চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ড: ক্ষতিগ্রস্তরা ন্যায়বিচার পায়নি

বাংলাদেশে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর মধ্যে সরকার হয়তো ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় আবাসিক ভবনের অগ্নিকাণ্ডের কথা ভুলেই গেছে। ভবনে ভাড়া দেওয়া একটি গুদামে আগুন লাগার ঘটনায় ৭১ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন সেদিন।
চুড়িহাট্টার এই ভবনে ২০১৯ সালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। আগুনের ঝুঁকি থাকার পরেও আবাসিক এই ভবনের মালিক আবারও প্লাস্টিকের খেলনার গুদাম হিসেবে বেজমেন্টের পার্কিং লট ভাড়া দিয়েছেন। ছবি: আনিসুর রহমান

বাংলাদেশে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর মধ্যে সরকার হয়তো ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় আবাসিক ভবনের অগ্নিকাণ্ডের কথা ভুলেই গেছে। ভবনে ভাড়া দেওয়া একটি গুদামে আগুন লাগার ঘটনায় ৭১ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন সেদিন।

ওই ভবনের মালিকের কথাই ধরুন। আগুন লাগার ঝুঁকি থাকা স্বত্বেও  তিনি ভবনের বেজমেন্টের পার্কিং লটে আবারও প্লাস্টিকের খেলনার গুদাম হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর গত ৩ বছরে বেজমেন্ট সংস্কার করা হলেও, আগুন লাগলে জরুরি নির্গমন পথ নেই। সেখানে আছে মাত্র ৪টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র।

১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় বিপজ্জনক রাসায়নিক বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হয় এমন শিল্প ইউনিট থাকতে পারবে না। অথচ এই আইন থাকার পরেও আবাসিক ভবনে এমন দাহ্যবস্তুর গুদাম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে প্রকাশ্যে।

চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় ভবন মালিকসহ অন্যান্য আসামিরা বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন। তাদের এমন স্বাধীনতা পাওয়ার কথা না, যেখানে ওই ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবার ন্যায়বিচার পাওয়া তো দূরে থাক, অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে। নিহত ৭১ জনের মধ্যে মাত্র ২১ জনের পরিবার সরকারের কাছ থেকে কিছু ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। অন্যদের দোকান করে দেওয়া হয়েছে বা ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ দেওয়া হয়েছে। ওই ক্ষতি পূরণ করতে এটা কিছুই নয়, একটি পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে এগুলো যথেষ্ট নয়।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুধু বেঁচে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য করতে সরকারের ত্রাণ তহবিলে ৩০ কোটি টাকা জমা পড়েছিল। ওই টাকার কী হলো?

অনেক পরিবার বলছে, তারা সেই তহবিল থেকে একটি পয়সাও পায়নি। এমনকি ঋণ হিসেবেও পায়নি। এটা খুবই হৃদয় বিদারক যে কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে যারা আগুনে মারা গেছে তাদের পরিবারকে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে হয়।

এদিকে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন ২০১০ সালে নিমতলী অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মৃত্যুর পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পুরান ঢাকার রাসায়নিকের দোকান এবং প্লাস্টিক কারখানাগুলোকে নির্দিষ্ট জায়গায় স্থানান্তর করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতিও পূরণ হয়নি। ওই এলাকায় বর্তমানে অন্তত ১ হাজার ৯২৪টি রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম আছে। এর শতকরা ৯৮ শতাংশ 'মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ' শ্রেণিতে পড়ে। যদি চুড়িহাট্টার ওই ভবনের মতো অবৈধভাবে আবাসিক ভবনের হিসাব করি, তবে এই সংখ্যা অবশ্যই আরও অনেক বেশি হবে।

আমরা সরকারকে এসব গুদাম স্থানান্তর প্রক্রিয়ার গতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানাই। পুরান ঢাকায় বিপজ্জনক সামগ্রী মজুত করার সুবিধা বন্ধ করতে হবে। স্থানান্তর প্রক্রিয়া যখনই শেষ হোক না কেন, বিদ্যমান কারখানাগুলো যত শিগগির সম্ভব বন্ধ করে দিতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে আগের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের ও আহতদের এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি অবশ্যই ন্যায়বিচার করতে হবে এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
police reform goals in Bangladesh

Complaints against cops: Police want to investigate on their own

The police want the power to investigate complaints against their members, reforming the current system that requires the home ministry’s involvement when the officer facing charges is of a certain rank.

4h ago