রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ প্রশমনে প্রয়োজন সরকারের সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা

১০ লাখ রোহিঙ্গার বিপরীতে ক্যাম্পের নিরাপত্তায় রয়েছে মাত্র ৩ ব্যাটালিয়ন আর্মড পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

গত শুক্রবার ভোরে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ময়নারঘোনা ক্যাম্প-১৮ মাদ্রাসায় ৬ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা আরও উদ্বিগ্ন। গত মাসে রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তিনি ছিলেন রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মুখপাত্র। এরপরই ক্যাম্পে নিরাপত্তার অভাব ও সেখানে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর হুমকির বিষয়গুলো প্রকাশ্যে এলো।

যদিও স্থানীয়দের বিশ্বাস যে সাম্প্রতিক এসব হামলার পেছনে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মির (আরসা) ভূমিকা আছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চূড়ান্ত তদন্ত শেষ না হলে, এটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এসব হামলার মধ্যে দিয়ে ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতাই প্রকাশ পেল।

দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, অন্তত ৫০ জন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাদ্রাসায় প্রবেশ করে। পরবর্তীতে, সেখানে ৬ জন নিহত ও ৮ জন আহত হন। হামলাকারীরা পুলিশ আসার আগে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলে যাওয়ার আগে গুলিও চালায়। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে এসব ক্যাম্পে। আর, ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মাত্র ৩টি সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়ন আছে। সুতরাং, সেখানে এ ধরনের বিপর্যয় হলে, অবাক হওয়ার কিছু নেই।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে, তবে এ ধরনের হামলা চলতে থাকবে। 'প্রয়োজনে গুলি চালান'— আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য এ সমস্যার সমাধান কিংবা সেখানকার উত্তেজনা কমাবে না। নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ক্যাম্পে যারা এমন অশান্তি সৃষ্টি করতে চায় তাদের চিহ্নিত করা খুব জরুরি। কেবল ক্যাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করাই না, আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, মুহিব উল্লাহ নিহত হওয়ার পর যারা নিরাপত্তা চেয়েছিলেন তাদেরসহ অন্যান্য রোহিঙ্গা নেতাদের নিরাপত্তা দিতে এবং তাদের এ কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীদের মধ্যকার শত্রুভাবাপন্নতা কমানোর পাশাপাশি অবশ্যই রোহিঙ্গাদের পাশে থাকতে হবে, যেন ক্যাম্পে তাদের নিরাপদ ও গোষ্ঠীবদ্ধ অবস্থান ফিরে পেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

A good example of a bad plan

A year on, Karnaphuli tunnel losing over Tk 27 lakh a day

6h ago