জনগণের ভালো কেন বুঝতে চান না আমাদের নীতিনির্ধারকরা?

তেলের দাম বৃদ্ধির পর ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। ছবিটি গত ৫ নভেম্বর রাজধানীর গাবতলী সেতু থেকে তোলা। ছবি: স্টার

কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়া রাস্তা আটকে রেখে জনসাধারণকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যামে বসিয়ে রাখা থেকে শুরু করে বিদেশি অতিথিদের আগমনে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কগুলোতে যাতায়াত নিষিদ্ধ করা, নোটিশ ছাড়াই গ্যাস ও বিদ্যুতের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করা, মেগা প্রকল্পের জন্য অযৌক্তিকভাবে যান চলাচলের রাস্তা পাল্টে দেওয়া এবং বারবার সরকারিভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া—এ সবই জনগণের কথা বিন্দুমাত্র না ভেবে করা হয়। অধিকারের কথা তো বলাই বাহুল্য। জনসাধারণের অধিকার এবং তাদের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার বিষয়টি আমাদের আমলা ও নীতিনির্ধারকদের নজরে থাকলে সাধারণ জনগণের হতাশার জায়গাগুলোর আরও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হতো।

এটা সত্য যে সরকারকে অনেক সময় এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয় যেগুলো জনসাধারণের পছন্দ হবে না। যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি। এটা সরকার ও জনগণ উভয়কেই সবচেয়ে বেশি সংকটে ফেলে। এ ধরণের সিদ্ধান্তে সরকারের জনপ্রিয়তা রাতারাতি কমে যায় এবং কমবেশি সবাই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। অপরদিকে, সাধারণ জনগণের ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ পড়ে। এতে তাদের জীবন জীবিকা আরও কঠিন হয়ে যায়। 

গত ৩ নভেম্বর সরকারের জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এক্ষেত্রে একটি ভালো উদাহরণ। সেদিন সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ায়। এতে প্রতি লিটারের দাম ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা হয়ে যায়। এই দুটি পণ্য সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং অর্থনীতিকে সরাসরি প্রভাবিত করে। বর্তমানে দেশে ৪০ লাখ টন ডিজেলের ব্যবহার আছে, যার ৭০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে। আর ২০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় কৃষি খাতে। কেরোসিনের মোট চাহিদা ১ লাখ টন, যা মূলত রান্নার কাজে ও আলো জ্বালাতে ব্যবহার হয়।

দাম বাড়ানোর পেছনে ২টি কারণের কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, ভারত ও বাংলাদেশের দামের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকলে তেলের পাচার বেড়ে যাবে। কিন্তু কীভাবে পাচার রোধ হবে? ১ নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১০১ দশমিক ৫৬ রূপি বা ১২৪ টাকা ৪১ পয়সা। আর আমাদের দেশে ডিজেলের দাম বেড়ে লিটার প্রতি ৮০ টাকা। প্রতি লিটারে ৪৪ দশমিক ৪১ টাকার মূল্য পার্থক্য (৫০ শতাংশেরও বেশি) থাকছেই, যা পাচারে উৎসাহিত করতে যথেষ্ট। সুতরাং এক্ষেত্রে এই যুক্তিটি একেবারেই হালে পানি পাচ্ছে না।

দ্বিতীয় কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তেলের গড় মূল্য ৭১ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেলে ৭৩ ডলার হয়েছিল। পরে অক্টোবরে এটি ৮৩ দশমিক ৭ ডলার হয়। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই দাম বাড়াতে হবে বলে সরকার যুক্তি দিয়েছিল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা করে লোকসান করছিল। এই লোকসান থামানো প্রয়োজন ছিল এবং সে কারণে ন্যুনতম ২৩ শতাংশ দাম বাড়ানো হলো। সবাই এই বর্ধিত মূল্যের সঙ্গে মানিয়ে নেবে, এটাই সরকারের প্রত্যাশা।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের যুক্তি, আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের প্রভাব স্থানীয় বাজারে পড়বেই। যেহেতু ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বেড়ে গেছে, ভোক্তাদেরও বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে। আমরা এই যুক্তি মেনে নিতে পারতাম যদি প্রকৃতই তেলের আন্তর্জাতিক মূল্যের ওঠানামার সঙ্গে দেশের বাজারের মূল্য সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হতো। এর অর্থ হচ্ছে, তেলের মূল্য শুধু বাড়বেই না, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমলে দেশের বাজারেও কমাতে হবে। কিন্তু তা প্রায় কখনোই করা হয় না। আর করা হলেও খুবই সামান্য পরিমাণে করা হয়।

বিশ্বে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয় এবং তেলের দাম কমে ব্যারেল প্রতি ২৭ ডলারে নেমে আসে। ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিপিসি ৪৩ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা মুনাফা করে। এই 'মুনাফা' কোথা থেকে এসেছে? এসেছে জনগণের কাছ থেকে, যারা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম থাকা সত্ত্বেও বেশি দামে ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে বাধ্য হয়েছেন। কোন অধিকারে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সাধারণ জনগণের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নিয়েছে? আমাদের দৃষ্টিতে এটা মিথ্যা বলে চাঁদাবাজি করার মতোই একটি বিষয়, যা স্বয়ং সরকার করেছে।

আমরা যদি বিপিসির দাবি মেনে নেই যে, তারা আসলেই প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা করে গচ্চা দিচ্ছে, তাহলে সংস্থাটির বাৎসরিক লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এই টাকা খুব বেশি নয়। এর চেয়ে বেশি টাকা পিকে হালদার একাই আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন। এই লোকসান খুব সহজেই বিপিসির গত ৬ বছরের মুনাফা থেকে সমন্বয় করা যেত। এমনকি, এখনও মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার সময়ে বিপিসির লোকসান পূরণে যে টাকা দরকার, সরকার তেলের মূল্যের ওপর ধার্য করা ভ্যাট ও শুল্ক থেকে তার কাছাকাছি পরিমাণ টাকা পাবে। সেটা বিপিসিকে দেওয়া যেতে পারত। এর মাধ্যমে জ্বালানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে এড়ানো যেত। কিন্তু জ্বালানি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভোক্তাদের কাছ থেকে এই টাকা 'আদায়' করে নেবে। অথচ ভোক্তাদের মধ্যে একেবারে হতদরিদ্র মানুষ না থাকলেও, নিম্ন মধ্যবিত্তরা আছেন। এই সিদ্ধান্তে সরকার আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে।

পরবর্তী প্রশ্ন, এই মুহূর্তেই কেন? যখন আমরা করোনাভাইরাস থেকে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যখন আমাদের রপ্তানিকারকরা আবারও নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করেছেন, যখন আমাদের স্থানীয় উৎপাদকরা তাদের ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনছেন, যখন দিনমজুররা কাজ খুঁজে পেতে শুরু করেছেন, উদ্যোক্তারা অন্ধকার শেষে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন, ঠিক যখন মহামারির ভয়াবহতম পরিস্থিতির মাঝেও আমাদের খাদ্যের জোগান অব্যাহত রাখা কৃষকরা মন্দা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে পাচ্ছেন, তখন হঠাৎ করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছে না। এই মূল্য বৃদ্ধি আমাদের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার নীতির পরিবর্তে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিঘ্নিত করার ব্যবস্থা, যা আমাদের জন্য একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

এই সিদ্ধান্তে কেবল বিপিসি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ছাড়া কেউ লাভবান হতে যাচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে জনগণের এবং একই সঙ্গে সাহস করে বলে ফেলা যায় যে সরকারের স্বার্থকে অবজ্ঞা করে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এই সিদ্ধান্ত।

মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি পরিবহন খাতের একেবারে গোঁড়ায় আঘাত করেছে। এতে বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তারা পরিস্থিতির সুযোগও নিয়েছেন এবং প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। যদিও সরকার বলেছে ২৮ শতাংশ, কিন্তু বাজারের বাস্তবতা হলো ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি। পরিবহন মালিকদের জন্য এটি সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখা দেয় এবং তারা জনগণকে জিম্মি করে লাগাতার ধর্মঘটের হুমকি দিয়ে সরকারকে বাধ্য করে তাদের প্রস্তাবে রাজি হতে। বাস ও ট্রাক মালিকরা দাবি করেছেন, ২০১৫ সালে সর্বশেষ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে এবং লঞ্চ মালিকদের ক্ষেত্রে বছরটি ২০১৩। এ কারণে, এতদিনের জমে থাকা সব দাবিগুলো এখন একবারে পূরণ করতে হয়েছে সরকারকে।

সবশেষে আসে সরকার কোন প্রক্রিয়ায় জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করেছে।

এ ধরণের জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে একটি শুনানি আয়োজনের প্রচলন আছে, যেখানে অংশীজনদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। যদিও তাদের বক্তব্যকে কখনো বিবেচনায় নেওয়া হয় কি না, তার তেমন কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে একটি প্রথা হিসেবে এর আয়োজন করা হয় এবং আর কেউ না থাকলেও, সেখানে অন্তত গণমাধ্যম কর্মীরা থাকেন। যেন তাদের প্রতিবেদন থেকে জনগণ জানতে পারে কোন প্রসঙ্গে এবং কীভাবে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।

তবে এবার এই প্রথাও মেনে চলা হয়নি এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটানো হয়েছে। সাধারণত বিইআরসি এ ধরণের শুনানির আয়োজন করে থাকে। এমন কেন করা হলো? এ পর্যন্ত আমরা এই প্রশ্নের কোনো উত্তর পাইনি। ফলে, মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যের রূপকাররা ছাড়া বাকি সবাইকে পুরোপুরি বিস্মিত করেছে। সবার আগে প্রতিক্রিয়া দেখান পরিবহন মালিকরা। তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন এবং দাবি করেন, নতুন ও বর্ধিত ভাড়া নির্ধারণ না করা পর্যন্ত তারা পরিবহন সেবা দেবেন না। ৩ দিনের ধর্মঘটে জনগণ ভোগান্তির শিকার হওয়ার পর সরকার বাস ও লঞ্চের ভাড়া যথাক্রমে ২৮ ও ৪৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে বিপিসির স্বার্থ এবং একই সঙ্গে বাস, ট্রাক ও লঞ্চ মালিকদের স্বার্থও রক্ষা হলো।

তাহলে কার স্বার্থ রক্ষিত হলো না? হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন। প্রতিদিন জীবনের তাগিদে যাদের ঘর থেকে রাস্তায় নামতে হয়, সেই সাধারণ জনগণের স্বার্থটাই রক্ষা হয়নি। তাদের কোনো ইউনিয়ন নেই, তাদের জন্য তদবির করার কেউ নেই বা তাদের কোনো উপকারী ও ধনী বন্ধুও নেই। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব ছিল জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাদের বেশিরভাগেরই নিজেদের টাকা বানানোর যন্ত্র আছে, যে যন্ত্রে তেল দিতেই তারা ব্যস্ত থাকেন। জনগণের কথা ভাবার সময় কোথায় তাদের? আমাদের সংসদ সদস্যদেরও হয়ত আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। মানুষ ভেবেছিল তাদের হাতে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা আছে। যে ক্ষমতা তারা ৫ বছর পর পর প্রয়োগ করে তাদের প্রত্যাশাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে পারবে। আক্ষরিক বা রূপক অর্থে, কোনো দিক দিয়েই আর এই ক্ষমতা কোনো কাজে আসছে না। তাই ভাগ্যে যা আছে তা সর্বান্তকরণে মেনে নেওয়া ছাড়া জনগণের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।

আসুন আমরা সাধারণ জ্ঞান দিয়ে কিছু যুক্তিতর্ক করি। জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও বিপিসির আমলারা খুব ভালো করেই জানতেন, জ্বালানির দাম বাড়ালে অর্থনীতির ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে এবং কীভাবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। তারা এটাও জানতেন যে, সব ধরণের পরিবহন মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করবেন এবং একটি ঝটিকা ধর্মঘটের মাধ্যমে সরকারকে এসব দাবি মেনে নিতে বাধ্য করবেন। এ সব কিছু জেনে, তাদের কী উচিৎ ছিল না সবার আগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনায় বসা? ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি খুব সহজেই ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করা যেত। সবাই মিলে একমত হয়ে, সব খুঁটিনাটি বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে এবং লিখিত আকারে সবার সই নিয়ে তা ঘোষণা করা যেত। কবে থেকে সরকার তেলের মূল্য বাড়াচ্ছে এবং কখন থেকে তা কার্যকর হবে এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব খাতে ভাড়া বাড়ানোর সুযোগের বিস্তারিত বর্ণনা সে ঘোষণায় উল্লেখ করা যেত। এ ধরণের একটি উদ্যোগ জনগণকে অনেক ঝামেলা ও ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পারত।

কিন্তু, এর পরিবর্তে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্দশার মুখে পড়েন। ৩ নভেম্বর তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গণমাধ্যমের কাছে সংবাদ আসে ৪ নভেম্বর। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে রোববারের আগে কোনো উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এর মধ্যে ৩ দিন ধরে গরিব ও সাধারণ মানুষ হয়রানি ও শারীরিক কষ্টের শিকার হন এবং তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। অবশেষে বৈঠক যখন অনুষ্ঠিত হলো, সেটি হলো কেবল পরিবহন মালিকদের দাবিগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেওয়ার জন্য। কারণ প্রকৃতপক্ষে তেলের দাম বাড়ানো ছিল সরকারের পক্ষ থেকে বাস ও লঞ্চ মালিকদের ভাড়া বাড়ানোর পথকে সুগম করার জন্য একটি অজুহাত মাত্র।

আমাদের ধারণা হচ্ছে, আমলাতন্ত্র ও ক্ষমতাসীন দল সংশ্লিষ্ট নয় এমন সবার প্রতি ন্যূনতম সংবেদনশীলতা না থাকলেই শুধু এ ধরণের ঘটনাগুলো ঘটতে পারে।

মাহফুজ আনাম: সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

A good example of a bad plan

As the much-hyped tunnel under the Karnaphuli river has seen only a third of the projected traffic since it was opened a year ago, the money it earned is even less than what its maintenance required.

31m ago