গুমের ঘটনাগুলো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে

সংবিধান নিশ্চিত করে এমন মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে বেঁচে থাকার অধিকার একটি রাষ্ট্রের সমস্ত কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এটি অলঙ্ঘনীয়। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করে যদি কারও বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় এবং রাষ্ট্র যদি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না পারে কিংবা এই ধরনের ঘটনাকে ঠেকানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আইনের শাসন থাকবে না। আইন পরিণত হবে যারা শক্তিশালী তাদের নির্মম স্বার্থ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে। এতে সংবিধান কলুষিত হয়, রাষ্ট্রের পরিচয় এবং সমাজের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়।

এমন একটি সমাজব্যবস্থা, যেখানে গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হলো আইনের শাসন, সেখানে এটি অগ্রহণযোগ্য।

স্থানীয় মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থার মতে, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৬০৫ জন মানুষ গুম হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৫৪ জনের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। তাদের মধ্যে ৩৭০ জন ফিরে এসেছেন এবং ৮১ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো এই বিষয়ে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার জানিয়েছে, সাদা পোশাকের লোকেরাই তাদের তুলে নিয়ে গেছে, কখনো কখনো তারা নিজেদের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য বলেও দাবি করেছে।

আমরা কারও দিকে আঙুল তুলতে চাই না, তবে এ প্রসঙ্গে কিছু অসঙ্গতি স্বীকার করতেই হবে।

প্রথমত, অনেক মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে অনেকে এখনো হিসাবের বাইরে রয়ে গেছেন। দ্বিতীয়ত, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ মারা গেছেন। তৃতীয়ত, যারা ফিরে এসেছেন তাদের অধিকাংশই স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভুগছেন, তারা বাড়ি ফিরে আসার পর বন্দি, অপহরণ বা গ্রেপ্তারের পরের সময়কালের কিছুই মনে করতে পারছেন না।

তাহলে কি বিষয়টির গভীরে যাওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়? যদি রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো জোরপূর্বক গুমের সঙ্গে জড়িত না থাকে, যেমনটি তারা দাবি করে, তাহলে কারা জড়িত সেটি খুঁজে বের করার দায়িত্ব কি তাদের ওপর বর্তায় না? আমরা কি বিশ্বাস করব যে এমন একটি সুপার-সত্তা আছে যেটি ৬০০ জনেরও বেশি মানুষকে জোরপূর্বক গুম করেছে?

যারাই এর সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তারা গোপনে কাজ করছে এবং গত এক দশক ধরে করে যাচ্ছে। এত দক্ষতার সঙ্গে তারা এটি করছে যে, তাদেরকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না, এমনকি রাষ্ট্রীয় সংস্থার সদস্যরাও তাদেরকে আটক করতে পারছেন না। নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বাড়াতে এটিই কি যথেষ্ট নয়?

এগুলো এমন কিছু প্রশ্ন যা কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারে না। কোনো ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার পেছনে অনেকগুলো সম্ভাবনা এবং কারণ রয়েছে। প্রতিটি নিখোঁজ ব্যক্তির মামলা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা উচিত। কিন্তু আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই যখন দেখি পুলিশের পক্ষ থেকে 'নিখোঁজ ব্যক্তি'র মামলা নথিভুক্ত করতে অনীহা দেখানো হয়। কিছু ক্ষেত্রে মামলা প্রত্যাহারের জন্য পরিবারের ওপর চাপও দেখা যায়।

সমস্যাটি সমাধানের জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন, কিন্তু এই মুহূর্তে সেটি নেই। কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া এই বিষয়টিকে যে তাদের পক্ষে আরও জটিল করে তুলতে পারে, এই সম্ভাবনা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের আরও মনোযোগী হওয়া উচিত।

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

Onion price rises on supply crunch

Onion prices at retail markets in Dhaka rose by Tk 10 to Tk 15 per kg over the past week, deepening the woes of low and fixed-income people

2h ago