রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে খুলনাকে হারিয়ে কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রাম

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

চ্যাডউইক ওয়াল্টনের ঝড়ে বড় পুঁজিই গড়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। কিন্তু স্বদেশী আন্দ্রে ফ্লেচারের ব্যাটে প্রায় বৃথা হতে চলেছিল ওয়াল্টনের ইনিংসটি। কিন্তু শেষ দিকে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে লড়াই জমিয়ে দিয়ে জয় তুলে নেয় চট্টগ্রামই। রোমাঞ্চকর এক লড়াইয়ে হেরে আসর থেকে বিদায় নেয় খুলনা টাইগার্স।   

সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের এলিমিনেটর পর্বের ম্যাচে খুলনা টাইগার্সকে ৭ রানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮৯ রান করে তারা। জবাবে নিজেদের নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮২ রানের বেশি করতে পারেনি মুশফিকুর রহিমের দল।

শেষ দুই ওভারে তখন প্রয়োজন ২৪ রানের। বল প্রতি দুই। শরিফুল ইসলামের অফস্টাম্পের বেশ বাইরে রাখা প্রথম বলেই দারুণ এক ছক্কা হাঁকান ইয়াসির আলী। এক বল পরেই পাল্টা আঘাত হানেন শরিফুল। এবারও হাঁকিয়েছিলেন ইয়াসির। তবে সীমানায় বেনি হাওয়েলের ক্যাচে পরিণত হন। উইকেট পেয়েই তেতে ওঠেন শরিফুল। পরের তিন বলে রান দেন মাত্র এক।

শেষ ওভারে তখন চাই ১৬ রান। মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম তিন বলে আসে তিনটি সিঙ্গেল। চতুর্থ বলও তাই হতে পারতো। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর মিস ফিল্ডিংয়ে চার পেয়ে যান ফ্লেচার। ম্যাচে টিকে থাকে খুলনা। কিন্তু পঞ্চম বলটি ইয়র্কার লেন্থে করে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন মিরাজ। শেষ বলে তুলে নেন থিসারা পেরেরাকে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত হয় চট্টগ্রামের।

অথচ শুরুটা খারাপ ছিল না খুলনার। বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা আগ্রাসী ঢঙেই শুরু করে তারা। পাওয়ার প্লেতে আসে ৫৮ রান। যদিও দুটি উইকেট হারায় দলটি। শেখ মেহেদী হাসান ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দেন লংঅফে। আর পুল করতে গিয়ে ঠিকঠাক সংযোগ করতে না পারায় আকাশে বল তুলে দেন সৌম্য সরকার।

খুলনার লড়াইয়ের ভিত ফ্লেচারের সঙ্গে গড়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক মুশফিক। স্কোরবোর্ডে ৬৪ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। খুলনা অধিনায়ককে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মূলত দোমনা হয়ে ভুলটা করে ফেলেন মুশফিক। প্রথমে হাঁকাতে গিয়ে পরে লেট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে পরিণত হন সহজ ক্যাচে।

অধিনায়কের বিদায়ে রানের গতিতে কিছুটা ভাটা পড়ে। ২৯ বলের মধ্যে মাত্র ২টি বাউন্ডারি মিলে। তাতেই ফের লড়াইয়ে ফিরে চট্টগ্রাম। যদিও এরপর খুলনা ফের জমিয়ে দেয় ম্যাচ। শেষ ২১ বলে তখন প্রয়োজন ছিল ৫৪ রানের। আগ্রাসী হন ফ্লেচার। সঙ্গে ইয়াসির আলীও তাকে দারুণ সঙ্গ দেন। তাতে পরের ৯ বলেই রান আসে ৩০। লড়াইয়ে ফেরে খুলনা। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেনি দলটি।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮০ রানের ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ফ্লেচার। ৫৮ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় এ রান করেন এ ক্যারিবিয়ান। শেষ দিকে ২৪ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় দারুণ এক ক্যামিও খেলেন ইয়াসির। ২৯ বলে ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৪৩ রান।

চট্টগ্রামের পক্ষে ৪০ রানের খরচায় ২টি উইকেট পান মিরাজ।

এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা চট্টগ্রামের শুরুটা ভালো হয়নি। দলীয় ১৬ রানেই ওপেনার জাকির হাসান ও অধিনায়ক আফিফ হোসেনকে হারায় দলটি। এরপর হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়া জ্যাক উইলসের জায়গায় সুযোগ পাওয়া কেনার লুইস দলের হাল ধরে ওয়াল্টনের সঙ্গে।

উইলসের মতো বিধ্বংসী না হলেও দ্রুত দুই উইকেট হারানো দলটির ইনিংস মেরামতে দারুণ ভূমিকা রাখেন লুইস। তৃতীয় উইকেটে ৩৮ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। লুইসকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে এ জুটি ভাঙেন নাবিল সামাদ।

এরপর ১১ রানের ব্যবধানে শামিম পাটোয়ারিকেও হারায় চট্টগ্রাম। তবে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে দলের হাল ধরেন ওয়াল্টন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১১৫ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। মিরাজ দেখে শুনে ব্যাট করলেও রানের গতি বাড়ানোর কাজটা করেন ওয়াল্টন।

রুয়েল মিয়ার করা ১৫তম ওভারে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২২ রান নেন ওয়াল্টন। আর থিসারা পেরেরার করা ১৯তম ওভারের প্রথম চার বল থেকেই তুলে নিয়েছিলেন ১৮ রান। তাতেই বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় দলটি। শেষ পাঁচ ওভারে ৮০ রান তুলে নেয় দলটি।

শেষ পর্যন্ত ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন ওয়াল্টন। ৪৪ বলের ইনিংসে ৭টি করে চার ও ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান এ ক্যারিবিয়ান। তাকে দারুণ সহায়তা করেছেন মিরাজ।  ৩৬ রান করেন মিরাজ। ৩০ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। এছাড়া লুইসের ব্যাট থেকে আসে ৩৯ রান।

খুলনার পক্ষে ৪০ রানের খরচায় ২টি উইকেট পান সৈয়দ খালেদ আহমেদ।

Comments

The Daily Star  | English

Chattogram’s garment factories fear fallout from US tariffs

Owners of Chattogram-based readymade garment factories, many of which do business with buyers in the United States, are worried about a US tariff hike to 35 percent set to take effect on August 1.

11h ago