দুর্দান্ত বোলিংয়ে তাইজুল উড়লেন, উড়ালেন বাংলাদেশকে
আগের দিন উইকেট নেওয়ার একমাত্র পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন তাইজুল ইসলামই। রিভিউ না নেওয়ার হতাশা মিড উইকেট থেকে চিৎকার করে ঝেড়েছেন। আব্দুল্লাহ শফিককে আউট করতে না পারার অস্বস্তি পুড়ায় দিনের বাকিটা সময়ও। তৃতীয় দিনে নেমে সেই অস্বস্তির কাঁটা সরিয়েই শুরু তাইজুলের। ঠিক একই রকম এক ডেলিভারিতে। বাকিটা সময়েও দারুণ সব ডেলিভারিতে উড়তে থাকলেন তাইজুল, তার মুন্সিয়ানায় উড়ল বাংলাদেশও। বিনা উইকেটে ১৪৫ থেকে ২৮৬ রানে গুটিয়ে গেল পাকিস্তান। অবিশ্বাস্য ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখে লিড পেল বাংলাদেশ।
সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে হাসান আলিকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারে নবমবারের মতো ৫ জুইকেট শিকার ধরেন তাইজুল। ১১৬ রানে পান ৭ উইকেট। তার ঝলকে ৩৩০ রান করেও ৪৪ রানের লিড পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
তাইজুল এদিন বেশিরভাগ বলই করেছেন একটু সামনে। বল দিয়েছেন ঝুলিয়ে। তার ফ্লাইটের ব্যাবহার ছিল মোহনীয়, তাতে মিলেছে জুতসই টার্ন। কিছু রান বেরিয়ে গেলেও এই টোপেই কাবু হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা।
তাইজুলের শিকার ধরা শুরু দিনের প্রথম ওভারে। পঞ্চম বলটা ভেতরে ঢুকছিল। শফিক কাট করতে গিয়ে পরাস্ত হন। বল তার ব্যাডে লাগার আগে লাগে ব্যাডে। আগের দিনের ৫২ রানেই শেষ হন তিনি। আগের দিন একইরকম এক পরস্থিতিতে বাংলাদেশ রিভিউ না নেওয়ায় ৯ রানে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি।
শফিক ফেরার ঠিক পরের বলেই বড় উইকেট। অভিজ্ঞ আজহার আলি তাইজুলের সোজা বল বুঝতে না পেরে এলবিডব্লিউ। আম্পায়ার আউত না দিলেও রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় বাংলাদেশ।
সেঞ্চুরি করা আবিদ আলিকেও ফেরাতে পারতেন তিনি। ১১৩ রানে স্লিপে তার সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আবিদই এগিয়ে নিচ্ছিলেন পাকিস্তানকে।
অধিনায়ক বাবর আজম এসে থিতু হতে নেন সময়। কিন্তু থিতু হওয়ার আগেই গড়বড়। তিনি অবশ্য বোল্ড হন মেহেদী হাসান মিরাজের বলে। তবে লাঞ্চ বিরতির আগে কাজের কাজটা আবার করেন তাইজুল। এতে অবশ্য বড় কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন উইকেটকিপার লিটন দাস।
বাঁহাতি ফাওয়াদ আলমকে আগের বলটা সোজা দিলেও পরের বল টার্ন করিয়ে ভেতরে ঢোকান তাইজুল। বল দিয়েছিলেন একটু ঝুলিয়ে। পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন ফাওয়াদ। বল তার গ্লাভস স্পর্শ করে পায়ে লেগে যাচ্ছিল বেশ খানিকটা বাদিকে স্লিপের দিকে। ছোবল মেরে দারুণ দক্ষতায় সেই ক্যাচ হাতে জমান লিটন। এবারও আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় রিভিউ নিয়ে সাফল্য আনতে হয় বাংলাদেশকে।
লাঞ্চের পর পেসার ইবাদত হোসেন আনেন প্রথম ব্রেক থ্রো। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে এলবিডব্লিউ করে ফিরিয়ে দেওয়ার পর আবার চেপে বসেন তাইজুল। এবার তার শিকার ইনিংসের সবচেয়ে মূল্যবান উইকেট। সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের পথের কাঁটা হয়েছিলেন আবিদ। এবার তাইজুলের ভেতরে ঢুকা বল পেছনে সরে খেলতে গিয়ে ভুল হয়ে যায় আবিদের। পরিস্কার এলবিডব্লিউ আবেদনে আঙুল তুলতে সমস্যা হয়নি আম্পায়ারের।
তাইজুল তার পঞ্চম শিকার ধরেন একটা ফাঁদ পেতে। ৬ উইকেট হারানো পাকিস্তান ছিল কিছুটা থতমত। পেস বোলার হাসান আলি ক্রিজে আসতে কিছুটা ঝুলিয়ে বল করেন তাইজুল। পর পর দুই বলে চার ও ছক্কায় উড়ান হাসান। হাসানকে মারার মুডে নিয়ে পরের বলটিও আরও ঝুলিয়ে করেন তাইজুল। ক্রিজ থেকে বেরিয়ে উড়াতে গিয়ে গড়বড় হয়ে যায় হাসানের। সহজ স্টাম্পিংয়ে কাটা তিনি।
আগের দিন বিবর্ণ বল করতে থাকা ইবাদত আবার উইকেট নিলে চাপ থাকে বহাল। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার সাজিদ খানকে বোল্ড করে ৮ম উইকেট তুলেন তিনি। তাইজুল খানিক পর আবার এলবিডব্লিউতে ফিরিয়ে দেন নোমান আলিকে। শেষটাই মুড়েছেন তাইজুলই। উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ৩৮ রান করা ফাহিম আশরাফকে ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। পাকিস্তান গুটিয়ে যায় তিন সেশনেই।
Comments