অস্ত্রোপচার করলেন নার্স, ক্লিনিকের চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ফরিদপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় নবজাতকের মাথার বাম পাশের কিছু অংশ কেটে যাওয়ার ঘটনায় ক্লিনিকের চেয়ারম্যান, ২ পরিচালকসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।

গত শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লার আল মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসকের বদলে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর অস্ত্রোপচার করেছেন নন-ডিপ্লেমা নার্স। অস্ত্রোপচারের সময় নবজাতকের মাথার বাম পাশের কিছু অংশ কেটে গেছে। শিশুটির মাথায় ৯টি সেলাই লেগেছে।

এ ঘটনায় শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই শিশুটির বাবা শফিক খান বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মামলা করেছেন।

মামলার তথ্য নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, 'এ মামলায় মদিনা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান রহিমা রহমান, তার ২ ছেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকারিয়া মোল্লা ওরফে পলাশ, পরিচালক মো. আল হেলাল মোল্লা ওরফে টগর এবং ওই হাসপাতালের আয়া চায়না বেগমকে আসামি করা হয়েছে।

গত শনিবার চায়না বেগমকে ওই ক্লিনিকের জ্যেষ্ঠ নার্স হিসেবে দাবি করা হয়। কিন্তু পরে পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসে চায়না বেগম স্টাফ নার্স নয়, তিনি এক জন আয়া। তবে ধাত্রি বিদ্যার বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল গফফার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ মামলার আসামি হিসেবে মো. জাকারিয়া মোল্লা, মো. আল হেলাল ও চায়না বেগমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে গতকাল রোববার বিকেলে জেলার মুখ্য বিচারিক আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত আগামীকাল সোমবার রিমান্ডের শুনানির দিন ধার্য করে ওই ৩ জনকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।'

অস্ত্রোপচারের সময় মাথায় চোট পাওয়া? মেয়ে শিশুটি বর্তমানে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ তলায় একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

শিশুটির ফুপু হোসনে আরা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিশুটি সুস্থ আছে। চিকিৎসকও বলেছেন শিশুটির কোনো সমস্যা নেই। তবে মা অসুস্থ। তিনি গত রাতে ৩ বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।'

কর্তব্যরত নার্স ঝিনু আক্তার জানান, শিশুটির ওজন দুই কেজি। রাতে শিশুটিকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন সুস্থ আছে।

 

৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি

এ ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে এডিএম মো. লিটন আলীকে। অপর ৩ সদস্য হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, সদরের ইউএনও মো. মাসুদুল আলম, সদরের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাতেমা করিম।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের এনডিসি (ডেপুটি কালেকটর নেজারত) মো. আশীকুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আজ রোববার কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই ক্লিনিকটি ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদনের অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

জানা গেছে, মদিনা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়গনিস্টিক সেন্টার শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীত দিকে ঢাকা-বরিশাল মহা সড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। এ হাসপাতালটি স্থাপিত হয় ২০০৭ সালে। গত ২০১৫ সাল থেকে এ হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

14 arrested over attacks, clashes in Gopalganj

At least 14 people have been arrested so far in connection with yesterday’s attack on NCP rally and subsequent clashes with law enforcers

13m ago