‘স্ত্রী সাঁতার জানতেন না, এরপরও দুজনের বেঁচে ফেরাটা স্বপ্নের মতো লাগছে’
বরগুনার পাথরঘাটার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক আল আমিন (২৬)। চলতি বছরের আগস্টে ঢাকার একটি কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বেগমের (১৮) সঙ্গে বিয়ে হয় তার।
গত মাসে ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন আল আমিন। স্ত্রীকে নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার লঞ্চে করে রওনা হন বাড়ির উদ্দেশে। তাদের সঙ্গে ছিলেন সুমাইয়ার চাচাতো ভাই মো. তুহিন, তুহিনের স্ত্রী এবং এ দম্পতির আড়াই বছরের শিশুকন্যা তাবাসসুম। তাদের লঞ্চটিতেই গতকাল রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে সাঁতার না জানা স্ত্রীকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়া এবং শেষ পর্যন্ত বেঁচে ফেরার কাহিনী ফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন আল আমিন। স্ত্রীসহ তিনি এখন বরগুনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিকেলে সদরঘাটে গিয়ে প্রথমেই আমাদের চোখ পড়ে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটির দিকে। অন্য লঞ্চে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও একেবারে নতুন ঝকঝকে লঞ্চটি দেখে সেটিতেই উঠার সিদ্ধান্ত নিই। এ লঞ্চের ভাড়া বেশি হওয়ায় কেবিনের বদলে ডেকের টিকিট কাটি আমরা।'
'রাতে দ্বিতীয় তলার ডেকে তাবাসসুমকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তুহিনরা। সুমাইয়া আর আমি ডেকে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। এক সময় হাঁটতে হাঁটতে লঞ্চের একদম সামনের দিকে চলে যাই। আর ১ কিলোমিটারের মধ্যেই ঝালকাঠি ঘাট। সেখানে লঞ্চ ভেড়ানোর আগেই দেখলাম, লঞ্চের মাঝ বরাবর আগুন জ্বলছে। চারদিকে মানুষের হইচই। প্রাণ বাঁচাতে সবাই ছোটাছুটি করছে', যোগ করেন তিনি।
আল আমিন বলেন, 'কী করব বুঝে উঠার আগেই লঞ্চ তীরের পাশে চলে আসে। আমি সাঁতার জানলেও আমার স্ত্রী সাঁতার জানেন না। কিন্তু দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিলে পানিতেই পড়তে হবে আগে। তাই সিদ্ধান্ত নিই, লাফ না দিয়ে নিচ তলায় নেমে তারপর তীরে উঠার চেষ্টার করব। আমার স্ত্রী এ সময় বলেন, ''মরলেও একসঙ্গে, বাঁচলেও একসঙ্গে।''
'পরে আমরা যখন নিচ তলায় নামতে পারি, তার আগেই স্রোতে লঞ্চ মাঝনদীতে চলে যায়। পুরো লঞ্চেই তখন আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। উপায় না দেখে স্ত্রীকে নিয়ে এবার নদীতে লাফ দিই। একটা ব্যাগ ধরে কোনোমতে ভাসতে থাকেন সুমাইয়া। দুজন এভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টা ভেসে থাকার পর ভোর ৪টার দিকে একটা ডিঙ্গি নৌকা উদ্ধার করে আমাদের। ওই নৌকা থেকে পরে ফায়ার সার্ভিসের ট্রলারে উঠতে পারি আমরা। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমাদের', জানান আল আমিন।
তিনি বলেন, 'স্ত্রী সাঁতার জানতেন না। এরপরও দুজনই যে বেঁচে ফিরতে পারব, ভাবিনি। বেঁচে ফেরাটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে এখন।'
একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তুহিন ও তার স্ত্রী। তারাও কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন। তবে তাদের মেয়ে তাবাসসুম এখনো নিখোঁজ।
Comments