আমার ক্ষমতা সীমিত: রাষ্ট্রপতি

President Md Abdul Hamid
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: বাসস

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বরাত দিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেতারা জানিয়েছেন, যদিও তিনি (রাষ্ট্রপতি) চান সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হোক, কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী এ বিষয়ে তার ক্ষমতা সীমিত।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল ন্যাপের ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল গতকাল রোববার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ১ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে অংশ নেয়। সে বৈঠকের বিস্তারিত তারা জানিয়েছেন দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

রাষ্ট্রপতি সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপে বসছেন। সেই সংলাপের অংশ হিসেবে ন্যাপের সঙ্গে তিনি গতকাল বৈঠক করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'আমরা রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি, সার্চ কমিটি নিয়ে আগের অভিজ্ঞতা ভালো ছিল না। সার্চ কমিটির (সুপারিশের) মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে পারেনি। তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে পারেনি।'

দলের একাধিক নেতা জানান, এই মন্তব্যের উত্তরে রাষ্ট্রপতি জানান তিনি তাদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করছেন। তবে সংবিধানের আলোকে তিনি তার সীমাবদ্ধতার কথাও জানান।

রাষ্ট্রপতির উদ্ধৃতি দিয়ে ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি আইভি আহমেদ জানান, 'আপনারা আমার ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন। আমি এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে আপনাদের দাবিকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।'

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আইভি এসব তথ্য দেন।

ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন জানান, তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সার্চ কমিটি নিয়ে আলোচনা করেননি এবং সদস্য হিসেবে কারও নামও প্রস্তাব করেননি।

উল্লেখ্য, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে সম্ভাব্য সদস্যদের নাম প্রস্তাব করেছে।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, 'বরং আমরা পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংবিধান অনুযায়ী একটি আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছি।'

রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে দলটি বলেছে, 'প্রতিটি নির্বাচনে কালো টাকা, পেশীশক্তি ও অস্ত্রের ব্যবহার ও জোরপূর্বক ভোটকেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটছে এবং নির্বাচন কমিশন এগুলো প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে।'

ন্যাপ নেতারা তাদের বক্তব্যে আরও জানান, এসব ঘটনাকে আমলে না নিয়ে সরকার এখনো সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে কথা বলছে।

তারা বলেন, 'কিন্তু আমরা আগে সার্চ কমিটির মাধ্যমে অতীতে যে ধরনের নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল, সেরকম কমিশন চাই না।'

তাদের বক্তব্যে আরও বলা হয়, ন্যাপ অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য একটি যোগ্য, সৎ, কর্তব্যপরায়ণ এবং দায়বদ্ধ নির্বাচন কমিশন চায়। অন্যথায় গণতন্ত্র অর্থহীন হয়ে যাবে এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে না।

ন্যাপ আরও জানায়, আইন করে ইলেকশন কমিশন গঠন করলে এ বিষয়ে কারও কোনো কথা বলার সুযোগ থাকবে না এবং তুলনামূলক বিচারে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে।

প্রভাবমুক্ত থেকে জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি, যোগ করে দলটি।

বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি জানান, নির্বাচন কমিশন গঠন একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। এ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলকেও (বাসদ) গতকাল বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে দলটি এ ধরনের সংলাপ অর্থহীন উল্লেখ করে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

বঙ্গভবনের প্রেস উইং সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও খেলাফত মজলিশ আজ সোমবার যথাক্রমে বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায় সংলাপে অংশ নেবে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments