সংকটাপন্ন ‘চিতা বিড়াল’ হত্যার পর এলাকাবাসীর উল্লাস, বনবিভাগের মামলা
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কাচুয়া এলাকায় সংকটাপন্ন একটি চিতা বিড়ালকে পিটিয়ে হত্যার পর মিছিল করে উল্লাস করেছেন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। জানা গেছে, 'বাঘ' মনে করে বিড়ালটিকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন তারা।
এ ঘটনায় আজ রাত ৭টায় বনবিভাগ একটি মামলা করেছে।
সাতছড়ি বিটের বিট অফিসার মাজহারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ সকাল ১১টার দিকে কাচুয়া গ্রামে আলু ক্ষেতের জালে সংকটাপন্ন চিতা বিড়ালটি আটকে পড়ে। তখনই 'বাঘ বাঘ' বলে চিৎকার শুরু করেন লোকজন। এক পর্যায়ে আশপাশের এলাকার লোকজন লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে চিতা বিড়ালকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। পরে বেড়ালের মরদেহ নিয়ে পাশের গ্রামে পর্যন্ত মিছিলও করেছেন তারা। বিকেলে তারা বিড়ালটির মরদেহ কবরস্থানে ফেলে চলে যায়।
তিনি বলেন, 'আমার অফিস থেকে কবরস্থানের দুরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। আমি সেখানে পৌঁছে বিড়ালটিকে মৃত অবস্থায় পাই।'
এ ঘটনায় রুবেল মিয়া ও কাসেম নামে ২ যুবক ও কয়েকশ অঞ্জাতনামাকে আসামি করে বন্যপ্রাণী হত্যা আইনে মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রুবেল মিয়া সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় আব্দুল মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ৫০ বছর বয়সেও আমি এই এলাকায় বাঘ দেখিনি। শুনেছি, হঠাৎ ধান ক্ষেতে বাঘ দেখে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। আমি অনেককে বলেছি এটা বাঘ না। তাও তারা বিড়ালটিকে পিটিয়েছে। চিতা বিড়ালটি মারা ঠিক হয়নি।'
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেট অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই প্রাণীটির নাম 'চিতা বিড়াল'। আকারে ছোট ও প্রায় পোষা বিড়ালের মতোই একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইংরেজি নাম 'লিওপার্ট কেট' (Leopard cat)) এবং বৈজ্ঞানিক নাম 'প্রিওনাইলুরুস ব্যাঙ্গালেন্সিস' (Prionailurus bengalensis)। প্রাণীটির উচ্চতা ২ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং ওজন ৩ কেজি ৫০০ গ্রাম। এই প্রজাতির 'চিতা বিড়াল' বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকার তফসিল-১ অনুযায়ী সংরক্ষিত।
তিনি বলেন, 'একটি সংকটাপন্ন প্রাণীকে নিয়ে যদি এভাবে মিছিল উল্লাস করা হয় তাহলে এসব প্রাণী একদিন বিলীন হয়ে যাবে।'
Comments