পুরোনো ইট দিয়ে ১৮ কোটি টাকার সড়ক সংস্কার!

ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

ছোট-বড় গর্ত আর খানাখন্দে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার তিনটি আঞ্চলিক সড়ক সংস্কার কাজ করা হচ্ছে ছয় বছর পু্রোনো ইটের খোয়া দিয়ে।

১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই তিনটি সড়ক সংস্কার করতে দরপত্রের পুরোনোর পাশাপাশি চার ইঞ্চি নতুন ইটের খোয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও ঠিকাদারেরা তা মানেননি বলে অভিযোগ করেছেন এলকাবাসী। তাছাড়াও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা সদরের মির্জাপুর থেকে হরষপুর বাজার, হরষপুর বাজার থেকে গোয়ালনগর এবং গোয়ালনগর থেকে সিঙ্গারবিল বাজার পর্যন্ত প্রায় ২৪ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক সংস্কার করার কাজে এই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পুরো ২৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেছে এলজিইডি।

বিজয়নগর উপজেলা এলজিইডির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ১৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার মির্জাপুর ভায়া হরষপুর-আউলিয়াবাজার-সিঙ্গারবিল আঞ্চলিক সড়ক উন্নয়ন কাজ পেয়েছে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মির্জাপুর-হরষপুর সড়ক সংস্কারে পিন্টু কনস্ট্রাকশন, হরষপুর-গোয়ালনগর সড়ক সংস্কারে ইব্রাহিম-মাহাবুব কনস্ট্রাকশন, এবং গোয়ালনগর থেকে সিঙ্গারবিল সড়ক সংস্কার কাজ পায় মোস্তফা কামাল এন্টারপ্রাইজ।

সূত্র জানায়, সড়কটি নির্মাণের পর ২০১১ সালে একবার এবং ২০১৫ সালে সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছিল।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত আগস্ট মাস থেকে কাজ শুরুর পর সড়কগুলোতে খোয়া বিছানো শেষ হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, আগের রাস্তায় থাকা পুরোনো ইটের খোয়া ব্যবহারের পর উপর দিয়ে চার ইঞ্চি নতুন ইটের খোয়া বিছানোর কথা থাকলও ঠিকাদারেরা তা করেননি। নিম্নমানের কাজ করায় স্থানীয় লোকজন আপত্তি করলেও ঠিকাদার কিংবা এলজিইডির কর্মকর্তারা এসব আমলে নেননি।

মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, পুরাতন ইটের খোয়া বিছানোর পর রোলার দিয়ে চাপা দেওয়া হয়েছে। এদিকে খাটিঙ্গা বাজার এলাকায় পাথরের ঢালাই ও সেখান থেকে আউলিয়া বাজার পর্যন্ত সড়কের পিচ ঢালাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হক ও আলী হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী রাস্তাটি নতুন করে সংস্কার করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এতে এলাকাবাসী খুশি হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তাটি পাকা করার কাজে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। পিচ ঢালাই কাজও করা হয়েছে যাচ্ছেতাই।

এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশা চালক নিত্য দেবনাথ বলেন, 'রাস্তাটির কাজ শুরুর পর ভেবেছিলাম আমাদের দুর্ভোগ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যেভাবে কাজ করা হয়েছে তাতে বেশিদিন টিকবে না। ফলে কিছুদিন পরই দুর্ভোগ সঙ্গী হবে আমাদের।'

নিম্নমানের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইব্রাহিম-মাহাবুব কনস্ট্রাকশনের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা রেজাউল বলেন, 'আমরা কাজে কোন ত্রুটি করিনি। স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান আমাদের কাজ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।'

বিজয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, 'অনেকেই আমাদের কাছে এসব ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। পুরাতন ইট ব্যবহারের কারণে এলাকার মানুষ ভুল বুঝেছে। অনেক অভিযোগকারীকেই আমরা বুঝিয়ে বলেছি।'

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

7h ago