২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৮৫৩ জনের মৃত্যু: জরিপ

নিরাপত্তা সমীক্ষায় পরিদর্শন প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করার সুপারিশ
হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় আগুন লেগে ৫১ জন শ্রমিক নিহত হন। ছবি: স্টার

গত বছর কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৮৫৩ জন নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন আরও ২৩৬ জন।

বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ওশি) এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংস্থাটি সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য পরিদর্শন প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছে।

গতকাল প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ওশি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৭৯২ জন অনানুষ্ঠানিক খাতে আর ২৯৭ জন আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ছিলেন। 

আনুষ্ঠানিক খাতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭১, অনানুষ্ঠানিক খাতে ৬৮২।

এই প্রতিবেদন তৈরিতে সূত্র হিসেবে ১৫টি জাতীয় পত্রিকা ও ৭টি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবর এবং সংস্থার কর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।

ওশি ফাউন্ডেশনের বার্ষিক তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৮ হাজার ৬৫৯ জন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৭২১ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে।

ওশি জানতে পেরেছে, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে মৃত্যুর সংখ্যা ২০২০ সালে ৮ থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ১৬ হয়েছে। আহতের সংখ্যাও ২০২০ সালে ৪ জন থেকে বেড়ে ২০২১ এ ২৯ জন হয়েছে।

গত বছর উৎপাদন খাতের ১১৬ জন কর্মী নিহত হন। খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ, ইস্পাত কারখানা, চাল ও কাগজকল, ইটের ভাঁটা ও চামড়া শিল্প এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। নির্মাণ শিল্প, কৃষি ও তৈরি পোশাক খাতে মারা গেছেন যথাক্রমে ১২৩, ৯৫ ও ২৭ জন।

বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর পেছনে মূল কারণ হিসেবে সংস্থাটি কর্মীদের অধিকার নিশ্চিতকরণে ব্যর্থতা, দুর্বল আইনি অবকাঠামো ও পরিদর্শন প্রক্রিয়া এবং দ্রুত বিচারের স্বল্পতাকে চিহ্নিত করেছে।

অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে কারখানা ও অন্যান্য স্থাপনায় অকার্যকর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কমিটি অথবা এ ধরনের কোনো কমিটি না থাকা এবং কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত সেবা, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ না থাকা।  

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কর্মীদের নিরাপত্তার অভাব একটি দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা সমস্যা।

২০১৩ সালে রানা প্লাজায় সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ের দুর্ঘটনায় প্রায় ১ হাজার ১০০ মানুষের প্রাণহানি হওয়ার পর সরকার শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধন করে। তৈরি পোশাক খাতে পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু অন্যান্য খাতে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং অসংখ্য কর্মী মারাও যাচ্ছেন।

করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় বছরে অনেক কর্মী চাকুরীচ্যুতি ও বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধের কারণে প্রায় ৫ মাস (এপ্রিল থেকে আগস্ট) কাজ করতে পারেনি বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

গত বছরের ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত হাসেম ফুডস এর কারখানায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৫৪ জন মারা যান, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এর আগে হাসেম ফুডস এর কারখানার আগুনের ঘটনাকে 'কাঠামোগত' হত্যাকাণ্ড বলে জানিয়েছে নাগরিক তদন্ত কমিটি।

ওশি ফাউন্ডেশন জানায়, 'কর্মীরা দালানের ভেতরে আটকা পড়েছিল, কারণ সেখান থেকে বের হওয়ার একমাত্র দরজাটি তালাবন্ধ ছিল। কর্মীদের জোরপূর্বক কারখানার ভেতর আটকে রাখার অবৈধ প্রক্রিয়ার কারণেই এই ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে। এই বড় আকারের দুর্ঘটনা থেকে আবারও নিরাপত্তা পরিস্থিতির করুণ মানদণ্ড সবার সামনে উন্মোচিত হয়েছে।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English

Govt at it again, plans to promote retirees

"A list of around 400 retired officials is currently under review though it remains unclear how many of them will eventually be promoted"

10h ago