বিশ্ববাসী আমাদের বোঝা ভাগ করে নিন

মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস স্পষ্টভাবে বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বোঝা বহন করা বাংলাদেশের একার পক্ষে সম্ভব না এবং সেটা করাও উচিত না। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অংশিদারত্ব প্রয়োজন এবং সেটার দাবি রাখে। তাই তিনি এই বাস্তবতাকে উপলব্ধি ও বিশাল দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অস্বীকারের উপায় নেই যে, বিশ্ব যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবে যে এই সংকটের সমাধান বাংলাদেশে নয়, মিয়ানমারে রয়েছে, সঠিক পথে কাজ করা তত সহজ হবে। বাংলাদেশ তার দায়িত্ব পালন করেছে; এখন বিশ্বকে তার প্রতিদান দেওয়ার পালা। আমরা এটা জেনে আনন্দিত যে, জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদান দেখেছেন এবং নিম্নোক্ত ভাষায় তা স্বীকার করেছেন, 'বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য তার হৃদয় ও বাহু প্রসারিত করে অগণিত রোহিঙ্গা নাগরিকের জীবন বাঁচিয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাদের ওপর সবচেয়ে অকথ্য বীভৎসতা দেখিয়েছে। যারা মানবাধিকারকে মূল্য দেয় বাংলাদেশের প্রতি তাদের সকলের কৃতজ্ঞতা রয়েছে।'

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সশস্ত্র গুণ্ডাদের শুরু করা গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য যেদিন থেকে বাংলাদেশ তার সীমান্ত খুলে দেয়, মিয়ানমারের ৭ লাখেরও বেশি নাগরিক বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় নেয়। প্রাথমিকভাবে তাদের মাথার ওপর ছাদ, খাবার ও পানি দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে বাংলাদেশের কাঁধে। বাংলাদেশ সরকার ও দেশের জনগণ মানবিক কারণে এই হতভাগ্য মানুষদের সম্পূর্ণরূপে উষ্ণ হৃদয়ে তাদের স্বাগত জানায়। বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘকে প্রতিদিনের ঘটনার ভিত্তিতে তথ্য প্রদানসহ সমস্ত কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা শুরু করে। তবে, মিয়ানমার সরকার প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই অনুপস্থিত থেকে যায়।

কক্সবাজার এবং আশেপাশের এলাকার শরণার্থী শিবিরগুলো ক্রমবর্ধমান রোহিঙ্গা জনসংখ্যার চাপে উপচে পড়ছে। যা আমাদের পরিবেশ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশ সরকার ভাসান চরে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে, যেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার শরণার্থী স্থানান্তরিত হয়েছেন।

চরটিতে সফরের পর, জাতিসংঘের দূত সেখানে যা দেখেছেন তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবেন। তিনি অবশ্য সেখানে আরও বেশি শরণার্থীদের স্থানান্তরের আগে নতুন জায়গায় প্রয়োজনীয় পরিষেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) গৃহীত প্রতিশ্রুতিগুলোকে স্বাগত জানান এবং সেগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

এটা সুসংবাদ যে, জাতিসংঘের বিশেষ দূত রোববার তার প্রস্থানের আগে বলেছিলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনি মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগসহ একটি শক্তিশালী এবং আরও সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে কাজ করবেন। এর জন্য সামরিক জান্তাকে সম্পূর্ণরূপে জবাবদিহি করতে হবে। এটাও তাৎপর্যপূর্ণ যে, তিনি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে তাদের নিজেদের দেশে প্রত্যাবর্তনের ওপর জোর দিয়েছেন।
 

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

2h ago