সাদামাটা বোলিং, নিষ্প্রাণ শরীরী ভাষায় হতাশার দিন
উইকেট ব্যাট করার জন্য ছিল আদর্শ। দ্বিতীয় দিনে পরিস্থিতি হয়ে যায় আরও সহজ। তবে এমন উইকেটে ভিন্ন রকমের পরিকল্পনা, বৈচিত্র্য দিয়ে চেষ্টা চালানো যায়। বাংলাদেশের বোলিং হলো একমাত্রিক। পেসাররা মুভমেন্ট পেলেন না, বল উঠাতেও পারলেন খুব একটা। স্পিনারদের বলে নেই কোন ছোবল। পাকিস্তানের উদ্বোধনি জুটিই তাই টলানো গেল না। দিনের শেষভাগে তো বাংলাদেশের শরীরী ভাষাতেও দেখা গেল নেতিবাচক ছবি, ফিল্ডিং পজিশনও ছিল বেশ রক্ষণাত্মক।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের ৩৩০ রানের জবাবে বিনা উইকেটে ১৪৫ রান তুলেছে পাকিস্তান। দলকে দারুণ শুরু পাইয়ে চতুর্থ সেঞ্চুরি দিকে থাকা আবিদ আলি অপরাজিত আছেন ৯৩ রানে। ৯ রানে বাংলাদেশ রিভিউ না নেওয়ায় বেঁচে যাওয়া অভিষিক্ত আব্দুল্লাহ শফিকের ব্যাট করছেন ৫২ রানে।
দিনের শুরুটা হয় বাংলাদেশের ধসে পড়া দিয়ে। আগের দিনের ৪ উইকেটে ২৫৩ রান নিয়ে নেমে বড় পুঁজির আশায় ছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। পঞ্চম উইকেটে দুশোর বেশি রানের জুটিতে দলকে টানা লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম এদিন করেছেন আশাহত।
আগের দিন সেঞ্চুরি করা লিটন আর ১ রান যোগ করেই হাসান আলির শিকার হন। পাকিস্তানের এই পেসারের ঝাঁজে সকালের সেশনে কাবু হয় বাংলাদেশ। আউটস্যুয়িং, ইনস্যুয়িংয়ের মিশেলে কাঁপিয়ে দেওয়া এক স্পেল করেন তিনি। তার ভেতরে ঢোকা এক বলেই লাইন মিস করে বিদায় লিটনের। অভিষিক্ত ইয়াসির আলি চৌধুরী রাব্বিও লাইন মিস করে হন বোল্ড।
শুরুর ঝাপ্টা সামলে ক্রিজে পড়ে থাকা মুশফিক তিন অঙ্কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ফাহিম আশরাফের মিডিয়াম পেসে তার বিদায় বড় সাদামাটাভাবে। কট বিহাইন্ড রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। বাংলাদেশ মূলত তিনশো ছাড়ায় মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে। বাকিদের আসা যাওয়ার মাঝে ৩৮ রান করে তিন এক প্রান্তে অপরাজিত থেকে বাড়ান আক্ষেপ।
দ্বিতীয় দিনে নেমে মাত্র ৭৭ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৩৩০ রানে। রানে ভরা উইকেটে বাংলাদেশের পুঁজি যে একদম যথেষ্ট নয় তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন দুই পাকিস্তানি ওপেনার।
লাঞ্চের পর নেমে কোন রকম সমস্যা ছাড়াই ইনিংস এগুতে থাকে পাকিস্তান। দুই পেসার আবু জায়েদ রাহি ও ইবাদত হোসেন ছিলেন বির্বণ। তাদের বলে ছিল না কোন বিষ। বাউন্সাসে ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলা, মুভমেন্ট আদায় কোন কিছুই করতে পারেননি তারা।
উলটো প্রতি ওভারে কাধিক ওভারপিচড বল দিয়ে ব্যাটারদের থিতু হতে সাহায্য করেন এই দুজন। তাইজুল ইসলাম এসে উইকেট নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন।
৩১ রানে এই দুজনের জুটি ভাঙ্গার বড় সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। তাইজুল ইসলামের করা ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলটা ভেতরে ঢুকছিল। একটু সরে কাট করতে গিয়ে পরাস্ত হন শফিক। বাংলাদেশের এলবিডব্লিউ আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। বল আগে ব্যাটে নাকি আগে প্যাডে লেগেছিল এই দোলাচলে আর রিভিউ নেননি মুমিনুল হক।
খানিক পর রিপ্লেতে দেখা যায় বল আগে লেগেছিল প্যাডেই। ছিল ইন লাইন, উইকেটও হিট করছিল। অর্থাৎ রিভিউ নিলেই উইকেট পেত বাংলাদেশ।
৭৯ রান তুলে চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দিনের শেষ সেশনে আরও নিখুঁত তাদের ব্যাটিং। বাংলাদেশের নেতিয়ে পড়া শরীরী ভাষাও তাদের করে ফেলে দাপুটে। তাইজুল একবার উইকেট নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করলেও বাকিটা সময় ছিলেন মলিন। মেহেদী হাসান মিরাজকে খেলতে কোন সমস্যাই হয়নি পাকিস্তানিদের। অধিনায়ক মুমিনুল হকও বল হাতে নিয়েছিলেন। কিছু টার্নও আদায় করতে দেখা যায় তাকে, তবে সেসব বল উইকেট আদায় করার মতো ছিল না।
শফিক একটু ধীর ব্যাট করলেও আবিদ ছিলেন বেশ ইতিবাচক। এই দুজনকেই আলগা করতে না পারা বাংলাদেশের জন্য নিশ্চিতভাবেই প্রচণ্ড হতাশার। এখনো যে ব্যাট করার জন্য বাকি বাবর আজুম, আজহার আলি, ফাওয়াদ আলম, মোহাম্মদ রিজওয়ানের মতো ব্যাটাররা। তৃতীয় দিনে তাই বাংলাদেশের বোলারদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
(দ্বিতীয় দিন শেষে)
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ৫৭ ওভারে ১৪৫/০ (আবিদ ৯৩* , শফিক ৫২* ;জায়েদ ০/৩০ , ইবাদত ০/৩১ , তাইজুল ০/৩৯ , মিরাজ ০/৩৩, মুমিনুল ০/১২ )
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৩০
Comments