।
তার মতে, ওডেসায় প্রায় ৫০০ বাংলাদেশি আছে- যাদের বেশিরভাগই ছাত্র এবং ব্যবসায়ী।
শাহরিয়ার আলম বলেছেন যে কেউ সাহায্যের প্রয়োজন হলে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর +48527094381 এ যোগাযোগ করতে পারেন।
এছাড়া জার্মানি ও ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরও পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জরুরি অবস্থার জন্য সহায়তার জন্য পোল্যান্ডে স্থানান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।
গত মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং রাশিয়ান দূতাবাসের কূটনীতিকরা ইউক্রেন ইস্যুতে তাদের অবস্থান জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছিলেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুদ্ধ নয়, শান্তি ও স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ। সংলাপের মাধ্যমে শান্তিই একমাত্র সমাধান।
Comments