জনগণই সবসময় ভুগবে কেন?
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক লাফে ২৩ শতাংশ বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবেই দেখা গেছে। পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে গত শুক্রবার থেকে সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ আছে। ফলে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বিকল্প পরিবহন বেছে নিতে হয়েছে। কেউ কেউ গন্তব্যে পৌঁছাতে এবং অতিরিক্ত ভাড়া এড়াতে অনেক দূর পর্যন্ত পায়ে হেঁটেছেন।
পূর্বঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় অনেকে পরিবহন ধর্মঘটের কথা জানতেন না। অনেকেই চাকরির ইন্টারভিউ, পরীক্ষা (যেমন: ঢাবি-অধিভুক্ত ৭ কলেজের ভর্তি পরীক্ষা) এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নিতে পারেননি।
এদিকে, গত শুক্রবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে লঞ্চ ভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে গতকাল বিকেলে তারাও লঞ্চ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
এটা নিশ্চিত যে, এই মূল্য বৃদ্ধি আমদানিকৃত পণ্যের দামকেও প্রভাবিত করবে, রপ্তানির গতি কমিয়ে দেবে (অথবা কোম্পানিগুলোকে চালানের জন্য বিমান পরিবহনকে বেছে নিতে হবে ও রপ্তানি আরও ব্যয়বহুল করে তুলবে) এবং সামগ্রিকভাবে স্থানীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়াবে।
আমরা কল্পনাও করতে পারি না যে, কর্তৃপক্ষ এসব প্রভাবের পূর্বাভাস পায়নি, কেবল অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নয় বরং নিছক সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতেও এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
তবুও, সবসময় এমন আকস্মিক সিদ্ধান্ত সাধারণ জনগণের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সরকারের বিচ্ছিন্নতার ইঙ্গিত দেয়। তার ওপর, পরিবহন নেতারা শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ভাড়া বাড়ানো অথবা জ্বালানির দাম কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ রোববার নতুন জ্বালানির দাম অনুযায়ী বাস ভাড়া নির্ধারণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা বৈঠক করছে।
অতীতের বিভিন্ন ঘটনা, যেমন: সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ (যেটি ফিটনেসহীন যানবাহনের ওপর মোটা জরিমানা আরোপ করে) এর বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার উদাহরণ থেকে পরিবহন কর্তৃপক্ষ যে মালিকদের পক্ষে থাকবে (মালিকদের মধ্যে অনেকেই সমাজে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সঙ্গে যুক্ত) এবং ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে নতি স্বীকার করবে, এটি ভেবে নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
স্বল্পমেয়াদে এবং দীর্ঘমেয়াদে এই ধরনের আকস্মিক সরকারি সিদ্ধান্তের ভার সবসময় সাধারণ জনগণকেই বহন করতে হবে বলে মনে হয়। আমরা পরিবহন ধর্মঘটের সমাপ্তির সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় ব্যবসায়ী ও জনসাধারণ উভয়েরই দুর্ভোগের কথা বিবেচনার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাই।
যদিও আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জ্বালানীর মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হঠাৎ করে বাড়ানোর আগে আরও বেশি চিন্তা-ভাবনা করা উচিত ছিল। দেশকে জিম্মি করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের যখন-তখন ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার এই সংস্কৃতি, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ জনগণকেই সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে, এর অবসান ঘটাতে কর্তৃপক্ষের আরও তৎপর হতে হবে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এই ধরনের আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটি একটি শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করবে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি
Comments