রাজধানীর ১১ স্থানে ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, গ্রেপ্তার ৫
রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কল্যানপর, রূপনগর, মিরপুর, মাতুয়াইল, শেওড়াপাড়া, শেরেবাংলা নগর, পল্লবী এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় চাকরি প্রার্থীদের। সেখানে পরীক্ষার ৫-৬ ঘন্টা আগে ফাঁস করা প্রশ্ন দিয়ে উত্তরপত্র মুখস্থ করানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত নিয়োগ পরীক্ষার এই প্রশ্ন জালিয়াতি চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত ৬ নভেম্বর থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত ডিবি পুলিশের অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবির) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো. মোক্তারুজ্জামান রয়েল (২৬), মো. শামসুল হক শ্যামল (৩৪), জানে আলম মিলন (৩০), মোস্তাফিজুর রহমান মিলন (৩৮) ও রাইসুল ইসলাম স্বপন (৩৬)।
রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ৫টি ব্যাংকের 'অফিসার ক্যাশ' পদে নিয়োগের জন্য গত ৬ নভেম্বর বিকেলে পরীক্ষার আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আহছানউল্লাহ ইউনির্ভাসিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজির সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করে।
পুলিশ জানায়, ওই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে, এমন তথ্য পেয়ে পুলিশ পরীক্ষার দিন সকাল ৭টার দিকে প্রশ্ন ও উত্তর পেতে চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই চক্রের মূল হোতা রাইসুল ইসলাম স্বপনকে অগ্রিম টাকা দেওয়া হলে, তিনি পরীক্ষার্থীকে একটি বুথে নিয়ে যান। পরে ওই পরীক্ষার উত্তরপত্রসহ তাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্বপনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত মোক্তারুজ্জামান রয়েল আহছানউল্লাহ ইউনির্ভাসিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে আইসিটিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুজন কর্মীর সহযোগিতায় ওই পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সংগ্রহ করেছিলেন বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
মোক্তারুজ্জামান ও শ্যামল জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা ৩ বার বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর ফাঁস করেছে। চক্রটি পরীক্ষার ৫-৬ ঘণ্টা আগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রায় ২ হাজার পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন ও উত্তর সরবরাহ করেছে।
প্রত্যেক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ৫ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, রাজধানীর ৮টি এলাকায় তাদের নিজস্ব বুথ আছে। সেখানে পরীক্ষার ৫-৬ ঘন্টা চাকরি প্রার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের ফাঁস করা প্রশ্ন দিয়ে উত্তরপত্র মুখস্থ করানো হয়। চক্রের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক বুথে ২০ থেকে ৩০ জন পরীক্ষার্থীকে উত্তর মুখস্থ করিয়ে কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
জানতে চাইলে আহছানউল্লাহ ইউনির্ভাসিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজির উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ ফজলি ইলাহী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা এ ঘটনায় মোক্তারুজ্জামানসহ ৩ কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন।
তিনি বলেন, 'ওই ৩ কর্মী প্রশ্ন তৈরি কমিটিতে ছিলেন না। তারা কী করেছে তা আমরা পুলিশের তদন্তের পর জানতে পারব। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।'
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
Comments