ফেলে আসা তিক্ত সময়ই মুনিমকে করেছে ভয়ডরহীন

Munim Shahriar
বিপিএলে ঝলক দেখাচ্ছেন মুনিম শাহরিয়ার। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মুনিম শাহরিয়ার প্রথমবার আলোয় এসেছিলেন গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টি দিয়ে। লিটন দাসের চোটে আবাহনীর হয়ে সুযোগ পেয়ে চমকে দিয়েছিলেন ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। মন্থর উইকেটেও ৩৫৫ রান করেছিলেন ১৪৩.১৪ স্ট্রাইকরেটে। ওই পারফরম্যান্সের পরও এবার বিপিএলের ড্রাফট থেকে তাকে দলে নেয়নি কেউ। পরে ফরচুন বরিশালে সুযোগ পেয়ে ডানহাতি এই তরুণ দেখাচ্ছেন তার ভয়ডরহীন ব্যাটিং। ১৬৭.৫০ স্ট্রাইকরেট বলে দিচ্ছে পাওয়ার প্লে কতটা কার্যকর করে তুলেছেন তিনি। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে মুনিম জানালেন তার ফেলে আসা সময় আর আগামীর ভাবনা।

বিপিএলে নেমেই ঝলক দেখাচ্ছেন, নিজের পারফরম্যান্সে কতটা খুশি?

মুনিম শাহরিয়ার:  ক্রিকেটে আসলে হ্যাপি বলে কিছু নেই। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। হ্যাপিনেসটা ক্রিকেট ছাড়ার পরের জীবনের জন্য রেখে দিব। ক্রিকেটে জীবনে বেশি হ্যাপি হলে সমস্যা। এই আরকি। চালায়ে যাচ্ছি।

গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এত ভাল পারফর্ম করার পরও ড্রাফট দল না পেয়ে কেমন লেগেছিল?

মুনিম: কিছুটা হতাশ লেগেছিল একজন মানুষ হিসেবে। কিন্তু আমি এটা স্বাভাবিকভাবে নিয়েছি। আমি অভ্যস্ত এসবে, দুনিয়াতে কোন কিছু তো স্থায়ী না বা শিওর না। বাংলাদেশে তো আরও না। নরমালি নিয়েছি কিন্তু কিছুটা আপসেট হয়েছিলাম। পরে দল পেয়ে খুশি হয়েছি।

দল পাওয়ার পর তো ম্যাচ পেতে আরও অপেক্ষা

মুনিম: দল পাওয়ার পর আমি কোভিডে আক্রান্ত হই, সেরে উঠতে একটু সময় লেগেছে। আমি যেহেতু কোয়ারেন্টিনে ছিলাম। অনুশীলনে একটু সময় লেগেছে। আমার কোচরা যারা আছেন ফাহিম স্যার (নাজমুল আবেদিন), সুজন (খালেদ মাহমুদ) স্যার তারা আমাকে সাহায্য করেছেন নেটে। তাতে আমি নিজেকে প্রস্তুত করতে পেরেছি।

ক্রিজে নেমেই সাহস নিয়ে খেলেন, আপনার এই ভয়ডরহীন মানসিকতার পেছনের কি বিশেষ কোন ভাবনা কাজ করে?

মুনিম:  শুনেন আমি যে জীবন থেকে ফিরে এসেছি আমার আসলে হারানোর কিছু নাই। খারাপ হলেও আমার আগের জীবন থেকে তো খারাপ হওয়ার কিছু না। সেই জিনিসটা আমি এপ্লাই করতে চেয়েছি যা হওয়ার হবে। নিজের উপর চার্জ করা, জাস্ট খেলে যেতে চাই। ফল তো আমার হাতে নাই। পরে দেখা যাবে।

আগের লাইফের কি সংগ্রাম ছিল?

মুনিম: আগের লাইফ বলতে আমি সংগ্রাম করেছি আসলে নাইনটিন (অনূর্ধ্ব-১৯) খেলার পর অনেক দিন সিনে ছিলাম না। ২০১৬ সালে ছিলাম  তখন মিরাজ, সাইফুদ্দিনরা ছিল। এরপরে অনেকটা কষ্ট করতে হয়েছে। নাইনটিনে আমার ওরকম পারফর্ম ছিল না, তাই মূল স্রোতের বাইরে চলে গেছি। প্রিমিয়ার লিগগুলোতেও নিজেকে ওইভাবে মেলে ধরতে পারছিলাম না। একটা দুইটা সুযোগ আসত ওইভাবে কাজ করতে পারতাম না। মাঝেসাঝে কিছু ইনিংস খেলেছি কিন্তু ওরকম ভাবে আলোচনায় আসার মত ছিল না, ধারাবাহিকতা ছিল। সেসময় এমনিতেও আমার জীবনে নানা সমস্যা ছিল, তা প্যারা দিয়েছে আমাকে।

ঘুরে আসা তো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দিয়েই

মুনিম: হ্যাঁ গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পাই (আবাহনীতে) কারণ লিটন দাস দাদা ইনজুরড ছিল। আমার আসলে খেলার কথা ছিল না, দাদার চোটে সুযোগ পেয়ে মাঠে নামি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় লোকাল টুর্নামেন্টে আমি ভাল করতাম বরাবরই। নানা জায়গায় খ্যাপ খেলে বেড়াতাম।

নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে এখন চিন্তা কি, বিপিএলে পারফর্ম তো আলাদা কিছু নিশ্চয়ই

মুনিম: এটা তো উপরওয়ালার একটা ব্লেসিং। টিভিতে (পরিচিত) মানুষ দেখতে চাইত আমার খেলা। টিভিতে দেখাচ্ছে, মোটামুটি ভাল খেলছি। আশা রাখব যতদিন ক্রিকেট খেলি নিজের খেলাটা যেন খেলতে পারি।

টি-টোয়েন্টির ধরণ  অনুযায়ী অ্যাটাক করে খেলা কি সহজাত ছিল, না পরে আয়ত্ত করে নিয়েছেন?

মুনিম: আমার ছোট বেলায় ময়মনসিংহে আমার কোচ ছিলেন হায়াতুল ইসলাম হান্নান স্যার। উনি আমাকে অনুশীলনই করাতেন এভাবে। বলতেন, "বল এমনভাবে মারবি যেন ফিল্ডার হাত দিতে ভয় পায়।" আমি নিজেকে ওই মাপের পাওয়ার হিটার মনে করি না। চেষ্টা করি স্যারের কথাটা কাজে লাগাতে যে যত জোরে মারা যায়। সেখান থেকেই আমার মেন্টালিটি ওরকম তৈরি হয়ে গেছে। ওই জিনিসটা কাজ করে এখনো।

খালেদ মাহমুদ সুজন, নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মতো কোচ আছেন। তারা কি বলেন আপনাকে?

মুনিম: উনাদের মতো এরকম মানুষের সঙ্গে কাজ করে নিজেকে ধন্য মনে করি। উনাদের কাছ থেকে যেসব পরামর্শ পাই বাস্তবিক পরামর্শ। গৎবাঁধা কোন পরামর্শ না। উনারা আমাকে বলেছে ফ্রিডম নিয়ে খেলতে, আগে-পিছে দেখতে হবে না। এটা আত্মবিশ্বাসের জন্য অনেক কাজে দেয়। আর টেকনিক্যালি তো ভুল ধরিয়ে দেয়। অনেক কিছু ঠিক করে দেয়।

অধিনায়ক সাকিবের ফিডব্যাক কি?

মুনিম: সাকিব ভাই তো সাকিব ভাই। উনার ক্যাপ্টেন্সি তো সবাই জানে, বুঝে যে উনি কেমন মস্তিষ্কের মানুষ। উনার কাছ থেকে অনেক কিছু নেওয়ার চেষ্টা করি। ব্যাক্তিগতভাবে কথা হয়। আমাকে যতটুকু দেয়ার সেটা করেছেন। খেলার আগে উনি কিছু বলেন না, খেলার পর যদি কিছু সমস্যা থাকে ওটা নিয়ে বলেন। যথেষ্ট হেল্পফুল। সাহস দেন আমাকে।

জাতীয় দলের টপ অর্ডারে ঘাটতি আছে। কেউ কেউ এই জায়গায় আপনাকে বিকল্প ভাবছেন। আপনার নিজের ইচ্ছা বা স্বপ্ন কি?

মুনিম:  উপরওয়ালা হ্যাজ এ প্ল্যান ফর মি। আমি উনার উপর ছেড়ে দিছি। উনি যা করবেন আমার জন্য ভাল। জাতীয় দলে খেলি আর না খেলি ব্যপার না। যদি খেলি তাহলে ইচ্ছা থাকবে বাংলাদেশ দলে অনেকদিন খেলার। যা নাও হয় আমার কোন আক্ষেপ নাই। সবই উনার ইচ্ছা।

ক্রিস গেইলের সঙ্গে ওপেন করলেন। সেটার অনুভূতি কি। তাকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। গেইলের থেকেও বেশি মারেন

মুনিম:  গেইল যে কেমন প্লেয়ার সবাই জানি। ও থাকা মানে প্রতিপক্ষের একটা চাপ। এখন সেভাবে হয়ত হচ্ছে না উনার পারফরম্যান্স। আশা করছি আরও দুই ম্যাচে ভাল করবেন। আর গেইলের সঙ্গে ব্যাট করা তো বড় ব্যাপার। উনি আমার মায়ের প্রিয় খেলোয়াড়। আমার মা চিনেই গেইল আর মালিঙ্গাকে। গেইল আমাকে শুধু বলে 'এনজয় দ্য গেইম'।

Comments

The Daily Star  | English
consensus commission bicameral parliament proposal

Consensus commission: Talks stall over women’s seats, upper house

The National Consensus Commission proposed establishing an upper house comprising elected representatives from each district and city corporation, and suggested abolishing the current system of reserved seats for women in parliament.

4h ago