এমভি অভিযান-১০ লঞ্চ ট্র্যাজেডি

৩ সন্তান হারিয়ে নিঃস্ব মা

ছবি: সংগৃহীত

৬ বছরের মাহিনুর আর ৮ বছরের তামিমকে নিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে উঠেছিলেন ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা জিয়াসমিন আক্তার (২৮)। কিন্তু, আগুনের সেই বীভৎসতায় একে একে হারিয়েছেন গর্ভের সন্তানসহ ৩ সন্তানকেই। নিজে লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে।

নানির মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে বাবার বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে এসেছিলেন। ২৩ ডিসেম্বর ফিরছিলেন বরগুনায়। গভীর রাতে মাঝ নদীতে লঞ্চে আগুন লাগে।

নিজের শারীরিক অবস্থা আর ২ শিশুকে নিয়ে নিরুপায় হয়ে শেষ সময় পর্যন্ত লঞ্চটিতেই থাকতে হয় জিয়াসমিনকে। যখন পাড়ের কাছাকাছি পৌঁছায় লঞ্চটি তখন ৩ জনের শরীরেই আগুন। এই অবস্থায় বাঁচার জন্য লঞ্চ থেকে ২ সন্তান নিয়ে লাফিয়ে পড়েন জিয়াসমিন।

শুরুতে ঝালকাঠি হাসপাতাল, পরবর্তীতে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয় মা ও ২ শিশুকে। সিদ্ধান্ত হয় ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনার। ঢাকা আসার পথে মাওয়া ঘাটে পৌঁছানোর পর অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় ৬ বছর বয়সী মাহিনুর।

শরীরের ১২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে জিয়াসমিনের। পুড়ে গেছে শ্বাসনালী। ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা জিয়াসমিনের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে পরদিনই ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। তবুও বাঁচানো যায়নি গর্ভের সন্তানকে।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ছেলে তামিমকেও হারিয়ে নিঃস্ব জিয়াসমিন।

বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইয়ুব হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তামিমের শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তার শ্বাসনালী পুড়ে গিয়েছিল। প্রথম থেকে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখানেই আজ সন্ধ্যায় সে মারা যায়।'

জিয়াসমিনের মামা মনির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জিয়াসমিনের স্বামী খলিলুর রহমানের বরগুনা বাজারে ছোট দোকান আছে। ১০-১২ দিন আগে নানির মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে জিয়াসমিন তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে কেরানীগঞ্জ আসে। স্বামী খলিলুর সেসময় দোকান ফেলে আসতে পারেননি।'

তিনি আরও বলেন, 'সাঁতার জানা সত্ত্বেও ছোট ২ সন্তান ও গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে লঞ্চ থেকে নামতে পারেনি জিয়াসমিন। শেষ সময় পর্যন্ত লঞ্চে থাকায় তাদের আগুনে পুড়তে হয়েছে।'

মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে লঞ্চ থেকে ২ সন্তানকে নিয়ে বেঁচে ফেরা এই মা এখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। জানেন না তার সন্তানেরা আর নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Fire service & civil defence: High-risk job, low pay

Despite risking their lives constantly in the line of duty, firefighters are deprived of the pay enjoyed by employees of other departments, an analysis of their organograms shows.

7h ago