অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা জাতীয় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত

মিরপুরে বিআরটিসি বাসে আগুন
প্রতীকী ছবি

এটি গভীর উদ্বেগের বিষয় যে বাংলাদেশে অগ্নিদুর্ঘটনা গত ২ দশকে ৪ গুণ বেড়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে ২ লাখ ৮৫ হাজার অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে, যা থেকে অনুমিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই তথ্য থেকে আরও জানা গেছে, ২০০৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ২ হাজার ৩০৮ জন।

২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৭৪টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ হাজার ৭৩টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। গত ৩ বছরে এতো বেশি সংখ্যক অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে আমাদের এই তথ্যই দেয় যে এ ধরণের দুর্ঘটনার সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা এর পেছনে কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত নগরায়ন, দালান নির্মাণ নীতিমালার লঙ্ঘন, আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ার সংস্কৃতি, অবহেলাপূর্ণ মনোভাব, গ্যাস সিলিন্ডার ও বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে উপযুক্ত তত্ত্বাবধানের অভাবের কথা বলছেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের  ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৭১ হাজার ৬৮৪ অর্থাৎ মোট অগ্নিদুর্ঘটনার ৭১ শতাংশের উৎস হচ্ছে বৈদ্যুতিক গোলযোগ, বিভিন্ন ধরনের চুলা এবং জ্বলন্ত সিগারেট। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞের মতে, অগ্নিদুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের ঘটনাগুলো। বেশ কয়েক বছর আগে পরিচালিত একটি নিরীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য শহরের বেশিরভাগ বহুতল ভবনের কোনো অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, দালান নির্মাণ নীতিমালা লঙ্ঘন করে তৈরি করা ভবনগুলোর ক্ষেত্রেই মূলত এ সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। গত কয়েক বছরে, ভবন মালিকদের অসংখ্য অনিয়মের কারণে বেশ কিছু অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে এবং শতশত মানুষ প্রাণ হারান। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও কর্তৃপক্ষকে ঢাকা এবং অন্যান্য বড় শহরের ভবনগুলোতে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা কমানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের দুর্যোগের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। ঢাকায় ভবন নির্মাণের নীতিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সংস্থা রাজউককে যথেষ্ট পরিমাণ ও মানসম্পন্ন জনবল নিয়ে তৈরি হতে হবে। এছাড়াও, কোনো ভবন অগ্নিনিরাপত্তা নীতিমালা মেনে চলতে ব্যর্থ হলে রাজউককে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে সব ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রচার চালাতে হবে, যাতে মানুষ অগ্নিদুর্ঘটনার জরুরি পরিস্থিতিতে কী করতে হবে সে ব্যাপারে জানতে পারে। এছাড়াও, জাতীয় শিক্ষাক্রমে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করাও একটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

A good example of a bad plan

As the much-hyped tunnel under the Karnaphuli river has seen only a third of the projected traffic since it was opened a year ago, the money it earned is even less than what its maintenance required.

32m ago