প্রিন্সের দায়িত্ব ছাড়ার পর ডমিঙ্গোর ফেরা নিয়েও অনিশ্চয়তা
আগামী সপ্তাহেই সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসবে আফগানিস্তান। বিপিএলের পর পরই আফগান সিরিজ নিয়ে যেখানে মন দেয়ার কথা, কিন্তু সেখানে বাংলাদেশ দলকে কিনা ভাবতে হচ্ছে কোন কোন কোচ এই সিরিজে দলের সঙ্গে থাকবেন তা নিয়ে! বুধবার ই-মেইল পাঠিয়ে পদত্যাগ করেছেন ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স। তার দায়িত্ব ছাড়ার পর গুঞ্জন তৈরি হয়েছে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ছুটি কাটিয়ে ফিরবেন তো? ডমিঙ্গো নিজেও যে তার ফেরা নিয়ে করছেন রহস্য, যাতে বাড়ছে অনিশ্চয়তা।
জানুয়ারি মাসে নিউজিল্যান্ড সফর শেষ করে ছুটিতে নিজ নিজ দেশে যান কোচরা। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিপিএলে। ছুটি কাটিয়ে আফগানিস্তান সিরিজ উপলক্ষে ১৯ ফেব্রুয়ারি কাজে ফেরার কথা ছিল তাদের। সে অনুযায়ী এয়ার টিকেটও কাটা আছে। প্রিন্স যে ফিরছেন না সেটা এরমধ্যেই চূড়ান্ত। চুক্তির মেয়াদের অনেক আগেই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করায় তার ফেরার কোন কারণও আর নেই।
কবে বাংলাদেশে ফিরছেন জানতে চাওয়া হলে ডমিঙ্গো দ্য ডেইলি স্টারকে ছোট কথায় জবাব দিয়েছেন , 'নিশ্চিত না'। প্রিন্সের চাকরি ছাড়ার খবর জানতে চাইলে বলেছেন, তিনি এই ব্যাপারে অবগত আছেন কিন্তু এই নিয়ে কোন মন্তব্য করবেন না। আফগানিস্তান সিরিজ দোয়ারে কড়া নাড়ছে, ফেরা নিয়ে এখনো নিশ্চিত না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তার উত্তর, 'দুঃখিত, আমি এখন গণমাধ্যমে কোন সাক্ষাতকার দিব না।'
প্রধান কোচ হিসেবে আফগান সিরিজ নিয়ে পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা ক্রিকেটারদের বিপিএল পারফরম্যান্স। কিন্তু বিপিএলও খুব একটা অনুসরণ করছেন না তিনি। ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, 'খুব সামান্য দেখছি।'
যদিও ডমিঙ্গোর ফেরা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোন নেতিবাচক কিছু দেখছেন না ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনূস। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'ডমিঙ্গো আমাদের প্রধান কোচ হিসেবে আছে। আমরা প্রত্যাশা করছি আফগানিস্তান সিরিজের আগে সে যথাসময়েই বাংলাদেশে আসবে।'
বিসিবি সূত্রে জানা যায়, ডমিঙ্গোর পরামর্শেই গত জিম্বাবুয়ে সফরের সময় প্রিন্সকে ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল বিসিবি। প্রিন্সের সঙ্গে ডমিঙ্গোর রসায়নও মজবুত। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাড়ানো হয় এই কোচের চুক্তির মেয়াদ। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত তার সঙ্গে ছিল বিসিবির চুক্তি। কিন্তু সাত মাস আগেই পদ ছেড়ে দিলেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান।
প্রিন্স থাকার পরও ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে জাতীয় দলের সাবেক কোচ জেমি সিডন্সকে নিয়োগ দেয় বিসিবি। প্রিন্স ও সিডন্সের কাজের জায়গা নিয়ে তৈরি হয় অস্পষ্টতা। কাজে যোগ দিয়ে সিডন্স বাংলাদেশে আসার পরও সেই অস্পষ্টতা দূর করতে পারেনি বিসিবি। ধারণা করা হচ্ছে, একই পদে আরেকজন নিয়োগ দেওয়ার পর তৈরি হওয়া অস্বস্তি আর ধোয়াশাপূর্ণ পরিস্থিতি দেখেই মূলত সরে গেছেন প্রিন্স।
প্রধান কোচ হিসেবে এক যুগ আগে জাতীয় দলে কাজ করা সিডন্সের সঙ্গে ডমিঙ্গোর রসায়ন কতটা জমবে তা নিয়েও আছে সংশয়। কারণ ডমিঙ্গোর কাছেও সিডন্সের ভূমিকা স্পষ্ট করেনি বিসিবি। ডমিঙ্গোর সঙ্গে বিসিবির নীতি নির্ধারকদের কারো কারো শীতল সম্পর্কের কথাও আগে গণমাধ্যমে এসেছে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের ভরাডুবির পর এই কোচের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন বোর্ড পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজ থেকেই বিসিবি সুজনকে দলের টিম ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়। ডমিঙ্গো প্রধান কোচ হলেও তার উপরে ক্ষমতা দিয়ে দলের সঙ্গে যুক্ত করা হয় এই প্রভাবশালী বোর্ড পরিচালককে।
এমনিতে বিসিবির সঙ্গে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তি আছে ডমিঙ্গোর। কিন্তু বিশ্বকাপের বেহাল দশার পর তার পদ নিয়ে তৈরি হয় সমালোচনা। জানুয়ারি মাসেই এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আভাস দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তবে এই মাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ঐতিহাসিক এক জয় পাওয়ার পর ডমিঙ্গো কেন্দ্রিক সমালোচনা কিছুটা নেতিয়ে এসেছিল। এবার প্রিন্সের পদত্যাগের পর তার ছুটি কাটিয়ে ফেরা নিয়ে তৈরি হলো দোলাচল। শেষ পর্যন্ত বিসিবির কাছ থেকে কাজের পরিধি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা আর নিশ্চয়তা পেলেই হয়ত ফিরবেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান। ফিরে এলেও সব রকম দূরত্ব কাটানো, সিডন্সের সঙ্গে বোঝাপড়ার উপর নির্ভর করছে তার তার বাংলাদেশের সঙ্গে আগামীর পথ চলা।
Comments