বন উজাড় বন্ধে প্রতিশ্রুতিই যথেষ্ট নয়

কপ২৬ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড়ের সমাপ্তি ও প্রতিহত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। তবে, এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো সংশয় জানিয়েছে। অন্যদিকে, গ্রিনপিস এই দশককে 'বন উজাড়ের আরেকটি দশক' হিসেবে বর্ণনা করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সর্বশেষ আন্তঃসরকারীয় প্যানেলের (আইপিসিসি) প্রতিবেদনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছে, মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছেছে এবং ইতোমধ্যেই তার যে প্রভাব পড়েছে তা কয়েক শতাব্দির মধ্যে 'অপরিবর্তনীয়' এবং জাতিসংঘের মহাসচিব এটাকে মানব জাতির জন্য 'লাল সংকেত' বলে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে আরও জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন বললে ‍ভুল হবে না।
  
যদিও ব্রাজিল ও রাশিয়ার মতো দেশ, যেগুলো দ্রুত বন উজাড়ের জন্য চিহ্নিত হয়েছে। তাদের এমন চুক্তিতে স্বাক্ষর করা একটি সঠিক পদক্ষেপ। তবে, পরিবেশবাদীরা যুক্তি দিয়েছেন, এই দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে কি না সেটি দেখার মতো এবং অপেক্ষা করার মতো সময় পৃথিবীর নেই।

প্রকৃতপক্ষে, এর আগে ২০১৪ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের জলবায়ু সমাবেশেও একই রকম ঘোষণা জারি হয়েছিল। সে সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে বন উজাড়ের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় পুরোপুরি বন্ধ হবে।

তবে, করুণ বাস্তবতা হলো, এমন কিছুই ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২০ সালে ব্রাজিলে বন উজাড় বেড়েছে, যার ফলে দেশটির কার্বণ নির্গমন ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতিও কম ভয়াবহ নয়। চলতি বছরের মার্চে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বার্ষিক বন উজাড়ের হার বিশ্বব্যাপী গড়ে ২ দশমিক ৬ শতাংশের প্রায় দ্বিগুণ।

গত ১৭ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৬৬ বর্গকিলোমিটার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়েছে এবং সারা দেশে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৩ একর বনভূমি দখল করা হয়েছে। টিআইবির মতে, বনবিভাগের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বনকেন্দ্রিক দুর্নীতিতে কর্মকর্তাদের একাংশের যোগসাজশ ও অযোগ্যতা বাংলাদেশে বন উজাড় বন্ধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অন্যতম প্রধান বাধা।

আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বন উজাড় বন্ধ করার জন্য শক্তিশালী এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে একমত। বনভূমিতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, সংরক্ষিত বনের কাছাকাছি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সরকারি ও বেসরকারি শিল্প-প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য বনের চারপাশে জমি বরাদ্দ এবং দুর্নীতি ও বনভূমির দখলের মতো সমস্যা আমাদের জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা দরকার।

কিন্তু আমরা একা এটি করতে পারব না। মানবসৃষ্ট কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের প্রায় এক চতুর্থাংশ ভূমি সংক্রান্ত কার্যকলাপ যেমন- গাছ কাটা, বন উজাড় এবং কৃষিকাজের জন্য দায়ী করা যেতে পারে এবং এর বেশিরভাগই ঘটে উন্নত বিশ্বে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এর মারাত্মক প্রভাব অনুভব করে।

আমরা বিশ্ব নেতাদের বন উজাড়ের সমাপ্তি ঘটাতে একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই। সেই সঙ্গে যে দেশগুলো ব্যাপক হারে বন উজাড় এবং মানুষের কারণে ঘটা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়া অনুভব করেছে তাদের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করে তহবিল প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। 

 

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

A good example of a bad plan

A year on, Karnaphuli tunnel losing over Tk 27 lakh a day

4h ago