ব্যাংকিং খাত কি সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে?

bangladesh_bank.jpg
বাংলাদেশ ব্যাংক। স্টার ফাইল ফটো

দেশে ক্রমবর্ধমান অবৈধ সম্পদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকগুলোর নগদ অর্থের প্রবাহ এবং আয়কে প্রভাবিত করেছে, যা উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলো তাদের নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) থেকে ৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করেছে, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।

তবে এই পুনরুদ্ধার মহামারির আগের সময়ের তুলনায় খুবই কম। ফলে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা ও ঋণ প্রদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

২০২০ সালে ব্যাংকগুলো তাদের সম্মিলিত নন-পারফর্মিং লোন থেকে ৫ হাজার ৮০২ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করেছে, যেটি এর আগের বছরে ছিল ১৫ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা।

করোনা মহামারির শুরু থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের শ্রেণিবিন্যাস নীতি শিথিল করার পরও এটি এনপিএল কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। সবারই জানা যে, মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণ ফেরত দিতে ঝামেলায় পড়ছে।

গত ৫ ডিসেম্বর দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুনাফা করার পরও ঋণ পরিশোধ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে এবং এর ফলে দেশে স্বেচ্ছায় খেলাপিদের সংখ্যা আবারও বাড়ছে।

মহামারি শুরুর আগেও বড় মাপের ঋণগ্রহীতাদের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ছাড় দেওয়া হয়েছিল, যারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত স্বেচ্ছায় খেলাপি ছিল। কখনও কখনও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাহ্যিক চাপে এবং ব্যাংকিং নিয়ম-বিধি লঙ্ঘন করে খেলাপিদের জন্য দায়মুক্তির পরিবেশ তৈরি করা হয়। এই ধরনের পরিবেশ তৈরি করে নিয়ন্ত্রকরা অন্যদেরও সেটা অনুসরণের পথ তৈরি করে। অন্যান্য ঋণগ্রহীতারাও এর সুবিধা নিচ্ছেন এবং বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছিলেন যে, এ রকম ঘটবে।

বার বার নিজেদের নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন বা উপেক্ষা করে নিয়ন্ত্রকরা ব্যাংকের সব নীতিমালাকে উপহাস করেছে। এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, আমাদের ব্যাংকিং খাত বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত সংকটে রয়েছে? নির্দিষ্ট কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে কোনো উদারতা না দেখানোর জন্য প্রায় এক দশক ধরে বিশেষজ্ঞরা সরকারকে সতর্ক করে আসছেন। যা সরকার সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেছে। অতএব এই খাতটি বর্তমানে যে সংকটে রয়েছে তার জন্য দায়ী নিয়ন্ত্রকরা।

নিয়ন্ত্রকরা তাদের ভুল স্বীকার ও তাদের নিজস্ব নীতি সংশোধন করার চেষ্টা না করলে ব্যাংকিং খাত আরও গভীর সমস্যায় পড়তে থাকবে। এই প্রক্রিয়া আমাদের সমগ্র অর্থনীতিকে বিপন্ন করে তুলবে। এখনই সময় নিয়ন্ত্রকদের ব্যাংকিং নীতিমালা ও প্রণিধানগুলো সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগের দিকে নজর দেওয়া।

এখন সময় রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের 'বিশেষ বিবেচনা' না দেখানো। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রকদের অবশ্যই স্বেচ্ছায় খেলাপিদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের ঋণের সীমানা পুনর্নির্ধারণের পরিবর্তে, তাদের ঋণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা এবং পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সব আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তা না হলে ঋণের উচ্চ সুদ পরিশোধ করেও সৎ ঋণগ্রহীতারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং অর্থনীতি তার সম্পদের অদক্ষভাবে ব্যবহারের ফল ভোগ করবে।

Comments

The Daily Star  | English

Tk 2 for a day's labour: Prisons chief pushes to reform inmate pay

"This is why prison-made products are so cheap. But this also makes inmates lose interest in work"

28m ago