প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতীক কাশেম সোলাইমানি

ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ইরানি চলচ্চিত্র 'সেভেন্টি টু আওয়ারস' তৈরি হয়েছে দেশটির সাবেক শীর্ষ জেনারেল কাশেম সোলাইমানির জীবনের শেষ ৩ দিনের ঘটনা নিয়ে। এ ক্ষেত্রে বলিউডের 'সেভেন্টি টু আওয়ারস: মার্টায়ার হু নেভার ডায়েড' বা হলিউডের 'ওয়ান হান্ড্রেড টুয়েন্টি সেভেন আওয়ারস'র কথা অনেকের মনে পড়তে পারে। কাহিনী ভিন্ন হলেও ছবিগুলোর মর্মকথা একই—অর্থাৎ, গল্পের নায়কের বীরত্বগাথা।

কাশেম সোলাইমানির স্মরণে বাগদাদে সমাবেশ। ছবি: এপি

ইরানিদের জাতীয় জীবনে বীরের তালিকা দীর্ঘ। প্রাচীন ইরানের বীর রুস্তমের গল্প অনেকেরই জানা। তবে আধুনিক ইরানে, বিশেষ করে দেশটির ইসলামি বিপ্লব পরবর্তী ইতিহাসে কাশেম সোলাইমানি এক 'প্রেরণা'র নাম। অনেকের কাছেই তিনি 'প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতীক'।

তেহরানে কাশেম সোলাইমানির ছবি হাতে। ছবি: এপি ফাইল ফটো

২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ভোরে বিশ্ববাসী জানতে পারে যে ইরানের সবচেয়ে জনপ্রিয় জেনারেল ও দেশটির বিপ্লবী বাহিনীর কুদস ফোর্স'র কমান্ডার কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে।

লাহোরে কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ। ছবি: এপি ফাইল ফটো

যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা চালিয়ে সোলাইমানি ও তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স'র উপপ্রধান আবু মাহদি আল-মুহানদিসকে হত্যা করা হয়।

শ্রীনগরে কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ। ছবি: এপি ফাইল ফটো

তেহরান টাইমস'র প্রতিবেদনে বলা হয়, সোলাইমানি সে রাতে প্রতিবেশী সিরিয়া থেকে বাগদাদে এলে আল-মুহানদিস তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান। কুশল বিনিময়ের পর তারা বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। সেসময় বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তাদের গাড়িতে আঘাত হানে।

সুলাইমানির দাফন অনুষ্ঠানে লাখো জনতার জমায়েত দেখে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছিলেন, 'বাস্তবতা দেখে মনে হচ্ছে, হাজি সোলাইমানি এ জাতির সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন এবং আছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এই অঞ্চলে সোলাইমানি আশার আলো, আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতার প্রতীক। তিনি প্রতিরোধ ও বিজয়ের জ্বলন্ত উদাহরণ।'

সোলাইনামির হত্যার ২ বছর পর গত শনিবার তার পরিবারের সদস্যদের আলি খামেনি বলেন, 'শত্রুরা ভেবেছিল সোলাইমানি, আবু মাহদি ও তাদের সঙ্গীদের হত্যা করে তারা সফল হয়েছে। কিন্তু, আজ দেখা যাচ্ছে সোলাইমানির রক্তের বদৌলতে যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তান থেকে পালাতে হয়েছে। ইরাক থেকেও তারা পালানোর পথ খুঁজছে। ইয়েমেনে প্রতিরাধ যোদ্ধারা এগিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ায় শত্রুরা কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না।'

খামেনি মনে করেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন গত ২ বছরের তুলনায় এখন আরও বেশি সমৃদ্ধ, প্রাণবন্ত ও প্রতিশ্রুতিশীল।' তার মতে, 'শহীদ সোলাইমানি অমর। তার হত্যাকারী ট্রাম্প ও অন্যরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিপতিত হবেন।'

গত শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ ইব্রাহিম রাইসি তেহরানে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতায় সোলাইমানিকে 'ধর্মের রক্ষক' হিসেবে অভিহিত করেন।

সে অনুষ্ঠান শেষে কুদস ফোর্স'র উপপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা ফালাহজাদেহ সংবাদমাধ্যম আল-আহাদ নিউজকে বলেন, 'সোলাইমানিকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিরোধ আন্দোলনের আগুন নিভিয়ে দেওয়া, এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি বদলে দেওয়া। কিন্তু, তাদের সেই ইচ্ছা কোনদিনই পূরণ হবে না।'

গতকাল রোববার ইরানের প্রেস টিভিকে সাক্ষাৎকারে মার্কিন লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক কেভিন ব্যারেট বলেন, 'কাশেম সোলাইমানির আদর্শ জনগণকে অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রেরণা দিয়ে যাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'সোলাইমানির মৃত্যু শুধু ইরানি জাতিকে সমুন্নত করেনি, এটি এই অঞ্চল ও এর বাইরে জায়নবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।'

ব্যারেট মনে করেন, 'পশ্চিমের নেতারা সশস্ত্র গোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে সোলাইমানির ঐতিহাসিক বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি। কেননা, পশ্চিমের নেতাদের ছত্রছায়াতেই সন্ত্রাসীরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।'

সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের প্রতি ইরানের আহ্বান বিষয়ে বিশ্লেষক ব্যারেট বলেন, '২০২০ সালের জুলাইয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডবিষয়ক জাতিসংঘের র‌্যাপোটিয়ার বলেন, এই হত্যা বেআইনি ও জাতিসংঘের চার্টারের লঙ্ঘন। তাই সাধারণ পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবটি পাস না হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখি না।'

তবে তিনি মনে করেন, 'যুক্তরাষ্ট্র এই নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে জাতিসংঘের সদস্যদের ওপর চাপ দেবে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যে অন্যায় আচরণ করে যাচ্ছে সে কথা অন্যরা জানুক তা বাইডেন প্রশাসনও চায় না।'

সরকারিভাবে দেশগুলোর অবস্থান যাই হোক না কেন মধ্যপ্রাচ্যসহ দেশে দেশে সাধারণ মানুষের কাছে কাশেম সোলাইমানি 'প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতীক' হয়ে থাকবেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কেননা, তিনি প্রতিরোধের বার্তা নিয়ে গিয়েছিলেন আফগানিস্তান থেকে বসনিয়া পর্যন্ত।

Comments

The Daily Star  | English

Has IMF experiment delivered?

Two years after Bangladesh turned to the International Monetary Fund (IMF) for a $4.7 billion bailout to address its worsening macroeconomic pressures, the nation stands at a crossroads.

7h ago