কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যা আইন ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা ইঙ্গিত করে

সৈয়দ আহমেদ সোহেল ও হরিপদ দাস। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ আহমেদ সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ দাসের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশের বর্তমান রাজনীতি, বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমাদের কাছে খুব কমই সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। তবে এই ধরনের হামলার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।

দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কালো পোশাক ও মুখোশ পরা একদল দুর্বৃত্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসে ঢুকে গুলি চালিয়ে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ২ জন নিহত এবং আরও ৫ জন আহত হয়।

হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ এখনো জানা না গেলেও এটা স্পষ্ট যে হামলাটি পূর্বপরিকল্পিত।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে এমন সহিংসতা এই প্রথম নয়। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের নভেম্বরে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি ২০১৭ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অন্যদিকে, ২০১৮ সালের নভেম্বরে এক ছাত্রলীগ নেতাকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়, তিনিও সে বছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে কোনো সংযোগ আছে কি না এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।  আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ তদন্তের সময় এই বিষয়টি বিবেচনা করবে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে নিহত সবাই কোনো না কোনোভাবে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র থেকে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোহেল ও অন্য একটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। ওই গ্রুপটি এলাকার মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে তার এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে গত সোমবারের হত্যাকাণ্ডটি যে পেশাদারিত্বের সঙ্গে ঘটানো হয়েছে তাতে এর পেছনে কোনো সংগঠিত অপরাধী চক্রের জড়িত থাকার বিষয়টি অমূলক বলে মনে করা যায় না।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আন্তদলীয় দ্বন্দ্ব ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ের একটি সম্ভাব্য যোগসূত্রের বিষয়েও বলা হয়েছে।

কিছুদিন আগে দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পরে সোহেলের নাম উঠে আসে। যার বিরুদ্ধে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে হামলার উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তিনি সোহেলের একটি বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন।

এখানে স্পষ্টভাবে তদন্ত করার মতো অনেকগুলো দিক আছে। আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ এই রহস্যের জাল উন্মোচন করতে এবং সোমবারের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের শেকড়ে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। প্রকাশ্য দিবালোকে এবং রাজনৈতিক প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধে এমন নির্লজ্জ হামলার ঘটনা কুমিল্লা শহরের আইন ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে, যার দ্রুত সমাধান করতে হবে।

একইসঙ্গে, স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে যদি মাদক চোরাকারবার ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকে তবে সেটি তদন্ত করতে হবে। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ক্ষমতার রাজনীতি যেন কারো মৃত্যুর না হয় এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত করা হয়।

এই ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক জীবনের ন্যূনতম শিষ্টাচারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। রাজনীতি থেকে এসব কর্মকাণ্ডের মূলোৎপাটন নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

Iran plays down Israel's strikes, says they caused 'limited damage'

Iran on Saturday played down Israel's overnight air attack against Iranian military targets, saying it caused only limited damage, as U.S. President Joe Biden called for a halt to escalation that has raised fears of an all-out conflagration in the Middle East

3h ago