৬১৮ দিন পর দর্শকদের গ্যালারিতে ফেরার রোমাঞ্চ
সময়ের হিসেবে ৬১৮ দিন পর বাংলাদেশের মাঠে ঢোকার অনুমতি মিলেছে দর্শকদের। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মাঠে খেলা দেখার সুযোগ কি আর হাতছাড়া করতে চাইবেন ক্রিকেট ভক্তরা। স্বাভাবিকভাবেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বুথে ছিল উপচে পড়া ভিড়। শুধু ঢাকার সমর্থকরাই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন টিকেট সংগ্রহ করতে।
মাঠের পারফরম্যান্সে সাম্প্রতিক সময়ে হতাশ করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কিন্তু তাতে সামান্য ছেদ পড়েনি সমর্থকদের আগ্রহে। টিকেট বিক্রি শুরুর কথা ছিল সকাল ১০টা থেকে। সেখানে সকাল ৬টা থেকেই অপেক্ষা করছেন হাজারো সমর্থক। সবার একটাই প্রত্যাশা অন্তত একটা টিকেট চাই।
সবশেষ ২০১৯ সালের মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ মিলেছিল দর্শকদের। এরপর করোনাভাইরাস কেড়ে নেয় অনেক কিছুই। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো বেশ কিছু বড় দল বাংলাদেশ সফর করে গেলেও মাঠে ঢুকতে পারেননি সমর্থকরা। তাই পাকিস্তান সফরে মাঠে ফেরার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইছেন না সমর্থকরা।
তেমনি রাতুল নামের এক শিক্ষার্থী এসেছেন টিকেট সংগ্রহে। ফের মাঠে ঢোকার রোমাঞ্চে এ টাইগার সমর্থক বলেন, 'বাংলাদেশের ভালোবাসি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভালোবাসি। এতো দিনতো আর সমর্থন দিতে পারিনি। এবার সুযোগ এসেছে, মাঠে গিয়ে সমর্থন দেবো। আশা করি পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল ভালো করবে।'
শিশু বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এক দম্পতিকেও দেখা গেল লাইনে। পুলিশের সাহায্য নিয়ে নারীদের লাইন থেকে দুটি টিকিট কিনে যেন বিশ্বজয়ের আনন্দে মাতলেন সোহেল নামের ব্যবসায়ী, 'আমি কোন সিরিজই মিস করি না। বিয়ের আগে বন্ধুদের নিয়ে ম্যাচ দেখেছি। এবার বউসহ ম্যাচ দেখবো। বাংলাদেশ দলকে সাপোর্ট দিবো, এই জন্যই এমন কষ্ট করলাম। টিকিট পেয়ে ভালো লাগছে।'
টিকেট পেলেও কিছু হতাশা কাজ করছে অনেক সমর্থকদের মধ্যে। মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ৫ শিক্ষার্থী দল নির্বাচন নিয়ে হতাশার কথাই জানালেন, 'টি-টোয়েন্টিতে আমাদের অনেক পরিবর্তন দরকার। নতুন করে যেটা হয়েছে খুব ভালো। কিন্তু মুশফিককে রাখা দরকার ছিলো। উনি অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে আমাদের এমন খেলোয়াড় দরকার ছিলো।'
তবে এ সুযোগে কালোবাজারিও ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন অনেকে। বেশ কিছু মহিলাকে একাধিকবার লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনতে দেখা গেছে। কবে কখন ম্যাচ কিছুই জানেন না তারা। লাইনে দাঁড়ানোর কারণ জানতে চাইলে জমিলা নামের সে নারী বলেছেন, 'ম্যাচের টিকেট বেঁচে এহানে, তাই খাঁড়াইছি। হুদাই খাঁড়ামু কেন। আমাগো কী ম্যাচ দেখতে ইচ্ছা করে না।'
এমন কাণ্ডে অনেকেই শঙ্কায় রয়েছেন শেষ পর্যন্ত টিকেট মিলবে কি-না তাদের। সকাল ৮টা থেকে দাঁড়িয়েও দুপুর একটা বাজে লাইনে মাঝে পৌঁছানো রাকিব আহমেদ নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেছেন, 'আমি সকাল আটটা থেকে দাঁড়িয়েছে। কিছুটা এগুলেও এখনো অনেক দূরে আছি। জানি না টিকিট পাবো কিনা। সামনে থেকে হুটহাট লোকজন ঢুকে যাচ্ছে। দেখা যাক কী হয়।'
আগামীকাল শুক্রবার দুপুর ২টায় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচ শনিবার। একদিন বিরতির পর সোমবার তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলবে দল দুটি।
Comments