উন্নয়নের জন্য গাছ কাটা নিয়মে পরিণত হতে পারে না

ছবিগুলো সম্প্রতি তোলা হয়েছে। ছবি: শেখ নাসির

সম্প্রতি সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকায় ২০০টি গাছ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারে এক প্রতিবেদনে ২টি ছবি প্রকাশিত হয়। একটি ছবিতে সদ্য কাটা গাছ এবং অন্যটিতে ভবিষ্যতে কাটার জন্য চিহ্ন দিয়ে রাখা গাছ দেখা গেছে।

কেটে ফেলা গাছের সংখ্যাটি উদ্বেগজনক মনে নাও হতে পারে। তবে যদি এটিকে নির্বিচারে গাছ কাটার চলমান প্রবণতার অংশ হিসেবে দেখেন, তবে বাস্তব চিত্র ফুটে উঠবে। এসব ঘটনা প্রায়ই বন বিভাগের কোনো ছাড়পত্র ছাড়া ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ীদের কোনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, উন্নয়ন কাজের নামে স্থানীয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।  

প্রকৃতপক্ষে, সিলেট সিটি করপোরেশন (এসসিসি) শহরের সড়ক প্রসারণ এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করতে আরও গাছ কাটার পরিকল্পনা করেছে এবং সে উদ্দেশ্যে বন বিভাগের ছাড়পত্রও চেয়েছে। গত মে মাসে দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এসসিসি স্বীকার করেছে যে তারা গত ৫ বছরে ৩৩২টি গাছ কেটেছে। যদিও তথ্য বলছে, অন্তত ৮৭৩টি গাছ কাটা হয়েছে।

গাছ কাটার ঘটনা নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে। এসব গাছ কাটার বড় উদ্দেশ্য নগর উন্নয়ন হলেও, সন্দেহজনক উদ্দেশ্যও রয়েছে। প্রতিবেদনে শাহজালাল উপশহরের একজন স্থানীয় কাউন্সিলরের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, যিনি নিলাম ছাড়াই সম্প্রতি কেটে ফেলা গাছ বিক্রি করেছেন। এটিও আইন বিরোধী।

গাছ আমাদের পরিবেশের একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বা অন্য কোথাও নতুন গাছ রোপণ ছাড়াই গাছ কেটে ফেললে আমাদের সবার ওপর গুরুতর প্রভাব পড়ে। কিন্তু রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা যখন নিজেরাই ছাড়পত্র ছাড়া গাছ কাটান বা স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে গাছ কেটে লাভবান হন, তখন জনসাধারণের কাছে ভুল বার্তা যায়। অপরাধীদের দায়মুক্তির মাত্রাও দেখা যায় এর মাধ্যমে। সারাদেশে বিভিন্ন নির্মাণ কাজে গাছ কাটার একই রকম ঘটনা দেখেছি আমরা।

এটি প্রতিষ্ঠিত কোনো চর্চা হতে পারে না। কিছুদিন আগেই সরকারকে বন ও বনভূমিতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গাছ কাটা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বনের বাইরেও এ নিয়ম থাকা উচিত।

যদি কোনো কারণে গাছ কাটতে হয়, তবে তা অবশ্যই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এবং যথাযথ অনুমোদন ও ঘাটতি পূরণের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে করা উচিত। পাশাপাশি বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনসহ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই একটি বার্তা দিতে হবে। বলতে হবে, তাদেরকে পরিবেশ আইন তেমনভাবেই মেনে চলতে হবে, যেমনটি সাধারণ নাগরিকের কাছে প্রত্যাশা করা হয়। যারা তা করতে ব্যর্থ হবে, তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম 

Comments

The Daily Star  | English

A good example of a bad plan

A year on, Karnaphuli tunnel losing over Tk 27 lakh a day

6h ago