দুর্ঘটনা, অবহেলা নাকি খুন?

খোলা নালায় পড়ে মৃত্যুর জন্য সিসিসি দায় এড়াতে পারে না
ছবি: স্টার

চট্টগ্রামের উন্মুক্ত নালা এর আগেও প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এবার গত সোমবার ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হয় ১২ বছরের এক শিশু। দমকল বাহিনীর কর্মীরা নিখোঁজ ছেলেটির সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছেন। ছেলের ছবি ধরে শোকাহত বাবার ছবি যা দ্য ডেইলি স্টারের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছে তা মর্মান্তিক।

পরিহাসের বিষয়, একই ড্রেনে পড়ে গত ২৫ আগস্ট সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ (৫৫) নিখোঁজ হন। আর তার এক মাস পরই ২৮ সেপ্টেম্বর একই পরিণতির মুখে পড়েন ১৯ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সেহরিন মাহবুব সাদিয়া। এর আগেও জুনে এমন একটি নালায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা পড়ে যাত্রীসহ চালকের মৃত্যু হয়।

খোলা ড্রেনগুলো বন্দর নগরীর নাগরিকদের জন্য সত্যিকারের মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে এবং এই দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ধারাবাহিকভাবে ঘটছে। এই ধরনের দুর্ঘটনাও ড্রেনগুলোকে ঢেকে না রাখার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিবেক জাগিয়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে হয়। এই চওড়া ও গভীর ড্রেনগুলো রাস্তার খুব কাছে নির্মাণ করা হয়েছে এবং ভারী বৃষ্টির সময় সেগুলো কোথায় আছে তা অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়ে। ড্রেনের পানিতে ময়লা-আবর্জনার কারণে দমকল বাহিনীর কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা সুষ্ঠুভাবে চালাতে পারেন না।

যেকোনো নির্মাণ প্রকল্পের মূলমন্ত্র 'প্রথমে নিরাপত্তা', কিন্তু নিরাপত্তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আমরা খুব কমই দেখি যে স্লোগানটি তারা নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেন। খোলা ড্রেনে দুর্ঘটনার পর নাগরিকরা এগুলোকে টেকসই স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে রাখার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু, এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা রোধে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

একজন নগর পরিকল্পনাবিদ আমাদের সঙ্গে একই উদ্বেগ নিয়ে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদককে বলেন, শহরের ড্রেনগুলো খোলা রাখা হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষের নিছক অবহেলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, এসব দুর্ঘটনার দায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এড়াতে পারে না।

আমরা তার সঙ্গে একমত যে এটি বোঝার জন্য কাউকে ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে না। ড্রেন খোলা রাখলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তা বোঝার জন্য সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট।

আমরা এখানেও দায় এড়ানোর সেই পুরনো প্রবণতাই লক্ষ্য করি। যোগাযোগ করা হলে সিসিসি মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পরিবর্তে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) একটি মেগা প্রকল্পের অংশ হিসেবে এটিতে কাজ করছে বলে ওই ড্রেনটি ঢেকে রাখা যাচ্ছে না। সিডিএ কবে তাদের কাছে ড্রেনটি হস্তান্তর করবে তা মেয়রের জানা নেই।

পুরো ঘটনাটি মানুষের দুর্ভোগ, মানুষের জীবনের প্রতি অবহেলা ও উদাসীনতাই তুলে ধরে। সরকারের এটি তদন্ত করা দরকার যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায় এবং আর কারো প্রাণহানি না ঘটে।

Comments

The Daily Star  | English

Onion price rises on supply crunch

Onion prices at retail markets in Dhaka rose by Tk 10 to Tk 15 per kg over the past week, deepening the woes of low and fixed-income people

2h ago