নির্যাতনে ঢাবি ছাত্রীর মৃত্যু: অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করুন

এলমা চৌধুরী মেঘলা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী এলমা চৌধুরী মেঘলার মর্মান্তিক মৃত্যু আবারো মনে করিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের অধিকাংশ নারী এখনো নিজেদের বাড়িতে বিশেষ করে শ্বশুরবাড়িতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে। চলতি বছরের এপ্রিলে বিয়ের পর এলমা ঢাকার বনানীতে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে শুরু করেন। তখন থেকেই তাকে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল। তার বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী ও শিক্ষকদের অভিযোগ, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এ কারণে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

মেয়েটিকে যে পরিমাণ লাঞ্ছনা, নির্যাতন এবং বাধা সহ্য করতে হয়েছিল তা অকল্পনীয়। বিয়ের পরের মাসগুলো এলমাকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হতো। তার সহপাঠী ও বন্ধুদের ভাষ্য, বিয়ের পর মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে, শ্বশুরবাড়ি থেকে সঙ্গে একজন পাহারাদার দিয়ে দেওয়া হতো। তার সহপাঠীরা আরও অভিযোগ করেছে যে, এলমার ফোন প্রায়ই বন্ধ পাওয়া যেত, কিংবা ফোন দিলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ধরতো। এজন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যেত না। এমনকি এলমাকে হিজাব পরতে বাধ্য করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।

এই সময়ে এসে উচ্চশিক্ষা নিতে চাওয়ায় একজন তরুণীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এটা খুবই হৃদয়বিদারক। কিন্তু যে দেশে এখনো পারিবারিক নির্যাতনসহ নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা ব্যাপকহারে ঘটছে, সেখানে এ ধরনের ঘটনায় অবশ্য আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। গত বছরই ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী সুমাইয়া খাতুনকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা হত্যা করে। ওই মেয়েটিও শ্বশুরবাড়ির ইচ্ছার বিরুদ্ধে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিল। সে কারণেই তাকে হত্যা করা হয়। আরও অগণিত নারীকে বিয়ের পর পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়েছে। এ ছাড়া, বাল্যবিবাহের কারণে যে কত মেয়েকে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়, তার কথা আর নাই বলি।

এ বছর আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। এ সময়ে এসে আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই যে, এত বছরেও কেন আমরা নারীদের জন্য বাড়িতে ও বাড়ির বাইরে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারিনি? কেন এখনো এ দেশে এত মেয়ে ও নারী নির্যাতন, হয়রানি, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হচ্ছে? এসব ঘটনায় করা এত মামলার কেন নিষ্পত্তি হয় না? নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে রাষ্ট্র কী ব্যবস্থা নিয়েছে?

এবারের ঘটনায় আমরা অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এলমার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা আশা করি, আর কোনো প্রাণবন্ত তরুণীকে তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য জীবন হারাতে হবে না। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন এ ধরনের ঘটনায় ন্যায়বিচার হয় এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে রাষ্ট্র যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।

Comments

The Daily Star  | English

Onion price rises on supply crunch

Onion prices at retail markets in Dhaka rose by Tk 10 to Tk 15 per kilogramme (kg) over the past week, deepening the woes of low and fixed-income people..Wholesale and retail traders across the capital said a supply crunch is causing the volatility in onion prices..Nurul Alam Shikdar

29m ago