জমজমাট সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা

ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

প্রতি বছর সরস্বতী পূজা এলেই সিরাজগঞ্জে শুরু হয় দই মেলার আয়োজন। প্রতি বছরের মতো এবারও বসেছে দই মেলা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবং বৈরি আবহাওয়ায় প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো এই মেলার আয়োজনে কিছুটা ভাটা পড়লেও পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতেই ঐতিহ্যবাহী দই মেলা জমে উঠেছে।

সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কুমার গোস্বামী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '১৮শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তৎকালীন জমিদারী আমলে জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলায় প্রথম দই মেলার আয়োজনকে অনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন।'

তবে, এর আগে থেকেই মাঘ মাসের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত হতে ঘোষরা দইয়ের পসরা সাজিয়ে মেলার আসতেন বলে জানা যায়।

জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর এই মেলা আসা ভালো দইওয়ালা ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করার রেওয়াজ চালু করেন। তবে জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া দইয়ের মেলা এখনও মাঘ মাসের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসলেও ভালো ঘোষকে পুরস্কার দেওয়ার নিয়মটি আর নেই।

কালের বিবর্তনে তারাশের দই মেলা এখন সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেল থেকেই শত বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলার রসিক রায় মন্দির সংলগ্ন ইদগাহ মাঠে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা শুরু হয়েছে।

এতে শহরের সকল ধর্মালম্বীর দই প্রেমী মানুষ দই কেনার জন্য ভীড় জমিয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ শহর পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হীরক গুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খাঁটি দুধের সম্ভার খ্যাত সিরাজগঞ্জবাসী প্রাচীন আমল হতেই রসনা বিলাসী আর অতিথি পরায়ণ। দই মেলাটি জেলার আদি ঐতিহ্যের অংশ।'

সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হলেও এখানে হিন্দু মুসলিম সব শ্রেনি পেশার মানুষ আসেন। দই মেলা এখন এ অঞ্চলের প্রাণের মেলায় রুপ নিয়েছে বলে জানান তিনি।

মেলা উপলক্ষে শুক্রবার বিকেল থেকেই শহরের মুজিব সড়কজুড়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত হতে ঘোষরা হরেক রকমের বাহারি মাটির হাড়িতে তাদের উৎপাদিত প্রসিদ্ধ দই নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন।

সিরাজগঞ্জের দই প্রস্তুতকারি হরিতোশ ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক জন দই প্রস্তুতকারি হিসেবে প্রতি বছর আমি এ মেলার জন্য অপেক্ষা করি। কারণ এখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ আসে দই কিনতে।'

মেলায় দই বিক্রি করা শুধু লাভের জন্য নয় বরং ঐতিহ্যকে ধারণ করার জন্য এ মেলায় অংশ নিতে আসেন বলে জানান তিনি।

স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী রাজাপুর, এনায়েতপুর, বেলকুচিসহ বগুড়ার শেরপুর এলাকার হরেক রকম দই এ মেলায় পাওয়া যায়। এবারই প্রথমবারের মতো মেলায় নানা রকম মাটির হাড়িসহ প্লাষ্টিকের পাত্রেও দই এসেছে।

মেলায় বিভিন্ন স্বাদের দই ভিন্ন ভিন্ন দামে বেচাকেনা হয়। মেলায় আসা একেক অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। মেলায় জনপ্রিয় দইয়ের মধ্যে রয়েছে ক্ষীর খাসা, চন্দনচুর, খাসা, শাহী দই, টক দই ইত্যাদি।

Comments

The Daily Star  | English

Wrap up polls preparations by December

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday ordered the authorities concerned to complete, by December, the preparations for the upcoming national election.

6h ago