নদীতে ফার্মাসিউটিক্যালস বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসের ‘দ্য ব্লু রিভার’ নামের নদীতে ফার্মাসিউটিক্যাল যৌগের সর্বোচ্চ ঘনত্ব পাওয়া গেছে। ছবি: ড. জন উইলকিনসন

ওষুধ এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের কারণে বিশ্বের নদীগুলোর দূষণ পরিবেশ ও বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

আজ মঙ্গলবার বিবিসি জানায়, নদীর পানিতে ব্যাপকহারে প্যারাসিটামল, নিকোটিন, ক্যাফেইন এবং মৃগীরোগ ও ডায়াবেটিসের ওষুধের উপস্থিতি পেয়েছে ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

এটি বিশ্বব্যাপী পরিচালিত সবচেয়ে বড় আকারের গবেষণা।

গবেষণায় পাকিস্তান, বলিভিয়া ও ইথিওপিয়ার নদীগুলো সবচেয়ে বেশি দূষিত বলে জানা গেছে। আইসল্যান্ড, নরওয়ে এবং আমাজন রেইনফরেস্টের নদীগুলো সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে।

যদিও নদীর পানিতে থাকা অধিক পরিমাণ সাধারণ ফার্মাসিউটিক্যাল যৌগের প্রভাব এখনো অনেকাংশে অজানা।

তবে এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, নদীর পানিতে দ্রবীভূত মানুষের গর্ভনিরোধক ওষুধের উপাদান মাছের প্রজনন ও বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে এবং বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, নদীতে অ্যান্টিবায়োটিকের বর্ধিত উপস্থিতি ওষুধ হিসেবে এগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।

গবেষণায় ১০০টিরও বেশি দেশের ১ হাজারেরও বেশি পরীক্ষামূলক সাইট থেকে পানির নমুনা নেওয়া হয়েছে।

সামগ্রিকভাবে নমুনা সংগৃহীত ২৫৮টি নদীর এক চতুর্থাংশেরও বেশি নদীর পানিতে সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান পাওয়া গেছে, যা জলজ প্রাণীর জন্য অনিরাপদ।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া ড. জন উইলকিনসন বিবিসিকে বলেন, 'সাধারণত যা ঘটে তা হলো, আমরা এই রাসায়নিকগুলো সেবন করি, সেগুলো আমাদের ওপর কাঙ্ক্ষিত কিছু প্রভাব ফেলে এবং তারপরে সেগুলো আমাদের দেহ থেকে বেরিয়ে যায়।'

'তবে আমরা এখন যা জানি তা হলো- নদী বা হ্রদের পানিতে মেশার আগে সবচেয়ে আধুনিক ও দক্ষ বর্জ্য জল শোধনাগারগুলোও এসব যৌগকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে সক্ষম নয়', বলেন তিনি।

নদীর পানিতে যে দুটি ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে, তা হলো- কার্বামাজেপাইন ও মেটফরমিন। কার্বামাজেপাইন মৃগীরোগ ও স্নায়বিক ব্যথার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এবং মেটফরমিন ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

এ ছাড়া, ব্যথানাশক প্যারাসিটামলের পাশাপাশি দৈনন্দিন ব্যবহৃত ক্যাফেইন (কফি) ও নিকোটিনের (সিগারেট) উচ্চ ঘনত্ব পাওয়া গেছে।

আফ্রিকায় ম্যালেরিয়ার বিরোধী ওষুধ আর্টেমিসিনিনের উচ্চ ঘনত্ব পাওয়া গেছে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারের জলজ পরিবেশবিদ ড. ভোরোনিকা এডমন্ডস-ব্রাউন বলেন, 'আমরা বলতে পারি, নদীতে এ জাতীয় ওষুধের উপস্থিতির প্রভাব খুবই নেতিবাচক হতে পারে, তবে এজন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন, কেননা এ বিষয়ে তুলনামূলক খুব কম গবেষণা হয়েছে।'

'পরিস্থিতি আরও ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে, কারণ আমরা শারীরিক ও মানসিক যেকোনো অসুস্থতার জন্য ব্যাপকহারে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছি', যোগ করেন তিনি।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নদীতে অ্যান্টিবায়োটিকের বর্ধিত উপস্থিতি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে পারে, যা ওষুধের কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত পরিবেশ ও বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করতে পারে।

সবচেয়ে বেশি দূষিত স্থান চিহ্নিত হয়েছে নিম্ন ও মধ্যমআয়ের দেশগুলোতে, যেখানে পয়ঃবর্জ্য ডাম্পিং করা হয়, বর্জ্য জল ব্যবস্থাপনা বেশ দুর্বল এবং ওষুধ উৎপাদন শিল্প রয়েছে।

ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

Comments