সংরক্ষিত বনাঞ্চলে চট্টগ্রাম প্রশাসনের দৃষ্টি

উত্তর কাট্টলী উপকূলীয় এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৩০ একর জমিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/ স্টার

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অবৈধভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৩০ একর জমি দখল করে উত্তর কাট্টলী উপকূলীয় এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বন কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, 'সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের নামে উত্তর কাট্টলীতে আমাদের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধভাবে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে।'

তিনি বলেন, 'সংরক্ষিত বন দখল করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।'

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত জায়গাটিকে ১৯২৭ সালের বন আইনের ২০ ধারার অধীনে ২০১৭ সালে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা করে বলে জানান বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ইউনিটের সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক মো. তহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকায় সংরক্ষিত বনে জেলা প্রশাসনের অবৈধভাবে সাইনবোর্ড টাঙানো খুবই দুঃখজনক।'

'চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন যা করেছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি। উন্নয়ন কিংবা যে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের নামে কেউ সংরক্ষিত বনভূমি দখল করতে পারবে না,' তিনি বলেন।

তহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা শিগগির এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবো।'

তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন,  প্রস্তাবিত ৩০ একর জায়গা সংরক্ষিত বনাঞ্চল নয়।

তিনি বলেন, 'যদি সংরক্ষিত বনও হয় তাতেও কোনো সমস্যা নেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কনসার্ন নিয়েই ওই জায়গায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণ করতে যাচ্ছি বলেও দাবি করেন তিনি। 

'আমরা সেপ্টেম্বরে প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। প্রস্তাবিত এলাকায় অবৈধ ইটভাটা ছিল যা আমি উচ্ছেদ করেছি। অথচ বন বিভাগ কখনো ইট ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি, দাবি করেন জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান।

সম্প্রতি এ প্রতিবেদক প্রস্তাবিত এলাকায় গেলে সেখানে বেড়ে উঠা সাগরলতা দেখতে পান।

'সাগর লতা, যার ইংরেজি নাম Railroad vine, একটি অতিদ্রুত বর্ধনশীল লবণাক্ত পরিবেশের উদ্ভিদ। এটি সাধারণত উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের পানি যে উচ্চতা পর্যন্ত ওঠে তারও উপরে জন্মায়', বলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান।

'এটি বালু মাটিকে আঁকড়ে ধরে সমুদ্রের ঢেউ ও বাতাসের মাধ্যমে মাটির অন্যত্র সরে যাওয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। আবার উপকূলে বাতাসে উড়ে আসা বালু একে আশ্রয় করে জমা হতে থাকে। সমুদ্র উপকূলে বালিয়াড়ি সৃষ্টিতে এই উদ্ভিদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে,' তিনি বলেন।

'বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এই উদ্ভিদ সাধারণত দেখা গেলেও সম্প্রতি চট্টগ্রাম উপকূলেও বিক্ষিপ্তভাবে এটি দেখা যাচ্ছে,' বলেন ড. আতিকুর।

'উপকূলীয় ক্ষয় রোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাগর লতা বিশেষ ভূমিকা রাখে বিধায় এটি ধ্বংস করা উচিত নয়। এটি ধ্বংস করা যেমন পরিবেশের জন্য ভালো নয়, একই ভাবে গড়ে উঠা স্থাপনাও হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ,' তিনি বলেন।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রবিউল আলম বলেন, 'যে জায়গায় জোয়ারের পানি পৌঁছায় সেখানে অতিরিক্ত প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করলে তার ঝুঁকি বেড়ে যায়।'

চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'আমরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ সমর্থন করি না। প্রশাসন চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করে শহরের কেন্দ্রস্থল পাহাড়তলী বধ্যভূমি এলাকাটি অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণ করতে পারত এবং স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর সেখানে নির্মাণ করতে পারত।'

Comments

The Daily Star  | English

Grim discovery: Five bodies found on vessel in Meghna

The incident had occurred on the Meghna river under Chandpur Sadar upazila in an area adjacent to Shariatpur

2h ago