আমরা কি অসংশোধনীয় দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছি?

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচকের (সিপিআই) সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। বছরের এ সময়ে প্রকাশনাটির বিষয় যতটা অনুমানযোগ্য, একইভাবে বৈশ্বিক দুর্নীতি পর্যবেক্ষক সংস্থার এই বার্ষিক উদ্যোগে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স সমানভাবে অনুমানযোগ্য হয়ে উঠেছে। যা আমাদের ব্যথিত করে।

২০২১ সালের সংস্করণে বাংলাদেশ আবারও ১০০-এর মধ্যে ২৬ স্কোর করেছে—যা ২০২০, ২০১৯ ও ২০১৮ সালের মতোই। আবারও আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্তদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে, শুধু আফগানিস্তানের ওপরে এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে নিচের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছি। প্রকৃতপক্ষে, ১০ বছরের দুর্নীতির ধারণা সূচক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে একই স্কোরের আশেপাশে স্থবির হয়ে আছে। যার অর্থ সরকার ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও প্রকৃত অগ্রগতি হয়নি।

যেহেতু সিপিআই সরকারি ক্ষেত্রের দুর্নীতির 'প্রত্যক্ষ' মাত্রা পরিমাপ করে। তাই আমরা খুব শিগগিরই এই লজ্জার তকমাটিকে বিতর্কিত করে সরকারের পক্ষ থেকে একটি দৃঢ় প্রত্যাখ্যান দেখতে পাব। এটা সত্য যে, দুর্নীতি পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন আছে।

কিন্তু, আমরা ইতোমধ্যে যেটিকে সত্য বলে জানি, তা পুনর্নিশ্চিত করার জন্য টিআই-এর প্রয়োজন নেই। দুর্নীতি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। টিআই তার মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রের নাম উল্লেখ করেছে— ঘুষ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত লাভের জন্য সরকারি অফিসের ব্যবহার, সরকারি তহবিলের অপসারণ, সরকারি খাতের নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ কৌশল অবলম্বন। আমরা বারবার দেখেছি, জনপ্রতিনিধিসহ কর্মকর্তাদের একটি অংশ এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কীভাবে তাদের যোগাযোগ এবং দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে এবং কীভাবে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, দুর্নীতির সর্বাঙ্গীণ প্রকৃতির অর্থ হল এই যে, সরকারি খাতের অতিরিক্ত দুর্নীতির প্রভাব বেসরকারি খাতে অগ্রগতির সম্ভাবনাকেও নষ্ট করেছে।
 
ফলে দুর্নীতি জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠেছে। আমরা এর থেকে বের হতে পারছি না। যেহেতু সিস্টেমটি বাঁকা পথে চলে গেছে, তাই আমরা এটা ছাড়া বাঁচতে পারি না। টিআই-এর বাংলাদেশ অংশের প্রধানের মতে, দুর্নীতির জন্য 'শূন্য-সহনশীলতার' প্রতিশ্রুতি না দেওয়ার একটি মূল কারণ হলো, রাজনীতি, অর্থ এবং দুর্নীতির মধ্যে অন্তর্নিহিত যোগসূত্র। যা জনসাধারণের স্বার্থে তাদের সিদ্ধান্ত এবং কর্মকে বিযুক্ত করছে।

তিনি বলেন, 'আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দৃষ্টান্ত পরিবর্তন না করে জনস্বার্থকে সর্বাগ্রে রেখে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাকে ক্ষমতার অপব্যবহারের লাইসেন্স হিসাবে বিবেচনা করার অনুশীলনকে প্রতিস্থাপন করা ছাড়া দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা এর বেশি একমত হতে পারি না।

এই দৃশ্যপটে পরিবর্তন আনতে হলে, রাজনীতি, অর্থ এবং অপরাধের প্রভাব থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দূরে রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একটি রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের কঠোর সংস্কারের প্রয়োজন। দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দিতে হবে। সেখানে স্বার্থের সংঘাতকে স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করার জন্য, জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অরাজনৈতিককরণ এবং পেশাগত সততা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার জন্য আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত। যার মধ্যে পাবলিক সার্ভিস, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থাকবে। আমরা অতীতের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না এবং দেশের জনগণের কষ্টার্জিত অর্জনগুলোকে দুর্নীতিগ্রস্ত উপাদানগুলোর মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যেতে দিতে পারি না।
 

Comments

The Daily Star  | English

Israel strikes Iran military targets

Israel said it struck military sites in Iran early on Saturday in retaliation for Tehran's attacks on Israel earlier this month, the latest step in the escalating conflict between the heavily armed rivals

1h ago