সংবাদপত্রের স্বাধীনতা গুরুতর হুমকির মুখে

গত শনিবারে সম্পাদক পরিষদের আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় পত্রিকার সম্পাদক এবং শিক্ষাবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা গুরুতর ঝুঁকিতে আছে। সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সকল নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলেও, এসব অধিকারের ওপর বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ আসছে বলে বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমরাও তাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত না হয়ে পারছি না।

একদিকে, সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন সংস্থা তাদের অদক্ষতা বা সক্ষমতার অভাবকে প্রকাশ করছে এরকম যেকোনো প্রকাশনা অথবা তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরণের সমালোচনার বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক অবস্থান নিচ্ছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিক ও স্বাধীন সাংবাদিকতাকে দমন করার জন্য সরকারের পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করা হচ্ছে। অপরদিকে, বিভিন্ন বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব মালিকানাধীন সংবাদসংস্থার মাধ্যমে গণমাধ্যমকে করপোরেট নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যার ফলে এই খাতের অভ্যন্তরেই স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।

যেকোনো সংবাদপত্রের প্রাথমিক পুঁজি হচ্ছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা। করপোরেট মালিকরা বিভিন্ন সংবাদপত্রকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা চালানোয় সেই বিশ্বাসযোগ্যতা দ্রুত কমে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এটি সাংবাদিকতার জন্য ভালো লক্ষণ নয়। অপরদিকে, সরকার বিভিন্নভাবে পত্রিকার স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারকে সুরক্ষা দিতে পারে এরকম সকল সংস্থা ও প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এই উদ্দেশ্যে তারা রাষ্ট্রদ্রোহ আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এবং সরকারি গোপনীয়তা আইন-১৯২৩ এর মতো কঠোর আইন ব্যবহার করছে। ফলে, যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশের অত্যাবশ্যক, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এখন প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছে। এই প্রবণতা সার্বিকভাবে গণতন্ত্রের জন্য খুবই বিপজ্জনক, কারণ যেকোনো কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য নাগরিকদের সকল সত্য সম্পর্কে অবগত থাকা খুবই জরুরি।

সরকার বিষয়টি অনুধাবন করতে পারুক বা না পারুক, তারাও একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের অস্তিত্ব না থাকলে তারা কীভাবে জনগণের মনোভাব বুঝতে পারবে? তাদের কাজের মান সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে তারা কোন তথ্যসূত্রের শরণাপন্ন হবে?

সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে অসংখ্য আইন ও কার্যধারা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। বিশেষ করে যে আইনগুলো বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, সেগুলো। প্রতিটি সমালোচনাকে আক্রমণাত্মক ও ষড়যন্ত্রমূলক মনে করার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষের উচিত এটা অনুধাবন করা, যে স্বাধীন সাংবাদিকতার মৌলিক কার্যক্রম হচ্ছে অস্বস্তিকর সত্যকে সবার সামনে উন্মোচন করে সমাজের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার বিরুদ্ধে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করা। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে কৌশল নির্ধারণ করা, যাতে স্বাধীন গণমাধ্যম বিকশিত হতে পারে। ইতোমধ্যে আমরাও আশা করব করপোরেট মালিকরা তাদের অবস্থানের সুবিধা কাজে লাগিয়ে গণমাধ্যমকে প্রোপাগান্ডা যন্ত্রে পরিণত করবে না, কারণ এতে শুধুমাত্র তাদের প্রতিষ্ঠানের সুনামই ক্ষুণ্ণ হবে না, সঙ্গে সামগ্রিকভাবে এই খাতের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

Comments

The Daily Star  | English

A good example of a bad plan

A year on, Karnaphuli tunnel losing over Tk 27 lakh a day

4h ago