বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের কারাবন্দি করা বন্ধ করতে হবে
চলতি বছর বিশ্বজুড়ে কারাবন্দি সাংবাদিকের সংখ্যা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, সিপিজে এ নিয়ে টানা ৬ বছর সারাবিশ্বে রেকর্ড সংখ্যক সাংবাদিক কারাবন্দির ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।
এটি বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর একটি উদ্বেগজনক প্রবণতাকে তুলে ধরছে। সেটি হলো তথ্যের অবাধ প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ এবং যারা পেশা হিসেবে জনগণের কাছে তথ্যগুলো তুলে ধরে তাদেরকে সচেতন করার দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের দমন।
সচেতন জনসাধারণ ছাড়া গণতন্ত্র হতে পারে না- এটি আধুনিক গণতন্ত্র গঠনে সাহায্যকারী সব সংস্কারকই ব্যাপকভাবে স্বীকার করেছেন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো এই ধারণাটিকে দিন দিন কম সমর্থন করছে, যেটি স্বৈরতন্ত্রের দিকে বিপজ্জনকভাবে মোড় নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
১০ ডিসেম্বর দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের কারাবন্দি করার ক্ষেত্রে এশিয়ার অনেক দেশই এগিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে আছে চীন, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের মতো দেশ।
বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও বছরের পর বছর ধরে খারাপের দিকে মোড় নিচ্ছে। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে সবসময় নিচের দিকে থাকা বাংলাদেশ এই বছরের র্যাঙ্কিংয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫২তম স্থানে নেমে গেছে।
বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকে আমরা দেখেছি, বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো মানুষকে ভুল তথ্য থেকে রক্ষা করার নামে সাংবাদিকতার ওপর চাপ তৈরি করেছে। যদিও আমরা বার বার দেখেছি যে, বিশ্বজুড়ে স্বাধীন সাংবাদিকদের যাচাই করা সঠিক তথ্যের পরিবেশনই সবসময় বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্য ঠেকানোর সবচেয়ে বড় ঢাল হিসেবে কাজ করেছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদকরা উদ্বেগ জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম একাধিক দিক থেকে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। সাংবাদিকদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব, তাদের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি সরকারের অশ্রদ্ধা এবং প্রকৃতপক্ষে, স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সব ব্যক্তি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি যেগুলোতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে, সেসবের লঙ্ঘন গুরুতরভাবে উদ্বেগের বিষয়।
সংবাদ পরিবেশনের জন্য সাংবাদিকদের কারাবন্দি করা একটি স্বৈরাচারী শাসনের বৈশিষ্ট্য। তবুও আমরা বার বার বিশেষ করে সাংবাদিকদের হয়রানির জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি ব্যবহার করতে দেখেছি।
স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতি এই বিরূপ মনোভাব শুধু স্বাধীন সাংবাদিকতাকেই নয়, আমাদের গণতন্ত্রকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। তাই আমরা সরকারকে সমস্ত আইন ও প্রক্রিয়ার পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানাই, যেগুলো বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে।
এ ছাড়া, বিশ্বব্যাপী সব দেশকে সাংবাদিকদের অধিকারের মূল্যায়ন শুরু করতে হবে। সামগ্রিকভাবে স্বাধীন মত প্রকাশ দেশগুলোর সংবিধান ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে চিরন্তন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের সভ্যতার টিকে থাকা ও অগ্রগতির চাবিকাঠি।
অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি
Comments