বেশিরভাগ মিটিং অনলাইনে করা গেলে, বিদেশ সফর কেন?

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল হওয়ায় সরকারের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বেঁচে গেছে। বিদেশে কিছু মিটিং বা প্রশিক্ষণ নেওয়ার হয়তো প্রয়োজন আছে, কিন্তু মহামারির আগে জনগণের করের টাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কারণ সরকারি খরচে এমন অনেক সফরের ফলাফল থাকে শূন্য। কিছু ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো এমন কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে পাঠাতেন, যাদের আসলে ওই সংশ্লিষ্ট কিছুই করার থাকত না। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ ধরনের চর্চার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

এই পরিপ্রেক্ষিতে কেন বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আগামী ৩ মাসে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে ৪টি ভিন্ন ভিন্ন সফরের পরিকল্পনা করেছেন, তা নিয়ে আমরা বিভ্রান্ত। অথচ সরকার বিদেশ ভ্রমণের জন্য এই অর্থবছরের বরাদ্দের শতকরা ৫০ ভাগ অর্থ আটকে দিয়েছে এবং কর্মকর্তাদের রুটিন ট্যুর বাতিল করতে বলেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের গত ১ জুলাইয়ের একটি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বরাদ্দের অবশিষ্টাংশ কেবল জরুরি এবং অপরিহার্য ক্ষেত্রে ব্যয় করা যেতে পারে।

এখন পর্যন্ত ওই ৪ সফরের কারণ দেখানো হয়েছে—জ্ঞানার্জন, প্রশিক্ষণ ও কারখানা পরিদর্শন। এগুলোর কোনোটিই জরুরি বা অপরিহার্য হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। আগামীকাল ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইউরোপের ৪টি দেশে ১৩ দিনের সফরে যাবেন। এর নেতৃত্ব দেবেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

রেলমন্ত্রীর মতে, এ সফরের উদ্দেশ্য উন্নত রেল ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা। করোনা মহামারি চলাকালে যখন বিশ্বের সব বড় সরকারি সংস্থা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বেশিরভাগ আলোচনা করছে, তখন আলোচনার জন্য এই সফরের পরিকল্পনা দেখে আমরা বিস্মিত।

ওই সফরে কত টাকা খরচ হবে, তাও স্পষ্ট করা হয়নি। সফরের রহস্যটা কী? বিশ্বের মধ্যে বর্তমানে ইউরোপে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যও অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে পড়েছে। এসব দেশে আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের যাওয়ার খবরে জনসাধারণের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। আমরা আরও জানতে চাই যে, এই দেশগুলো থেকে ফিরে কর্মকর্তারা কি যথাযথ কোয়ারেন্টিন করবেন?

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ অবস্থায় জনগণের টাকায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশে ভ্রমণের পরিকল্পনাকে রেল কর্মকর্তাদের উদাসীনতাই বলতে হয়। আর এ কারণে সরকারের বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কিত নির্দেশনাও তারা বিবেচনায় নেননি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সরকারি বিভিন্ন নির্দেশনা না মানার বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চিন্তা করার এখনই উপযুক্ত সময়। এই ধরনের ভ্রমণের যে উদ্দেশ্য তা যদি অনলাইনেই করা সম্ভব হয়, তাহলে এই ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদ নষ্ট করার এবং উড়োজাহাজে চড়ে জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার কোনো মানে নেই।

Comments

The Daily Star  | English

US lowers Bangladesh tariff to 35% from 37%

Failure to secure a more favourable bilateral agreement by Aug 1 deadline would be a significant blow to the country's export-oriented economy

6h ago