সামাজিকমাধ্যম নীতিমালার বিষয়ে কঠোর দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন

সম্প্রতিকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কারণে আবারও আলোচনায় এসেছে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকার বিষয়টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআনের কথিত অবমাননার অভিযোগ এনে বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা চালানো হয়। যদি এই ধরনের প্রচারণা দমন করা না যায় তাহলে এর বিধ্বংসী প্রভাব যে পড়বে না, সে বিষয়ে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার জন্য যে ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে সে একজন মুসলিম হলেও খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। দেশের অধিকাংশ মানুষ ডিজিটাল প্রযুক্তির বিষয়ে খুব সামান্যই সচেতন এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরির মাধ্যমে মানুষের জীবন-মৃত্যুর ক্ষমতা রাখে। এটি যখন অশুভ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তখন এটি অকল্পনীয় দুর্ভোগেরও কারণ হতে পারে।

দ্য ডেইলি স্টারের একটি অনুসন্ধানে ইউটিউবে ৩০০টিরও বেশি ভিডিও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। যেখানে কুমিল্লার ঘটনায় বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভিডিও ১৩ অক্টোবর হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তৈরি ও আপলোড করা হয়। যেসব চ্যানেলগুলো থেকে এসব ভিডিও আপলোড করা হয়েছে, তারা বিশেষভাবে ধর্মীয় বিষয়ে আগ্রহী দর্শক-শ্রোতাদের জন্য ভিডিও তৈরি করে। কীভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি এবং মূল্যবোধের অবমাননা করা হয়েছে সে বিষয়ে সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে এবং গুজব ছড়ানো হয়েছে। কিছু ভিডিওতে সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহতদের সংখ্যা বাড়িয়ে বলা হয়। যখন সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেগুলোর ধ্বংসাত্মক শক্তির কথা কল্পনা করুন। অনেকে এসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই না করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন এবং এর ফলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শেষপর্যন্ত এসব বিষয়বস্তুর নির্ভরযোগ্যতার বিষয়টি অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠে এবং যেটি থেকে যায়, তা হলো হৃদয়ে গভীর ক্ষত- যা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য উপযুক্ত রসদ।

আমরা দেখেছি, এই ধরনের ঘটনা বার বার ঘটেছে। সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় আমরা এই ধরনের ঘটনা দেখেছি। নাসিরনগরে এই ধরনের ঘটনা দেখেছি। এই কারণে মিথ্যা ও বিদ্বেষপূর্ণ ভিডিও ভাইরাল হয়ে গুজব ছড়ানোর আগেই সেগুলো চিহ্নিত ও বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। কুমিল্লার ঘটনার পর আমরা যে ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ বা ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট দেখলাম, সেটা এর সমাধান নয়। আরেকটু এগিয়ে, আমাদের জনগণের মধ্যে ডিজিটাল সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। যাতে তারা সঠিক ও ভুল তথ্যের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। আধুনিক যুগে ডিজিটাল সচেতনতা বেঁচে থাকার একটা অংশ। তবে এর মাধ্যমে কি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে?

সাইবার দুনিয়া যে কত বিশাল এবং ভিপিএনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ এখনো যে কত ব্লকড কন্টেন্টে প্রবেশ করতে পারে তা বিবেচনায় রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খারাপ প্রভাবগুলো মোকাবিলার জন্য কেবল শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় যথেষ্ট হবে, সেটা মনে করাও অবিবেচকের মতো কাজ হবে। সরকারকে গুজব ও ভুয়া খবরের পরিবর্তে একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প সরবরাহ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শুধু মুক্ত সংবাদমাধ্যমই সে কাজটি করতে পারে।

মুক্ত সংবাদমাধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রচারাভিযানের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিভেদ কমিয়ে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে এই সাম্প্রদায়িক ব্যবধান বিশেষভাবে কমানো সম্ভব। এর ফলে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টিকারীরা মানুষের আবেগ ও অনুভূতি কাজে লাগিয়ে সুবিধা আদায় করতে পারবে না।

Comments

The Daily Star  | English

President's fate: No hasty decisions, need to follow constitutional process, says Fakhrul

He made the remark while speaking to reporters after laying wreaths at the grave of BNP founder and former president Ziaur Rahman

1h ago