৭৫ স্প্লিন্টার শরীরে নিয়ে শাবিপ্রবিতে ফিরলেন সজল কুন্ডু

শাবিপ্রবিতে ফেরার পর সহপাঠী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সজল কুন্ডু ছবি: সংগৃহীত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশের শটগান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের সময় ৮৩টি স্প্লিন্টারে গুরুতর আহত শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু ঢাকায় চিকিৎসা শেষে ফিরেছেন শাবিপ্রবিতে।

সিলেটে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডান হাতে অস্ত্রোপচার শেষে মাত্র ৪টি স্প্লিন্টার অপসারণ করা যায়। শরীরে আরও ৭৫টি স্প্লিন্টার নিয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী।

গত ১৬ জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের শটগান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের সময় ৮৩টি স্প্লিন্টারে গুরুতর আহত হন শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু। ছবি: সংগৃহীত

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্থগিত ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত মূলদাবিসহ কোনো দাবি পুরণ না হওয়ায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আজ শনিবার একটি লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন সজল কুণ্ডু।

বিবৃতিতে চিকিৎসদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশঙ্কায় তার শরীরের স্প্লিন্টার অপসারণের ঝুঁকি নিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। এসব স্প্লিন্টার শরীরে নিয়েই তাকে বাকি জীবন কাটাতে হবে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। এছাড়াও ভবিষ্যতে নতুন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, 'গত কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহ অনুসরণ করে এবং সিলেটে  ফেরার পর আমাদের সতীর্থ ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে কিছু ব্যাপারে আমি অবহিত হয়েছি যা আমাকে অত্যন্ত মর্মাহত করেছে। গত ১১ তারিখে আমাদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন আমাদের সমস্ত দাবির ব্যাপারে অচিরেই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনাকালে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুটি মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে, সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের বন্ধ করে দেওয়া ব্যাংক-অনলাইন অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হবে।

সজল বলেন, 'তার (শিক্ষামন্ত্রীর) আশ্বাসের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত মামলাগুলো তোলার বা অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমি দেখতে পাইনি। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর স্পষ্ট আশ্বাসের পরও এসব বিষয়ে এমন দীর্ঘসূত্রতা আমাকে প্রচণ্ড হতাশ করেছে।'

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে 'সত্যের জয় হয়েছে, মিথ্যা পরাভূত হয়েছে' বলে উল্লেখ করেন।

উপাচার্যের বক্তব্যকে 'নির্জলা মিথ্যাচার' উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, '১৬ জানুয়ারি যে নারকীয় হামলা হয়েছে তার একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলতে চাই আমার কাছে সত্য হচ্ছে আমার শরীরে এখনো বিঁধে থাকা স্প্লিন্টারগুলো, এতদিনের অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা, আমার আহত সতীর্থদের আর্তনাদ ।'

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনায় সজল কুণ্ডুকে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়া, ভবিষ্যতের চিকিৎসা ব্যয় সরকারের পক্ষ থেকে বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপুরণের দাবিও জানান হয়েছিলো।

এ ব্যাপারে সজল কুণ্ডু বলেন, 'আমাকে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী মৌখিক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত আমার ভবিষ্যতের চিকিৎসা খরচ বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস পাইনি। আমার বাবা মৃত, মা অসুস্থ। আমার অসচ্ছল পরিবার। সম্প্রতি কিছু ঋণ করে আমি সামান্য ব্যবসা শুরু করেছিলাম, পড়াশোনা শেষ করে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির চেষ্টা শুরু করতাম। একটি দিনের ব্যবধানে আমার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত ও স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় সামনের বিপদসংকুল দিনগুলো কীভাবে কাটবে তার আশংকায় এখন যে আমাকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তার দায় কে নেবে?'

তিনি শিক্ষার্থীদের জীবনে যে ঘোর অন্ধকার নেমেছে, তা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রত্যেকটি দাবি মেনে নিতে আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান।

গত ১৩ জানুয়ারি বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। পরে এ আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।

এরপর ১৬ জানুয়ারি দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যায় অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে এবং রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। সেদিন অন্তত ৩০জন শিক্ষার্থী আহত হয়।

সেই রাতেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে ১৯ জানুয়ারি বিকেল ২টা ৫০ মিনিট থেকে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। 

পরবর্তীতে ২৬ জানুয়ারি ভোররাতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের আশ্বাস নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দম্পতি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমীন হক। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেবে সরকার, এমন আশ্বাসে সেদিন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।

অনশন ভাঙলেও স্বাভাবিকভাবে প্রতিবাদী কর্মসূচির মাধ্যমে উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। তারা আলোচনার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে শাবিপ্রবিতে আসতে আহবান জানান।

শিক্ষার্থীদের আহবানে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সিলেটে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সিলেট সার্কিট হাউজে দুপুর থেকে শুরু করে ৩ ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে সন্ধ্যায় শাবিপ্রবিতে যান তিনি।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়টি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সিদ্ধান্ত নিবেন জানিয়ে তিনি বাকি সকল দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

5h ago